পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্মরণকালের সর্বোচ্চ ৫০ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত প্রচন্ড তাপদাহের পর এখন ভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বর্ষণের মাত্রা বাড়ছে নেপালেও। অতিবর্ষণ হচ্ছে বেশিরভাগ বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতীয় অংশে। এতে করে বাংলাদেশের উজান অববাহিকায় ভারতের নদ-নদীতে অবিরাম পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে-বানে বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে কোনো কোনো অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গার নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা, পদ্মা নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। ভারী বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অববাহিকায় নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ও এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তাছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৭২ ঘণ্টায় সকল প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে ভারী বর্ষণের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পার্বত্য অববাহিকায় সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদাসহ এ অঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর চট্টগ্রামের হালদা নদী নারায়ণহাটে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল নদ-নদীসমূহের ৯৪টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৬টিতে পানি বৃদ্ধি এবং ৪০টিতে হ্রাস পাচ্ছিল। অপরিবর্তিত থাকে ৬টি পয়েন্টে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাউবো’র বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রেকর্ডকৃত উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের হার হচ্ছে, বান্দরবানে ২৩০ মিলিমিটার, লামায় ২০৯ মি.মি., নারায়ণহাটে ১৭১ মি.মি., রামগড়ে ১১২ মি.মি., পাঁচ পুকুরিয়ায় ৯৯ মি.মি., কুড়িগ্রামে ৯৮ মি.মি., জারিয়াজঞ্জাইলে ৯১ মি.মি., রাঙ্গামাটিতে ৮৫ মি.মি., দিনাজপুরে ৭৬ মি.মি.। অন্যদিকে বাংলাদেশের নদ-নদীর উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতেও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ বৃষ্টিপাত রেকর্ড অনুযায়ী, আসামের চেরাপুঞ্জীতে ১৫৮ মি.মি., দার্জিলিংয়ে ১৩৯ মি.মি.।
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে এবং নেপালসহ উজানভাগে ব্যাপক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে নামতে পারে এমনটি শঙ্কা পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের। গতকাল পর্যন্ত উজানের প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে উত্তর জনপদে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র এবং এরসাথে যুক্ত উপনদী, শাখা নদীসমূহের পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্য তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান নদ-নদীর পানি এখন পর্যন্ত বিপদসীমার নিচে রয়েছে। চলতি (আষাঢ়-শ্রাবণ) জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ মাসের মধ্যভাগ থেকে শেষভাগের দিকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশে মধ্যমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা এ মাসে
ভারতে অতিবৃষ্টি ও এ কারণে উজানের নেমে আসা ঢলে এবং অভ্যন্তরীণ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে চলতি জুলাই মাসে শেষের দুই সপ্তাহের মধ্যে মধ্যমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী এ বন্যা সংঘটিত হতে পারে উত্তর জনপদের ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী এলাকাগুলোতে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তথা চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অববাহিকায়। বাংলাদেশের এসব অঞ্চল ও সংলগ্ন ভারতীয় অংশে বর্তমানে ভারত থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে।
গতকাল (সোমবার) পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে এ পূর্বাভাস জানা গেছে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম-মেঘালয় অংশে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি (৫ দিন) এবং সম্ভাব্য তথ্যভিত্তিক মধ্যমেয়াদি (১০ দিন) পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের গতকাল থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তা আগামী ১১ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে যমুনা নদী জামালপুর-বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। পরবর্তীতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। যার প্রভাবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। পানিবৃদ্ধি সপ্তাহব্যাপী অব্যাহত থেকে পুনরায় চলতি মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে হ্রাস পাওয়া শুরু করতে পারে।
এদিকে মেঘনা বেসিনে পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা অঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারার ও কংস নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া ত্রিপুরা প্রদেশের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের কারণে মনু, খোয়াই, গোমতী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জ ও মৌলভিবাজার জেলায় স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
গঙ্গা বেসিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের বিহার ও নেপালে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে গঙ্গা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু পানি সমতল বিপদসীমার নিচে অবস্থানের ফলে বন্যা পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার তেমন কোন আশঙ্কা নেই। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধির ফলে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পূর্বাভাসে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বেসিন সম্পর্কে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য মৌসুমী নিম্নচাপের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি অঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতিবর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান নদীসমূহের (কর্ণফুলী, হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গু) পানির সমতল দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে করে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার কোথাও কোথাও স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।