রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
স্বাধীনতা উত্তরকালের দীর্ঘ ৪৮ বছরেও নরসিংদী জেলা শহরের বড়বাজারের রাস্তাঘাট ও গলিপথগুলো অবৈধ দখলমুক্ত হয়নি। বন্ধ হচ্ছে না অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠকবাজী ও প্রতারনামূলক বাণিজ্য। বৃদ্ধি পাচ্ছে না গ্রাহক সুবিধা। উপরন্তু, প্রতিদিনই জিনিসপত্র ক্রয় করতে এসে সীমাহীন ভোগান্তিসহ সঙ্ঘবদ্ধ কুলিচক্র, অসাধু ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিদিনই অপমানিত হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকরা। যুগ যুগ ধরে দত্তপাড়াসহ আশপাশের এলাকার এসব দখলবাজ অসাধু ও প্রতারক ব্যবসায়ীদের ঠকবাজি, প্রতারণা ও দুর্ব্যবহারের কারণে অতি প্রাচীন ব্যবসা কেন্দ্র নরসিংদী বাজারটি এখন ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে কমবেশি ৮ জন নির্বাচিত ও অনির্বাচিত চেয়ারম্যান, প্রশাসক ও মেয়র নরসিংদী পৌরসভার নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউই বাজারটিকে অবৈধ দখল মুক্ত, উন্নয়ন ও গ্রাহক সুবিধা বৃদ্ধিতে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেননি।
বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বাজারটি সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন। সিলভার পট্টিসহ কয়েকটি রাস্তা দখলমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু সিলভার পট্টির রাস্তার উপর নির্মিত দোকানপাট উচ্ছেদ করতে পারেননি। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন দোকান মালিকদের স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা মেয়রের কথা কর্ণপাত করেনি। এরপর উচ্ছেদের ব্যাপারে পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন ফলোআপ না থাকায় অবৈধ দোকানগুলি যথাস্থানেই রয়ে গেছে। যার ফলে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার-হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ফলপট্টির রাস্তাটি পরিপূর্ণ অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেছে। একটি ঠেলাগাড়ি বা একটি ভ্যান ঢুকলে এ রাস্তা দিয়ে গ্রাহকরা চলাফেরা করতে পারেন না। ঠেলাওয়ালা বেপরোয়া কুলিরা যখন তখন মানুষের উপর খেলা ওঠিয়ে দিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে সঙ্ঘবদ্ধ কুলিরা গ্রাহকদের সাথে মারমুখী আচরণ করছে। গুড় পট্টি থেকে তরকারি পট্টি পর্যন্ত রাস্তাটি পরিপূর্ণ অবৈধ দখলে চলে গেছে। গুড়ের চাটাইওয়ালারা দু’দিক থেকে রাস্তা দখল করে রেখেছে। দু’জন মানুষ একত্রে রাস্তায় ঢুকতে পারে না। বাজারের মালামাল পরিবহনের জন্য ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, রিকশা কিছুই ঢুকতে পারে না।
এই অবস্থা প্রায় প্রতিটি গলিপথে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। এসব অবৈধ দখলদারদের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে এসব অবৈধ দখলদার ব্যবসায়ীদের সীমাহীন দৌরাত্ম্যের কারণে ৮শ’ বছরের পুরনো বাজারটি দিনদিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে নরসিংদী বাজারটি ভেঙে জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকায় কমবেশি শতাধিক বাজার সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও গ্রাহক নরসিংদী বাজারে আসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে, বড় বড় আড়ত এবং পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নরসিংদী বাজারের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকার যে সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নরসিংদীর পাইকারি বাজার থেকে চাল, ডাল, তেলসহ মুদি-মনোহারী মালামাল কিনে খুচরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করত, তারা এখন নরসিংদী বাজার ছেড়ে দিয়েছে। দিনদিন ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি একটি পরিত্যক্ত বাজারে পরিণত হচ্ছে। এরপরও নরসিংদী বাজার কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
বাজার ঠিক কবে কখন স্থাপিত হয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট কোনো ইতিহাস খুজে পাওয়া যায় না। তবে স্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে, নরসিংদী নদী বন্দরকে কেন্দ্র করে কমবেশি ৬ শ’ থেকে ৮ শ’ বছর পূর্বে এ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। প্রাচীনকালে বর্তমান নরসিংদী জেলার সহস্রাধিক গ্রামসহ আশপাশের জেলাগুলোর উৎপাদিত উদ্ধৃত্ত ধান, পাট, যব, গম, ডাল, গুড়, চিনি, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, আলুসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি ও শাকসবজি এবং নরসিংদীর মেঘনা আড়িয়াল খাঁ ও হারিধোয়া নদীর মাছের প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠে এই নরসিংদী বাজার। প্রথমে বাজারটিতে স্থাপিত হয় মেঘনার মাছ, ধান, চাল, গম, যব ও পাটের আড়ত। পরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের আরো বহু সংখ্যক আড়ত স্থাপিত হয়। নরসিংদী বাজারটি একটি সুবিন্যাস্ত বাজার হিসেবে পরিচিত। এই বাজারটিতে আলাদা আলাদাভাবে রয়েছে বিশাল মাছের বাজার, তরকারি পট্টি, চাল পট্টি, মুদি পট্টি, মনোহারী পট্টি, টিন পট্টি, পাট পট্টি, গুড় পট্টি, সুতাপট্টি, রং পট্টি, ফল পট্টি, লুঙ্গি পট্টি, কাপড় পট্টি, দুধ পট্টি, হোটেল পট্টি, বণিক (পুটলী) পট্টি, স্বর্ণ পট্টি, লাইব্রেরি পট্টি, জুতা পট্টি কামার পট্টি, বাজেমাল পট্টি, পানপট্টি ইত্যাদিসহ বহু সংখ্যক আধুনিক শপিং মল। প্রতিটি পট্টিই এক-একটি গলির মধ্যে অবস্থিত। গলি রাস্তাগুলোর প্রশস্ততা কম। এর মধ্যে অবৈধ ব্যবসায়ীরা এই রাস্তাগুলোর দু’পাশ নিজেদের দখলে নিয়ে রাস্তার উপর স্থাপন করেছে অসংখ্য অবৈধ দোকানপাট। এসব অবৈধ দোকানপাটের কারণে মালামাল পরিবহনের ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, রিক্সা ইত্যাদি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না ক্রেতাগণ।
ঐতিহ্যবাহী বাজারটি সংস্কারে এখনই হাত না দিলে অদূর ভবিষ্যতে এ বাজারটি পরিণত হবে একটি পরিত্যক্ত বাজারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।