Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি

উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা তিস্তা ধরলায় পানি বৃদ্ধি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম


উজানে ভারতের ঢলে ও উত্তরাঞ্চলে ফের ভারী বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ধরলাসহ বিভিন্ন নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ১০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ২৬টি জেলা বন্যা কবলিত হয়। খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, ওষুধ ও চিকিৎসার সঙ্কট বিরাজ করছে সর্বত্র। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি অনেক এলাকায়। সরকারি বেসরকারি জরুরি ত্রাণ সাহায্যের আশায় তাকিয়ে আছে বন্যার্তরা। আহাজারি বাড়ছে দিন দিন। সেবার লেবাসে সুদি-মহাজনি কারবারে সারাবছর তৎপর থাকা এনজিওদের দেখা নেই।

পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল (বৃহস্পতিবার) জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা, তিস্তা, ঘাগটসহ উত্তর জনপদে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্যাঞ্চলেও বেড়েছে বানের পানির চাপ। গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল ও বিহারে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে। এ সময় গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদীসমূহের পানির সমতল দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় উন্নতি এবং নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় বন্যা স্থিতিশীল থাকতে পারে। গতকাল দেশের নদ-নদীসমূহের ৯৩টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪২টিতে পানি বৃদ্ধি ও ৫০টিতে হ্রাস পায়। ১৯ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

উত্তর জনপদে ধরলা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে কুড়িগ্রামে গতকাল বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়। তিস্তা নদী ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে (৩ থেকে ৫ সে.মি. নিচে)। ঘাগট নদীর পানি আরও বেড়ে গাইবান্ধায় বিপদসীমার ২৬ সেমি ঊর্ধ্বে রয়েছে।

ভারতের উজান থেকে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি বেড়েই চলেছে। গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেমি এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪ সেমি ওপর অবস্থান করে। যমুনা নদের পানি ৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ থেকে ৫১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা ৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর থাকলেও পানি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। উত্তরের পানির চাপে গোয়ালন্দে পদ্মা বিপদসীমার ৮ সে.মি. ঊর্ধ্বে বইছে। ভাগ্যকুল ও সুরেশ^রেও রয়েছে বিপদসীমার কাছাকাছি।
পাউবো’র প্রতিবেদন
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল এক প্রতিবেদনে জানান, এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি অববাহিকায় বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে বর্ষণ হয়। এ সময় অনেক জায়গায় ভারী হতে অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়। তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ ও উজানে বৃষ্টিপাতের মাত্রা হ্রাস পাওয়ায় নদীসমূহের পানি হ্রাস পেতে শুরু করে। এতে ক্রমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এ বন্যার তীব্রতার মাত্রা স্থানভেদে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় কয়েক স্থানে নদ-নদী পূর্বেকার পানির সমতলের রেকর্ড অতিক্রম করে। এরমধ্যে গত ১২ জুলাই তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে এবং ১৮ জুলাই যমুনা নদ বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ি পয়েন্টে পানির বিপদসীমা গত ২০১৭ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসের রেকর্ড অতিক্রম করে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয় বর্তমানে সার্বিকভাবে প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। তবে চলতি বন্যার মাত্রা স্থানভেদে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রধান নদীগুলোর পানি হ্রাস সত্তে¡ও অনেক স্থানে বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে বর্ষণের কারণে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতল কিছুটা বৃদ্ধি এবং বিপদসীমার নিচে আসা বিলম্বিত হতে পারে। বন্যা পরিস্থিতি স্থানভেদে কিছুটা অবনতি ছাড়া চরম অবনতির আশঙ্কা নেই। এ মাসের শেষে বন্যা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসতে পারে।

এ পর্যন্ত বন্যা কবলিত ২৬টি জেলা হচ্ছে- উত্তরাঞ্চলে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা। উত্তর-মধ্যাঞ্চলে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুর। মধ্যাঞ্চলে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ি ও ফরিদপুর। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নওগাঁ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও বান্দরবান। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ছাড়া উপরোক্ত অন্যান্য জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজমান।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া বিভাগের প্রাপ্ত পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আগস্ট মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেশে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আগস্টের শেষ ভাগে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।

বৃষ্টিপাত বাড়ছে-কমছে
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশের নদ-নদী এলাকাগুলোতে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ায় ১৫৭ মিলিমিটার, চাপাইয়ে ৮৪ মি.মি., টেকনাফে ১২৮ মি.মি., কুষ্টিায়ায় ৭৪ মি.মি., রোহানপুরে ৮১ মি.মি., দিনাজপুরে ৭৩ মি.মি., রাজশাহীতে ৫৭ মি.মি.। উজানভাগে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গেও উত্তরাঞ্চলে গতকাল ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়। আজ (শুক্রবার) ওইসব অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, শনিবার তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ার এবং ২৮ ও ২৯ জুলাই ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উজান

২০ অক্টোবর, ২০২২
১৩ ডিসেম্বর, ২০২০
১৮ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ