Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ায় অবৈধ কর্মীদের ফেরার প্রক্রিয়া শুরু

বাংলাদেশি কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক : ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া (সাধারণ ক্ষমা) গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। দেশটিতে প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। পাঁচ মাসব্যাপী এ সাধারণ ক্ষমার আওতায় অনেক বাংলাদেশী কর্মীকেই খালি হাতে দেশে ফিরে আসতে হবে। সাধারণ ক্ষমা প্রক্রিয়া শুরু হলেও অভিবাসন বিভাগের ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম সচিব জহিরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, সাধারণ ক্ষমার প্রথম দিনে ৪৬ জন অবৈধ কর্মী ট্রাভেল পাস নিতে আবেদন করেছে। এসব কর্মী ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দেবে। দশ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকাÐ রোধে ২০১৮ সাল থেকে দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে ব্যাপক ক‚টনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ আভাস দিয়েছেন, আগামী দু-এক মাসের মধ্যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হতে পারে।

’ব্যাক ফর গুড’ বা (বিফোরজি) এ কর্মসূচির অধীনে আত্মসমর্পণ করে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি পাওয়ার জন্য অবৈধ কর্মীদের নির্দিষ্ট কিছু নথি সরবরাহ করতে হবে। অবৈধ অভিবাসীদের দেশ ত্যাগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মালয়েশিয়া জুড়ে ৮০টি কাউন্টারে একযোগে কাজ করবে অভিবাসন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধদের স্ব স্ব দেশে ফেরার প্রক্রিয়া চালু থাকবে। এর পরও দেশটিতে যদি অবৈধ অভিবাসীরা থেকে যায়, ধরা পড়লে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ হ্রাসের পাশাপাশি দফতর পরিচালনার খরচ এবং অপরাধ প্রবণতার ঝুঁকি কমানো এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য বলেও জানা গেছে।

গত মাসের মাঝামাঝি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন এক বিবৃতিতে বিফোরজি কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ইমিগ্রেশন আইনের আওতায় অবৈধভাবে অবস্থানকারীরা কোনো রকম শাস্তি ছাড়াই নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে আবদনকারীরা অরিজিনাল পাসপোর্ট, যাদের পাসপোর্ট নেই, দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস, মালয় রিংগিত ৭০০ এবং যেকোনো বিমানের কনফার্ম টিকিট দেখাতে হবে। এ ছাড়া প্রতারণা রেহাই পেতে যেকোনো এজেন্ট বা দালালের সঙ্গে টাকা লেনদেন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে গতকাল আল-নাঈম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী বাবুল হোসাইন ইনকিলাবকে জানান, সাবা, সারওয়াক ও লাবুয়ান অঞ্চল ব্যতীত মালয়েশিয়ার সর্বত্রই অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতির কাউন্টার চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিফোরজি কর্মসূচির আওতায় অবৈধ কর্মীদের স্ব স্ব দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় বø্যাকলিস্ট করা না হলে অধিকাংশ অবৈধ কর্মীই স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেত। এখন বø্যাকলিস্ট হওয়ার আশঙ্কায় অনেক অবৈধ কর্মী বিফোরজি কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে অনীহা প্রকাশ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই মালয়েশিয়ার অভিবাসন ও সিটি করপোরেশন পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশিসহ ৫৬ জন কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। কুয়ালালামপুরের পার্শ্ববর্তী পাংছাপুরি, আমপাং জায়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৬ জন বাংলাদেশিসহ ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মালয়েশিয়ার বিফোরজি কর্মসূচির পরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি আবু দাউদ বলেছেন, অভিবাসন বুথে আবেদন করার আগে তাদের নিজ নিজ দূতাবাস থেকে সম্পূর্ণ শনাক্তকরণ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয়ার আগে তাদের ফ্লাইট টিকিটসহ আবেদনের সমস্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হবে। যারা ইতোমধ্যে আটক হয়েছে তারা বিফোরজি কর্মসূচির আওতায় দেশে ফেরার সুযোগ পাবে না।

হাইকমিশনের শ্রম সচিব জহিরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের বিফোরজি কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্তিদের জন্য হাইকমিশন ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালাচ্ছে। অবৈধ কর্মীদের যে তথ্য এবং ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা দ্রæত সরবরাহ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেসব অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী তারা এ কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ও দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে চালমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত এ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে অভিবাসন বিভাগকে সহযোগিতা করবে রয়েল মালয়েশিয়া পুলিশ। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পূরণ বা সংগ্রহের জন্য দূতাবাস ও অভিবাসন কার্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হবে না বলেও কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ