বাংলাদেশে খাদ্যে দুর্ভিক্ষ হবে না
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ রয়েছে, আজকে যে বৃষ্টি হচ্ছে এই বৃষ্টির কারণেই বাংলাদেশে সোনালী
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভাসছেন আনন্দের জোয়ারে। তবে এই আনন্দ-উল্লাসের আড়ালে তাদের মনে রয়েছে শঙ্কাও। কারণ আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধ। যে যুদ্ধে নেমে হতাশ হতে হবে অনেককেই। সেরা সাফল্য জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না অনেক শিক্ষার্থীই। শুধু দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ভালো মানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হবে তাদের। আবার দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ আসন রয়েছে তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় সঙ্কট দেখা দেবে ভর্তির ক্ষেত্রেও। এই সঙ্কট নিরসনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পর সকল শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা থাকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু পরীক্ষায় পাস করলেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন তার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না কোন শিক্ষার্থীই। পরীক্ষার সেরা সাফল্য জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও কপালে চিন্তার ভাঁজ থাকছে অনেকের। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বল্প সংখ্যক আসন থাকায় তাদের অনেকেই ভর্তি হতে পারবেন না এসব প্রতিষ্ঠানে। আবার উচ্চ হারে টিউশন ফি’র কারণে উচ্চ বিত্ত পরিবারের সন্তান ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাহস দেখাবে না মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। ফলে তাদের ভর্তি হতে হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে। যেখানে সেশন জটের যাতাকলে পিষ্ট হবে লাখ লাখ মেধাবী শিক্ষার্থীর ছাত্রজীবন। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে ভর্তির পরও উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত হবে ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। তাই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েই ঘুম নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের। আর কম জিপিএ পাওয়াদের দুঃশ্চিন্তার কোন অন্ত নেই। ভালো ফলের আনন্দ ও উল্লাসের আড়ালে শিক্ষার্থীদের মনে জেগেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি চিন্তা।
চলতি বছরের প্রকাশিত এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, এবার উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হিসেব অনুযায়ি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজারের মতো। উত্তীর্ণদের তুলনায় উচ্চশিক্ষায় ভর্তির আসন কম রয়েছে এক লাখেরও বেশি। আবার গতবছর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হতে পারেনি কিংবা কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে তাদের অনেকেই এবার ভর্তি যুদ্ধে শামিল হবে। গতবছর এবং চলতি বছরের উত্তীর্ণ মিলে প্রায় ১২ লাখের মতো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লড়াই করবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় এবং অনেকে বিভিন্ন কারণে আর পড়াশোনা চালিয়ে না যাওয়ায় এতে সংকট হবে না বলে মনে করেন তারা। তবে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পছন্দের বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই চাপের মুখে পড়তে হবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা যায়, ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে ৩৯টি। এই ৩৯টি পাবলিক এবং ১০১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ৪ লাখে কাছাকাছি। উচ্চশিক্ষায় মোট আসনের মধ্যে শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৪৭ হাজার ৪০৭টি। মেডিকেল, মেরিন ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মিলিয়ে আসন আছে ১৩ হাজার ৩৬৮টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৩ লাখ ২৫ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে স্নাতকে (সম্মান) ও (পাস কোর্স) আসন আছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০০টি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে প্রায় ৩৪ হাজার। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫৩ হাজার ১৪৮টি আসন। এ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও আরও কিছু আসন আছে।
ফল বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে, এবার মোট ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী উর্ত্তীণ হয়েছে। জিপিএ-৫ থেকে ৪ পেয়েছেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০, জিপিএ-৪ থেকে ৩ দশমিক ৫ পেয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৪৭, জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৩ পেয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৮৯৪। জিপিএ-৫সহ মোট ৭ লাখ ৩৭ হাজার ২৭ জন। জিপিএ-৩ এর কম পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবে না। অর্থাৎ জিপিএ-৩ এর কম ২ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ জন। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ডিগ্রি কিংবা পাস কোর্সে ভর্তির চেষ্টা করবে।
অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন মেডিকেল, বুয়েট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ভাল ফল এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কলেজে পড়তে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তার মধ্যে সবার পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। বুয়েটে আসন রয়েছে ২ হাজার ১০২টি, সরকারি মেডিকেল কলেজে ৩ হাজার ৩১৮টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭০০টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৭৪টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৪২০টি।
ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছরই আসন বৃদ্ধি করা হয়। ফলে আসন সমস্যার জন্য কেউ ভর্তির বাইরে থাকবেন না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যত পাস করেন, শেষ পর্যন্ত ততজন ভর্তি হন না। অনেকে বিদেশে পড়তে চলে যান। অনেকে চাকরি শুরু করেন। আবার ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে যায়। বরং স্নাতক (পাস) কোর্সে কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর ভর্তি শেষে নি¤œমানের কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নামী-দামি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। তাঁদের প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকবে সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। এ ছাড়া জিপিএ-৪ থেকে ৫এর নিচে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও লক্ষ্য থাকবে কমপক্ষে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ফলে এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে এবার ভর্তি নিয়ে ভালো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি বলছে, প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট থাকলেও, কোনো শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, পাসের সংখ্যা নিয়ে কোন বিব্রত বিষয় না। তবে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অনেকেই ভালো ফল করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল কলেজসহ পছন্দের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না। কারণ তাদের অধিকাংশই মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে। তিনি বলেন, আমরা যদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যার ব্যবস্থা না করতে পারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নত করতে না পারি, তাহলে এ ফাঁকটা থেকেই যাবে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেহেতু এতো আসন নেই কাজেই অনিবার্যভাবেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। তবে এর বেশিরভাগেরই আবার গুণগত মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোন সঙ্কট হবে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ভর্তির জন্য যথেষ্ট আসন রয়েছে। বরং অনেক আসন খালি থাকে। তবে মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা কাজ শুরু করেছি। এটি হলে অনেক ভোগান্তি কমে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।