দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
৮ই জিলহজ্জ থেকে হজ্জের প্রস্তুতি শুরু হয়। হজ্জের এহরাম বাঁধা না থাকলে এহরাম বাঁধতে হবে। মসজিদে হারামে গিয়ে এই এহরাম বাঁধা মোস্তাহাব। এহরাম বেঁধে মিনায় যেতে হবে। যারা মিনায় যাবেন তারা ৭ তারিখেই এহরাম বেঁধে নিবেন। এহরামের পর তালবিয়া শুরু হবে। ৮ই জিলহজ্জের জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ৯ই জিলহজ্জের ফজর সর্ব মোট এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় পড়া মোস্তাহাব এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত। মিনায় যথা সম্ভব মসজিদে তায়েফের কাছাকাছি অবস্থান করা উত্তম। ৮ই জিলহজ্জের পূর্বে যদি হাজি সাহেব মক্কা শরীফে মুকীম হিসেবে অন্তত ১৫ দিন অবস্থান করে থাকে, তাহলে মিনায় এমনি ভাবে আরাফায় এবং মুযদালেফায়ও পূরা নামায পড়তে হবে। আর তা না হলে এসব স্থানেও কছরের বিধান চলবে।
৯ই জিলহজ্জ আরাফায় গমন ও উকূফে আরাফা
৯ই জিলহজ্জ পূর্বের আকাশ বেশ উজালা হওয়ার পর ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয়ের সামান্য কিছু পর আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। এখানে আরও একটি মাসআলা স্মরণ রাখতে হবে, ৯ই জিলহজ্জ থেকে ১৩ই জিলহজ্জের আসর পর্যন্ত সর্বমোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। নামাযের পর প্রথম তাকবীরে তাশরীক বলবেন তারপর তালবিয়া পড়বেন। আরাফায় যাওয়ার পথে তালবিয়া পড়তে পড়তে, দুআ ও যিকির করতে করতে, অত্যন্ত খুশু খুযূর সাথে চলতে থাকুন। তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফার ময়দানে প্রবেশ করুন। আরাফার ময়দানে জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থান করতে পারলে ভাল, তবে পাহাড়ে আরোহন করবেন না। বাত্নে র্উনা (আরাফার ময়দানের একটি অংশের নাম, যার কিছু অংশ মসজিদে নামিরার ভিতর কেবলার দিকে পড়েছে) ব্যতীত আরাফার যে কোন স্থানে অবস্থান করা যায়। সূর্য ঢলা থেকে উকূফে আরাফা শুরু এবং সূর্য অস্ত গেলে উকূফে আরাফা শেষ হবে। উকূফে আরাফা হজ্জের অন্যতম ফরজ। আরাফায় পৌঁছার পর তালবিয়া, দুআ ও দুরূদ শরীফ পাঠ বেশী বেশী করতে থাকবেন, সূর্য ঢলার পূর্বেই খানা-পিনা থেকে ফারেগ হয়ে যাবেন। সূর্য ঢলার পর গোসল করা উত্তম, না পারলে উযূ করবেন। যারা তাবুতে নামায পড়বেন তারা যোহরের ওয়াক্তে যোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসরের নামায পড়বেন। মসজিদে নামিরায় যোহরের এবং আসরের নামায একত্রে যোহরের ওয়াক্তে পড়ে নেয়া হয়। কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে এরূপ করা জায়েয। উকূফে আরাফার সময় যথা সম্ভব দাঁড়িয়ে থাকা এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তালবিয়া, তাসবীহ-তাহলীল, দুরূদ পাঠ ও দুআ করতে থাকা মোস্তাহাব। না পারলে বসে বসে বা শুয়ে এগুলো করলেও চলবে। ঘুম এসে গেলেও অসুবিধে নেই, তবে বিনা ওযরে নিদ্রা যাওয়া মাকরূহ। মহিলাগণ হায়েয/নেফাস অবস্থায় থাকলেও উকূফে আরাফা করে নিলে কোন অসুবিধে নেই। সূর্যাস্তের পূর্বে কোন ক্রমেই আরাফা ময়দানের সীমানা ত্যাগ করা যাবে না। তাহলে দম দিতে হবে। সূর্যাস্ত গেলে মাগরিবের নামায না পড়ে যথা সম্ভব বিলম্ব না করেই মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। বিনা ওযরে রওনা দিতে বিলম্ব করা মাকরূহ। এই মাগরিবের নামায মুযদালিফায় গিয়ে ইশার ওয়াক্তে পড়তে হবে।
মুযদালিফায় হাজিদের করণীয়
৯ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত যাওয়ার পর আরাফায় বা রাস্তায় কোথাও মাগরিবের নামায না পড়ে সোজা মুযদালিফার যেতে হবে। তালবিয়া, তাকবীর, দুরূদ ও দুআ পাঠ করতে করতে চলুন। ধাক্কাধাক্কিতে কারও কষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকলে কিছু দ্রুত চলা উত্তম। গাড়ীতেও যাওয়া যায়। মুযদালিফার নিকটবর্তী যেয়ে গাড়ীতে এসে থাকলে নেমে পায়ে হেটে মুযদালেফায় প্রবেশ করা মোস্তাহাব। সম্ভব হলে মোযদালেফায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করে নেয়া মোস্তাহাব। মুযদালেফায় পোঁছে ইশার ওয়াক্ত হলে এক আযান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিবের ফরয তারপর ইশার ফরয পড়ুন তারপর মাগরিবের ও ইশার সুন্নাত এবং বিতির পড়ুন। (প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়ার কথাও স্মরণ রাখবেন) এখানে মাগরিবের নামায ইশার ওয়াক্তে পড়া হলেও কাযার নিয়ত নয় বরং ওয়াক্তিয়ার নিয়ত করবেন। এখানে উভয় ওয়াক্তের নামায জামাআত সহকারে পড়া উত্তম। মাগরিব ও ইশার নামায পড়ার পর সুবহে সাদেক পর্যন্ত মুযদালেফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কদা। এ রাতে জাগরণ করা এবং নামায, তিলাওয়াত, দু’আ ইত্যাদিতে মশগুল থাকা মোস্তাহাব। কারও কারও মতে এ রাত শবে কদর অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। সুবহে সাদিক থেকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আন্তত: কিছু সময় মুযদালেফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। (মহিলা, বৃদ্ধ ও মাযূরদের জন্য ওয়াজিব নয়) সুবহে সাদেক হওয়ার পর উকূফে মুযদালেফার জন্য গোসল করা মোস্তাহাব। সুবহে সাদেক হওয়ার পর আওয়াল ওয়াক্তে ফজরের নামায পড়ে নেয়া উত্তম এবং জামাআতে পড়া উত্তম। নামাযের পর যিকির এস্তেগফার ও মুনাজাতে মশগুল থাকবেন। সূর্যোদয়ের ২/৪ মিনিট পূর্বে মুযদালেফা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। সুবহে সাদেকের পূর্বে মুুযদালেফা ত্যাগ করলে ওয়াজিব তরক হওয়ার কারণে গোনাহ হবে এবং দমও দিতে হবে। মুযদালেফা থেকে ৭০টি কংকর সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন, এগুলো মিনায় জামারাতে নিক্ষেপ করা হবে। এ কংকর মিনা থেকেও সংগ্রহ করা যায়, তবে কংকর নিক্ষেপের জায়গা থেকে নেয়া নিষেধ।
১০ই জেলহজ্জ থেকে ১৩ই জিলহজ্জ হাজিদের করণীয়
১০ই জিলহজ্জ সুর্যোদয়ের কিছু পূর্বে মুযদালেফা থেকে রওনা হয়ে মিনায় এসে সামানপত্র সাথে থাকলে তা হেফাজতে রেখে বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। এই কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। এই কংকর নিক্ষেপ করার সুন্নাত সময় হল ১০ই জিলহজ্জ সূর্যোদয় থেকে সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত, আর সূর্য চলার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত হল জায়েয সময় এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পরবর্তী সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরূহ সময়, তবে মহিলা ও মাযূরদের জন্য মাকরূহ নয়। কংকর নিক্ষেপের মোস্তাহাব তরীকা হল ঃ কংকর নিক্ষেপের সময় যে স্তম্ভে কংকর নিক্ষেপ করা হবে তার দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে মিনাকে ডান দিকে এবং কা’বা শরীফকে বাম দিকে রেখে স্তম্ভের অন্ততঃ পাঁচ হাত দূরে দাঁড়িয়ে (এর চেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে কংকর মারা মাকরূহ) ডান হাতের শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা এক একটি কংকর ধরে হাত এতটুকু উঁচু করে নিক্ষেপ করবেন যেন বগল দেখা যায়। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলবেন। কংকর নিক্ষেপের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন স্তম্ভের নীচের দিকে চারপাশে কিছুটা উঁচু করে যে দেয়াল দিয়ে ঘেরা আছে কংকরটি তার বাইরে না পড়ে বা সজোরে স্তম্ভে লেগে বাইরে ছিটকে না যায়। যে কংকরটি এ ঘেরার মধ্যে না পড়বে সেটি বাদ বলে গণ্য হবে। উপর থেকে বা যে কোন দিক থেকে কংকর নিক্ষেপ করলেও জায়েয হবে। ভীড়ের ভয়ে বা কিছুটা কষ্টের ভয়ে অন্যের মাধ্যমে কংকর নিক্ষেপ করালে ওয়াজিব আদায় হবে না। তাহলে দম দিতে হবে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।