Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঠের ব্রিজটি যেন মরণফাঁদ!

মনিরুর ইসলাম দুলু, মংলা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মংলা নদী সংলগ্ন মাছমারা খালের কাঠের ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় অনেকটা যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ ব্রিজটি এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো বাহন চলাচল তো দূরের কথা, এটি দিয়ে মানুষ পার হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এ ব্রিজ দিয়ে নারী, বয়স্ক ও শিশুদের চলাচলে চরম নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় অধিবাসীদের।

প্রতিদিন এ কাঠের ব্রিজ পার হয়ে উপজেলার চাঁদপাই ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ছাত্রছাত্রীসহ কয়েক হাজার মানুষ পৌর এলাকায় যাতায়াত করে থাকেন। বর্তমানে শোচনীয় অবস্থার কারণে এলাকাবাসীকে চরম ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি পার হতে হচ্ছে। কাঠের ব্রিজটির অধিকাংশ স্থানই ভাঙাচোরা। কাঠের পাটাতন নেই বললেই চলে। লোহার কাঠামোর সঙ্গে কোথাও মাঝখানে সরু একটি কাঠ, আবার কোথাও দুই পাশে দুটি সরু কাঠের ওপর দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে লোকজন ব্রিজটি পার হচ্ছে।

সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শেফালী বিশ্বাস জানান, প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা এ ব্রিজ পার হয়ে মংলা শহরে যাতায়াত করে। গত দুই বছর ধরে ব্রিজটির কোনো সংস্কার না করায় আমরা খুবই বিপদে আছি।

নারকেলতলা গঠন এডুকেশন সেন্টারের প্রধান শিক্ষিকা প্রীতি বালা বলেন, এই ব্রিজের দুই পাড়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রিজ পার হয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় আসা-যাওয়া করতে হয়। এই ভাঙাচোরা ব্রিজের কারণে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

গঠন এডুকেশন সেন্টারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জিয়ারুল শেখ, সৈকত আকন, মনিরুল, সুমন ফরাজীসহ প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী বলে, বাবা-মা বা অভিভাবক সঙ্গে না থাকলে তারা খুবই ভয়ে ভয়ে এই ব্রিজ পার হয়। একটু বৃষ্টি হলেই ব্রিজের ওপর এমন পিচ্ছিল হয় যে তাদের মতো শিশুরা তখন আর ব্রিজ পার হতে পারে না। পা ফসকে গেলেই খালে পড়ে প্রাণহানি ঘটার আশংকা থাকে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজ দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে।

নারকেলতলা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক পবিত্র বৈরাগী বলেন, ২০১৭ সালে এই ব্রিজ পার হওয়ার সময় কুলসুম বেগম নামের এক বৃদ্ধা পড়ে গিয়ে মারা যান।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নির্মল রায় ও পাকখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা দিনমজুর শাজাহান বলেন, এটি এখন মানুষ মারার ব্রিজে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দিন আগেও জনি বিশ্বাস নামের একজন মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তারা আরও বলেন, রাতের বেলায় বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় ব্রিজ দিয়ে পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি।
নারকেলতলা গ্রামের মুদি দোকানি মাসুম শেখ ও তরকারী দোকানী রবার্ট হালদার বলেন, মংলা বাজার থেকে আমাদের পণ্য কিনে আনতে হয়। আর এই ব্রিজ দিয়ে পণ্য পরিবহনে আমাদের ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এত দিন ধরে সমস্যা চললেও পৌর কর্তৃপক্ষ এই ব্রিজটি মেরামতের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না।

মংলা পোর্ট মেয়র আলহাজ জুলফিকার আলী বলেন, ব্রিজের এই দুরবস্থার কথা আমার জানা ছিল না। মূলত ব্রিজটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নির্মাণ করে দিয়েছিল। সে কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ এর সংস্কারকাজ করেনি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেবে।
মংলা উপজেরা নির্বাহী অফিসার মো. রাহাত মান্নান জানান, মাছমারা ব্রিজটি সরেজমিন পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ