Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত কুষ্টিয়ার খামারিরা

কুরবানির জন্য প্রস্তুত ৪ লাখ পশু

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ায় গরুর খামারীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ার আশায় গরুর খামারীরা শেষ সময়ে গরুর পরিচর্যা ও বিভিন্ন হাটে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাটগুলোতে গরু ওঠতে শুরু হয়েছে। তবে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু দেশে না আসলে কুষ্টিয়ার খামারে পালিত গরুর ভালো দাম পাওয়ার আশা করছে খামারীরা।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, মাংসের দাম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়ায় গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে খামারীদের। বাণিজ্যিকভাবে কয়েক হাজার গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলছে।
ঈদকে সামনে রেখে কুরবানিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে এ জেলায় সাড়ে ৪ লাখ পশু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।
এ জেলার বড় বড় গরুর সুনাম রয়েছে চারিদিকে। জেলার ৯৮৫ টি গ্রামই এখন যেন একেকটি গো-খামারে পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে গরুর খামার নেই।
গরু খামারীরা জানান, এবার গো-খাদ্যের দাম বেশি। যার কারণে গরু লালন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর পালন করতে এবার খরচ হয়েছে বেশি। সে তুলনায় গরুর দাম ভালো না পেলে খামারীদের মাথায় হাত ওঠবে।
অনেক খামারী জানান, গরু মোটাতাজাকরণ খামার করতে যে ধরনের টাকার প্রয়োজন সে ধরনের অর্থ অনেকেরই নেই। টাকার অভাবেই গরুকে খাওয়াতে পারছে না। ফলে ঈদ আসার আগেই অনেকেই গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে গো-খামার করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে কুষ্টিয়ার বেকার যুবক। এ অভিমত অনেক খামারীর।
বিগত কয়েক বছর গরু খামার করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে অনেকেই। বেকার যুবক ও দরিদ্ররা খামার করে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অপরদিকে খামারের গোবর থেকে বায়োগ্যাস করে সংসারে জালানীর সাশ্রয় করছে। ফলে জেলার বিভিন্ন গ্রামে বেকার যুবকরা এ বছরও গরুমোটাতাজাকরনে নজর দিয়েছে। গরুর ভালো দাম পেলে আগামীতেও তারা গরুমোটাতাজারণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে বলে অভিমত প্রকাশ করে।
গরু মোটাতাজাকরণ প্রসঙ্গে জেলার পশু সম্পদ কর্মকর্তারা জানান, খামারীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পশুকে পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায় না। ফলে আমাদের খামারীদের পশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠেনা।
গ্রামাঞ্চলের অনেক খামারী গরু দ্রæত মোটা করার জন্য ভারতীয় নিম্নমানের ওষুধ খাওয়ায়। এগুলো খাওয়ানো ঠিক না। এতে পশুর চামড়ার নিচে পানি জমে মোটা দেখালেও কার্যত মাংস বৃদ্ধি হয় না। এতে পশুর প্রচন্ড সমস্যা হয়। যে কোন মুহুর্তে ওইসব পশুর দুর্ঘটনান সম্ভাবনা থাকে।
এসব এড়াতে কুষ্টিয়ার খামারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হয় বলে জানালেন জেলার প্রাণী ও পশু সম্পদ কর্মকর্তা।
কুরবানির পূর্ব মুহূর্তে পশুকে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত খামারীরা। চোখে পড়ারমতো গরুগুলো জেলার মাংসের চাহিদাপূরণ করে বাইরে বিক্রির জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে নেয়া হবে। প্রতি বছর ভারত থেকে গরু আসায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় খামারীদের। ভারত থেকে গরু না আসলে এ অঞ্চলের গরুর দাম ভালো পাওয়ার আশা খামারীদের। গত বছর ভারতীয় গরু আমদানীর কারণে গরুর বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে এ জেলার হাজার হাজার গরু ফেরত আসে। এ কারণে ভারতীয় গরু যাতে বাজারগুলোতে আসতে না পারে সে বিষয়ে সরকারের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেন গরু খামারী ও ব্যবসায়ীরা।
ঈদের এখনো প্রায় ২ সপ্তাহ বাকি। কুষ্টিয়ার গৃহে পালিত, খামারে লালিত চোখ জুড়ানো পশু জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির জন্য কুরবানির পশু বাজারগুলোতে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সকলে। অনেক খামারীরা জেলার বাইরে ঢাকা, চিটাগাং গরু বিক্রি করবেন এ পরিকল্পনা নিয়ে পরিবহন ঠিকও করে ফেলেছেন। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন হাটগুলোও জমতে শুরু করেছে। অনেকেই গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গরু দেখছেন। কিনছেন অনেকেই। তবে দাম বলছে কম।
ভালো দাম পাওয়ার আশা নিয়ে খামারীরা দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। দেশীয় পশুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ভারতীয় গরু আমদানী বন্ধ করবেন এ দাবি জেলার খামারীদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ