Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেড়েছে জিপিএ-৫

এইচএসসি আলিম ও সমমানের ফল প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলে বেড়েছে পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী, শতকরা হার, শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, কমেছে শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর এই পরীক্ষায় আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সার্বিকভাবে গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। গতবছর এই পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এবার পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন।

পরীক্ষার ফলাফলে সব সূচকে ভালো হয়েছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতি, অভিভাক ও শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এবং নকলমুক্ত পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। আবার যারা খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে তারা এ দুটিতে পিছিয়ে গেছে। তবে সার্বিকভাবে ফলাফল ইতিবাচক। সহজ ও কঠিন মিলিয়ে সব ধরণের শিক্ষার্থীদের উপযোগী করেই প্রশ্ন করা হয়। এজন্য পাসের হারে কোন প্রভাব পড়েনি। যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ভালো করেছে, আর যাদের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল তারা ভালো ফল পায়নি। তবে যে সকল বোর্ড ভালো করছে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের ভালো ফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।

এবারের ফলাফলে পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং কমেছে শূণ্য পাস করা প্রতিষ্ঠানও। ১০টি বোর্ডের অধীনে ৮ হাজার ৯৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০৯টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গতবছর ছিল ৪০০টি। এবার বেড়েছে ৫০৯টি। অন্যদিকে একজনও পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৪১টি। গতবছরের চেয়ে কমেছে ১৪টি। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি সেগুলাকে নজরদারির মধ্যে আনা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করবে না- এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা চাই না। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি সেগুলোকে নজরদারির মধ্যে আনা প্রয়োজন।

গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানটি অলিখিতভাবেই মাদরাসা বোর্ডের দখলে ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে হঠাৎ করেই ছন্দপতন হয়ে যায় এই বোর্ডের ফলাফলে। তবে একবছরের ব্যবধানেই গতবছর মাদরাসা বোর্ড আবারও শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করে। এবারও সেই শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে মাদরাসা বোর্ড। এই বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা গতবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। পাসের হারে সবার নিচে রয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, উত্তীর্ণ ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা বেশি হলেও গড় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হারের ক্ষেত্রে ছাত্রীরাই এগিয়ে রয়েছে। সার্বিক ফলাফলে ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বেশি হওয়ায় ছাত্ররাই বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। অংশগ্রহণকারী ৭ লাখ ৩ হাজার ছাত্রের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ হাজার ৫৭৬ জন। যা মোট ছাত্রের ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৯ জন ছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৭১০ জন। যা মোট ছাত্রীর ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এ বছর এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। যা গতবছরের তুলনায় ৪৭ হাজার ৮৭২ জন বেশি। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। ১০টি বোর্ডের সার্বিকভাবে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাধারণ আটটি বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা বোর্ডে।

রেওয়াজ অনুযায়ি ৬০ দিনের মধ্যে এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের বাধ্যবাধ্যকতা থাকায় নির্ধারিত ৬০ দিনের আগে এবার ৫৫তম দিনে এবছরের ফলাফল প্রকাশ করা হলো। বিগত মহাজোট সরকারের সময়ে এটি চালু হওয়ার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েও এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল (বুধবার) দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাসের হার বৃদ্ধি, বিজ্ঞান বিভাগের পাশাপাশি মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার বাড়ায় উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। একইসাথে জেলা, উপজেলা সদরের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করাকে ইতিবাচক হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদসহ সকল বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার পরীক্ষা হয়েছে ‘সুন্দর’ পরিবেশে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকল সর্বোতভাবে বন্ধ হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি প্রতারণা কিংবা গুজবের সৃষ্টি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ পাসের হারকে ‘যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ও ভালো’ ফলাফল হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিলে ধীরে ধরে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। সেটা আমার বিশ্বাস। কারণ আমি মনে করি ছেলেমেয়েরা ফেল করবে কেন? আমরা কতগুলো উদ্যোগও নিয়েছি যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগী হয়। যারা এবার পাস করেছে তাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। আর যারা পাস করতে পারেনি তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মন খারাপ করার কিছু নেই, আবার পরীক্ষা দেবে। এখন তো আরেকটা সুবিধাও আমরা করে দিয়েছি নীতিমালায়। একটা বা দুটো বিষয়ে যদি ফেল করে সেগুলোই আবার দিতে হবে, পুনরায় সব পরীক্ষা আবার দিতে হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমারা এ সুযোগগুলো সৃষ্টি করে দিয়েছি যতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পাস করে, তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, স্বউদ্যোগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, এবং বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারে।

৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড : ৮টি সাধারণ বোর্ডের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে বেশি কুমিল্লায় ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৭১ দশমিক ০৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই ৮টি বোর্ডের মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৮০৭জন। এরমধ্যে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগ থেকে পেয়েছে ৩৩ হাজার ১৯২জন, মানবিক, ইসলাম শিক্ষা, সংগীতে পেয়েছে ৪ হাজার ৬২৫ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় পেয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ জন।

মাদরাসা বোর্ড : পাসের হারে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মাদরাসা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৭৬ হাজার ২৮১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৪৩ জন।

কারিগরি বোর্ড: এই বোর্ড পাসের হারে এবার দ্বিতীয়। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ বছর এই বোর্ডে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন।
গত ১ এপ্রিল থেকে ২৩ মে দেশের দুই হাজার ৫৬০টি কেন্দ্রে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা চলে। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিপিএ-৫

৩১ জানুয়ারি, ২০২১
১৮ জুলাই, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ