Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

তারা ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’

চালাতে পারেন না কম্পিউটার : প্রকল্প শুরু না হলেও পাচ্ছেন বেতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা প্রকল্পের কাজ শুরু না হলেও, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত পাঁচ মাস ধরে বেতন নিচ্ছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। অথচ তাদের কারোরই কম্পিউটার কিংবা আইটি বিষয়ে কোনো ডিগ্রি নেই। অনৈতিকভাবে বেতন নিচ্ছেন সরকারি অবসরকালীন পূর্ণ সুবিধা নিয়ে এই প্রকল্পে চাকরি করা দু’ জন। বাকীদের ডিগ্রি ইতিহাস, উদ্ভিদ বিজ্ঞান আর সমাজকল্যাণ বিষয়ে। খাতায় হাজিরা না দিয়ে, অফিসে উপস্থিত না থেকে, মাসে বেতন থেকে নির্দিষ্ট একটা অংক বাধ্যতামূলকভাবে প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেককে দেয়ার শর্তে চাকরি করছেন অদ্ভুত পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সরকারের নানা বিভাগে পাঠানো অভিযোগ থেকে এমন অদ্ভুত নিয়োগ প্রক্রিয়ার তথ্য জানা গেছে। আর এর মূল হোতা হিসেবে নাম এসেছে এই প্রকল্পের পরিচালক ওয়ান ইলেভেনের আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ আবদুল খালেক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আরবান পাবলিক এন্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’র আইটি বিষয় সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য আইটি কনসাল পদে ৬ জন এবং ইনডিভিজুয়াল কনসাল ফাইনান্স পদে ২ জন সহ ৮ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গত বছরের সেপ্টেম্বরে, প্রকাশ পায়। সে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা সম্পন্ন আবেদনকারীদের প্রত্যেককে বাদ দিয়ে অভ্যন্তরীণ নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ দেন আব্দুল খালেক। এদের মধ্যে একজন প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এলপিআরে থাকা রাখাল চন্দ্র বর্মন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ¯œাতকোত্তর। আর অন্যজন ইসলামের ইতিহাস থেকে ¯œাতোকোত্তর এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম খান। এছাড়া আইটি স্পেশালিস্ট পদে রয়েছে ইতিহাসে ¯œাতকোত্তর সানজিদা খান, ইংরেজীতে ¯œাতোকোত্তর নজরুল ইসলাম খান, উন্নয়ন বিদ্যায় আবু বকর সিদ্দিক, সমাজকল্যাণে ¯œাতকোত্তর জাহিদুল হক খান। এদের মধ্যে আব্দুল খালেকের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এ এন এম ফয়জুল হকের আত্মীয় সানজিদা খান এবং জাহিদুল হক খান আপন ভাই বোন। অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের আইটি প্রকল্পটি আলোর মুখ না দেখার আগেই, পাঁচ মাস ধরেই আড়াই লাখ টাকা করে বেতন তুলছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। নিয়োগপ্রাপ্তরা নিয়োমিত প্রজেক্ট অফিসে অনুপস্থিত থেকে বাহিরে চাকুরি করেন। হাজিরা খাতায় কোন স্বাক্ষর না করে অডিট জেনারেল থেকে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষরে প্রতি মাসে বেতন নিচ্ছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন নিয়োগপ্রাপ্তদের কেউ কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগ মতে, অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শর্তে, বেতনের নির্দিষ্ট একটি অংশ প্রকল্প পরিচালক আবদুল খালেককে তারা মাসোহারা দিয়ে থাকেন। এসব বিষয়ে তারা সম্প্রতি প্রতিবাদ করলে, আবদুল খালেক তাদের হুমকির সুরে জানান, তিনি প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অর্থ দিয়ে থাকেন। কাজেই এসব অভিযোগ তুলে কোনো কোনো লাভ নেই।
দুদক এবং সরকারের বিভিন্ন শাখায় আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে প্রেরিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিএনপির শাসনামলে সচিবালয়ে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেছিলেন আবদুল খালেক। নিয়োগ আর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সচিবালয় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই আবদুল খালেক।
সরকারের বিশেষ শাখার তথ্যমতে, আবদুল খালেক তার আত্মীয়র নাম দিয়ে ঢাকাতে ৫টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। গাজীপুর, নেত্রকোনা ও কক্সবাজারে আবদুল খালেল নামে- বেনামে ২০ থেকে ৩০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। অভিযোগ মতে, প্রকল্পের কাজে গাড়ীগুলো ব্যবহার না হয়ে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে আবদুল খালেকের স্ত্রী ও সন্তানের কাজে। আর এসবের যাবতীয় ব্যয় মেটানো হচ্ছে সরকারের কোষাগার থেকে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য আবদুল খালেকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে উল্লেখ করেন। যদিও পরে আর তিনি ফোন করেননি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেতন

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ