বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভূমিকম্প এবং আগুন নেভানোর বিষয়ে সচেতনতামূলক মহড়া করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। ঠিক তার দুই মাসের মাথায় ৬ নম্বর ভবনের সাত তলায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গণপ‚র্ত অধিদপ্তরে কারণে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তারা। এ দিকে ২০১০ সাল থেকে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৪ বার। এসব ঘটনার তদন্ত করা হয়, কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। গতকাল সোমবার গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি ৬ নম্বর ভবনের সাত তলা পরির্দশন করেছেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব এবং একান্ত সচিবকে চিঠি দেবে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, আমার জানা মতে সচিবালয়ে ১৩ থেকে ১৪ বার বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাগুলো তদন্ত করছি। আসলে কখন কোথায় থেকে আগুন লাগে বলা সহজ নয়। আমার মতে ময়লা আবর্জনা থেকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী- সচিব এবং তাদের একান্ত সচিবকে চিঠি দেয়া হবে।
গত রোববার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ২১তলা ভবনের সাত তলায় সিঁড়ির কাছে একটি কক্ষে বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড থেকে আগুনের স‚ত্রপাত হয়। গত ৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ভবনগুলোর সব জায়গাতেই সার্কিটব্রেকার দেয়া রয়েছে। তাই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার কোনো ঝুঁকি নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলার ঠিক দুই মাসের মাথায় আবারো প্রশাসনে প্রাণ কেন্দ্র সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে (২১ তলা) বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসের শেষভাগে আগুন লাগার খবরে বহুতল এ ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ছয়টি লিফট বন্ধ রাখা হলে অনেকেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে এক অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরে কারণে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তারা যেভাবে মন্ত্রণালয়গুলোর সংস্কার কাজ শুরু করেছে এ জন্য এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর যদি রাতের বেলায় হতো তাহলে অনেক ক্ষতি হতো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিভেন্সের ঢাকা জেলার সহকারী পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, পরিত্যক্ত কাগজপত্রে আগুন লেগেছিল। আগুনে কিছু পুরাতন কাগজপত্র পুড়েছে। তবে আগুনের কারণ তদন্ত করে দেখতে হবে। অগ্নিকান্ডের পর সচিবালয় ভবন থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনে ১২তলায় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ ছাড়াও শিক্ষা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বস্ত্র ও পাট, বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় বিভাগের দফতর রয়েছে। সপ্তম তলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিঁড়ির কাছের কক্ষে আগুন লাগার পর ধোঁয়া বের হতে দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে সচিবালয়সহ ফায়ার সার্ভিসের আরও তিনটি ইউনিট আগুন নিভিয়ে ফেলে।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, এর আগে এ ভবনে অগ্নি মহড়ায় সিঁড়ির কাছের পরিত্যক্ত কাগজপত্র ও পুরনো আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে বলা হলেও তা করা হয়নি। অগ্নিকান্ডে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিঁড়ির মাঝামাঝি স্থানের কক্ষে বৈদ্যুতিক বোর্ড পুড়ে যাওয়া ছাড়া তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। চলতি বছরের ১৪মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের তত্ত্বাবধানে সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে ভূমিকম্প এবং আগুন নেভানোর বিষয়ে সচেতনতামূলক মহড়া করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।
২০১৮ সালে সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব আশরাফুর রহমানের কক্ষে (৬২৯) এসির সুইচ বোর্ড থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
২০১৬ সালের ১ এপ্রিল সচিবালয়ের ৮ নম্বর ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় এসি থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় আগুনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ওই ভবনের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তার ডেস্ক ও রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। এ সময় কিছুটা হুড়োহুড়িও লক্ষ করা যায়। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয় ৫১১ নম্বর কক্ষে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে। সে আগুন ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
২০১৪ সালের র্মাচ মাসে সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের দোতলার লিফটের কাছাকাছি বিদ্যুতের সুইচ বক্সে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। সচিবালয়ের ভেতরে থাকা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
২০১২ সালে ২ ফেরুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চার তলায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে আগুন লাগলেও তা কয়েক মিনিটের মধ্যে নিভিয়ে ফেলা হয়। তেমন কোনো ক্ষযক্ষতি হয়নি। ২০১১ সালে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরের সামনে ইলেকট্রিক বক্সে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এস্টিংগুইশার) দিয়ে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলে। ২০১০ সালে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ তলায় (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে) বৈদ্যুতিক সুইচ রুম থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর তদন্ত করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।