Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগের কড়া পাহারায়ও ঢাবিতে আন্দোলন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ছাত্রলীগের কড়া পাহারা ও দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার হুমকি উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন ঝটিকাভাবে কয়েক দফায় কলা ভবনসহ কয়েকটি ভবনে তালা লাগানোর ঘটনা ঘটলেও ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতিতে অধিকাংশ ভবনে তালা লাগানো সম্ভব হয়নি। টানা তিন দিনের অচলাবস্থার পর গতকাল বুধবার কিছু কিছু বিভাগে ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।

আন্দোলনকারীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ জন্য প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো. সামাদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র শাকিল মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি যদি মানা না হয় এবং আবার যদি কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা ভালোভাবে নেবে না।

সংবাদ সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা কলা ভবনের মেইন ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর কর্মচারীরা তালা ভেঙে ফেললে আবারও তালা মারেন তারা। পরে মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

কড়া পাহারায় ছাত্রলীগ : চলমান আন্দোলন দমাতে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার হুমকি দিয়ে ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে ভবনে অবস্থান নেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন হল ইউনিটকে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। এছাড়া খুব ভোরেই বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। যদিও এ সময় আন্দোলনকারীদের কাউকে দেখা যায়নি।

বিভাগে বিভাগে ক্লাস বর্জন : সকাল থেকে অ্যাকাডেমিক ভবন খোলা থাকা সত্তে¡ও অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে এগারোটায় সরেজমিন বিভিন্ন অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্লাস ফাঁকা। কিছু কিছু বিভাগে ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। এছাড়া কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানা যায়।

দুই আন্দোলনকারীকে মারধর : এদিকে আন্দোলনে যাওয়ার সময় ঢাবির দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। সকালে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি অভিমুখী সড়কে হাঁটছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের চার ছাত্রী ও আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান। একপর্যায়ে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের ১৩-১৪ জন নেতা-কর্মী তাদের আটকান। একপর্যায়ে ছাত্রীদের হুমকি-ধমকি ও রায়হানকে মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় আহনাফ তাহমিদ নামের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র ওই রাস্তা দিয়ে রিকশায় যাওয়ার সময় মারধর করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাকেও আন্দোলনকারী ভেবে ব্যাপক মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এতে তাঁর চোখের কর্নিয়া আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মারধরকারীদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এবং এসএম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাবিল হায়দার। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। হামলার শিকার আবু রায়হান এ বিষয়ে বলেন, আমি আর চারজন আপুসহ আন্দোলনে যাওয়ার সময় পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আটকায় এবং আমাকে মারধর করে। সে সময় তাহমিদ আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবাদ করলে তাকে তারা মেরে জখম করে।

১১ সদস্যের কমিটি গঠন : অধিভুক্তি কলেজগুলো নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা ও শিক্ষার্থীদের দাবির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে কার্যকর সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কলা, বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ঢাকা কলেজ ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল ও সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট), বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাঈনুল করিম, ডাকসুর ভিপি এবং জিএস গোলাম রাব্বানী। এই কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস ভিসির : আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের অধিভুক্তি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। গতকাল দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাত কলেজের অধিভুক্তি হয়েছে। তাই সাত কলেজের সুষ্ঠু সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষায় বৈজ্ঞানিক উপায়ে এর সমাধান করা হবে। এছাড়া সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ