বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘হজে আকবর’ এর ব্যাখ্যা : ‘হজে আকবর’ বলতে কোন দিবসকে বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রধাণত দুইটি মত পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশের মতে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ১০ হিজরী সালের বিদায় হজে ৯ জিল হজ ‘আরাফা দিবস’ কে বোঝানো হয়েছে। সে দিনটি ছিল জুমা’বার। অপর মতটি হচ্ছে ১০ জিলহজ কোরবানি দিবস। এ সম্পর্কে বিভিন্ন তফসির গ্রন্থে বিশদ বিবরণ রয়েছে। এ পর্যায়ে নিম্নে ‘তফসিরে খাজেন’ এর সংশ্লিষ্ট অংশের সারমর্ম তুলে ধরা হল :
“হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে আকরামা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, হজে আকবর আরাফা দিবস। এ মত হজরত ইবনে উমর (রা.) ও হজরত ইবনে জোবায়ের (রা.) এর এবং আতা, তাউস, মোজাহেদ এবং সাঈদ ইবনে মোসাইয়িবও একই মত পোষণ করেন।
হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ‘হজে আকবর’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, তিনি বলেন, “কোরবানি দিবস” (তিরমিজি)।” ইমাম তিরমিজি একে ‘মওকুফ হাদিস’ আখ্যায়িত করে বলেন, “এটি অধিক সঠিক।”
আবু দাউদে ইমরান বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজকালে জামারাতের মধ্যবর্তি স্থানে দাঁড়িয়ে কোরবানি দিবসে বলেন, “আজ কোন দিবস?” সবাই বললেন, “কোরবানিদিবস।” তিনি বললেন, “আজ ‘হজে আকবর’ দিবস।” আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা ও মুগীরা ইবনে শোবা এবং একই মত শা’বী, নাখয়ী, সাঈদ ইবনে জুবায়র এবং সুদ্দীও অনুরূপ ব্যক্ত করেছেন। মোজাহেদ হতে ইবনে জুরাইজ বর্ণিত, ‘হজে আকবর’ দিবস হচ্ছে মিনার দিনগুলো। সুফিয়ান সওরী বলেন, “মিনার সকল দিনই ‘হজে আকবর’ দিবস।”
আবদুল্লাহ ইবনে হারস ইবনে নওফেল বলেন, ‘হজে আকবর’ দিবস সেই দিন যে দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) হজ করেন। এ মত ইবনে সীরীনেরও। কেননা এ দিন মুসলমানদের হজ¦, ইহুদী, নাসারা (খৃষ্টান) এবং মোশরেকদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন এই সব বিষয় একত্রিত হয়েছিল, যা এর পূর্বাপর কখনো হয়নি। তাই এ দিন মুসলমানদের নিকট সুমহান মর্যাদা সম্পন্ন। কাফেরদের নিকটও মহান। ইমাম জোহরী, শা’বী ও আতা বলেন, “হজই হচ্ছে ‘হজে আকবর’ এবং উমরা হচ্ছে ‘হজে আসগর’ (ছোট হজ)।” একে আসগর বলা হয় এ জন্যই যে, এতে হজের আমলগুলো কম।
‘হজে আকবর’ নাম সম্পর্কে বলা হয়, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজ ও জুমা’ দিবস এক হয়েছিল। তিনি লোকদেরকে বিদায় জানান, তাদের উদ্দেশ্যে খোৎবা পাঠ করেন এবং তাদেরকে ‘মানাসেকে হজ’ শিক্ষা দেন।
সূরা তওবা এর আয়াতে ‘হজে আকবর’ দিবস এর ব্যাখ্যায় তফসীর গ্রন্থগুলোতে যে সব বর্ণনা রয়েছে তা পাঠ করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিদায় হজই ছিল ‘হজে আকবর’ বা মহান হজ। কেননা বিদায় হজে তাঁর প্রদত্ত ঐতিহাসিক খোৎবা এবং খানায়ে কাবাকে সম্পূর্ণ প্রতিমা মুক্ত করার ঘটনা ইত্যাদি ইসলামী ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, ‘আমীরুল হজ’ হিসেবে হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) এর ঘোষণায় কাবাকে পবিত্র করার কিছু পদক্ষেপ যেমন, “কোন কাফের জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং এই বছরের পর কোন মোশরেক হজ করবে না এবং উলঙ্গ অবস্থায় কেউ বায়তুল্লাহ তওয়াফ করবে না” ইত্যাদির ঘোষণা পরবর্তী বছর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিদায় হজ¦ সম্পন্ন করার একটি অনুক‚ল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এবং অবশিষ্ট কাজগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজকালে খোদ সম্পন্ন করেন। ফলে খানায়ে কাবা চিরকালের জন্য পরিপূর্ণভাবে কোফর ও শীরক কর্মকাÐ হতে মুক্ত হয়ে যায়।
আরও উল্লেখ্য যে, সূরা মায়েদার সেই বিখ্যাত আয়াত, “আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম...” এ ইসলামের পরিপূর্ণতা লাভের কথা ঘোষণা করা হয়েছে এবং সেই সাথে অন্যান্য জরুরি আহকামের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এটিও ছিল ১০ম হিজরী সালের আরাফা ময়দানের ঘটনা, দিনটিও ছিল শুক্রবার। এই সব কারণে রসূলুল্লাহ (সা.) এর বিদায় হজকে ‘হজে আকবর’ বলা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।