দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর ঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি রাব্বুল আলামীন। লাখো-কোটি দরুদ ও সালাম প্রিয়নবী (দ.) এর উপর, যিনি মুমিনের ঈমান। হুজুরপাক (দ.) এর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রা.), আল্লাহর নেককার বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ হোক অঝোর ধারায়। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবলমাত্র মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত।
রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ হল সমস্ত আম্বিয়াগণের সুন্নাত। আল্লাহ তায়ালার মাহবুব বান্দাগণের অভ্যাস। আর আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাহাজ্জুদের ফজিলত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন। এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়- আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে’। (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত : ৭৯।) তিনি আরও বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্খা ও আশঙ্কার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা দান করে।’ (সূরা সেজদা, আয়াত : ১৬।)
তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তরবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ প্রভুর প্রেমে গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল করে, পবিত্র করে এবং সত্য পথে অবিচল রাখে। পবিত্র কুরআনের সূরা মুজাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকির করা খুবই কার্যকর।’ (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত : ৬।) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়’। (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৬৪।)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফের স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন আর ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৭।)
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দ.) এর পবিত্র হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্বে ও তাৎপর্য উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুলাহ (দ.)কে বলতে শুনেছি। ‘আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’। অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল (দ.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন। যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে তখন তিনি বলতে থাকেন কে আছো যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব। কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি ও মুসলিম) শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার বর্ণনা করেন, হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (দ.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন। এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাড়ায়’। অনুরূপ অন্য আরেকটি হাদিস রয়েছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (দ.)কে বলতে শুনেছি, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দান করবেন। (মুসলিম)
আসুন, আমরা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে মনকে পবিত্র করি এবং আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাহাজ্জুদগোজার বান্দা হওয়ার তাওফিক দিন।
উত্তর দিচ্ছেন ঃ মুফতি মাওলানা-মুহাম্মাদ এহছামুল হক মুজাদ্দেদী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।