Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঝিনাইদহে মন্দিরের পুরোহিতকে জবাই করে হত্যা : আইএসের দায় স্বীকার

১৯ ঘণ্টায় গুলি ও জবাই করে তিন খুন

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাত : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সোনাইখালী গ্রামের মহিষের ভাগাড় নামক স্থানে মঙ্গলবার সকালে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দ (৭০) নামে এক পুরোহিতকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত আনন্দ গোপাল একই উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামের মৃত সত্য গোপাল গাঙ্গুলীর ছেলে। এই নিয়ে গত ১৯ ঘণ্টায় হরিণাকুন্ডর এক ক্লিনিক মালিকসহ তিনজনকে হত্যা করা হলো। সোমবার হরিণাকুন্ডুর দারিয়াপুর গ্রামে প্রকাশ্যে আলফাজ উদ্দীন (৫৫) ও হরিণাকুন্ডুর ক্লিনিক মালিক নজরুলকে আলমডাঙ্গার তিওরবিলা মাঠে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এদিকে হিন্দু পুরোহিত হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএস। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পর হুমকি পর্যবেক্ষণকারী সাইটে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সাথে নিঃসন্দেহে জঙ্গি সংগঠন জড়িত। নিহতর ছেলে দীনবন্ধু গাঙ্গুলী জানান, তার বাবা মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের উদ্দেশ্যে বের হন। পথের মধ্যে মহিষাডাঙ্গা বিলের মধ্যে পৌঁছালে রাস্তার উপর কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। তারা বাবার কোন শত্রু ছিল না বলে ছেলে দীনবন্ধু জানান। নিহত আনন্দ গোপালের ভাতিজা অরুন গাঙ্গুলী জানান, তার কাকা এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। এক মোটরসাইকেলে তিনজন এসে আকস্মিক ভাবে তার কাকা বাবুকে হত্যা করেছে বলে তিনি শুনেছেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বর আব্দুর রশিদ জানান, আনন্দ গোপাল তার প্রতিবেশী ছিলেন। প্রতিদিন তিনি বাইসাইকেলে চড়ে নলডাঙ্গা মন্দিরে পূজা করতে যেতেন। এ রকম একজন ভাল মানুষকে হত্যা করা অন্যায় বলে আব্দুর রশিদ মনে করেন। সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হেলমেট পড়া দুর্বৃত্তরা আনন্দ গোপাল নন্দকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তিনি জানান খবর পেয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দ মন্দিরে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজ বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার মহিষের ভাগাড় বিলের মধ্যে পৌঁছালে তিনজন হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেল আরোহী তার গতি রোধ করে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আঘাতের পর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দের হাত, মাথা, ঘাড়, গলাসহ বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এদিকে পুরোহিত হত্যার খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ও ঝিনাইদহ র‌্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে যান। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এ সময় সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সাথে নিঃসন্দেহে জঙ্গি সংগঠন জড়িত। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় সারা দেশেই এ ভাবে অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তারাই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। তিনি বলেন এর আগে খ্রিষ্টান চিকিৎসক সমির খাজা ও শিয়া ধর্মাবলম্বি হোমিও চিকিৎসক কালীগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাক হত্যার সাথে এ ঘটনার মিল রয়েছে। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, পুরোহিতকে কে বা করা হত্যা করেছে তাৎক্ষনিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এ ঘটনার পর গোটা জেলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি আশা করেন খুব দ্রুতই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ