পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উদার ধারণাকে ‘সেকেলে’ বলে ঘোষণা করেছেন। এটা শুনে আপনি অবাক হবেন না যে আমরা তার সাথে একমত নই। এটা এ জন্য নয় যে তিনি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, উদারনীতি হচ্ছে অভিবাসন, বহুসংস্কৃতিবাদ ও লিঙ্গ রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয়। এক হাস্যকর অনুকরণ, বরং এ জন্য যে তিনি ভুল লক্ষ্য ঠিক করেছেন। পাশ্চাত্যে যে ধারণাটি সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে সেটি হচ্ছে রক্ষণশীলতা। আর এটা যে ভীষণ সমস্যার বিষয় তা দেখার জন্য আপনার রক্ষণশীল হওয়ার দরকার নেই।
দুই দলীয় ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মত, ডানপন্থীরা ক্ষমতায়। কিন্তু তা শুধু সে সব মূল্যবোধকে পরিত্যাগ করে যা তার সংজ্ঞায়নে ব্যবহৃত হয়। বহুদলীয় দেশগুলোতে মধ্য-ডান দলগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে। যেমন জার্মানি ও স্পেন অথবা ভেঙেচুরে যাচ্ছে ফ্রান্স ও ইটালি। আর অন্যান্য স্থানে, যেমন হাঙ্গেরি, ক্ষুদ্রাকার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য নিয়ে ডানপন্থীরা রক্ষণশীলতার চেষ্টা ছাড়াই সোজাসুজি পপুলিজমের দিকে চলে গেছে।
রক্ষণশীলতা স্বভাবজাত বিষয়, তা দর্শন নয়। দার্শনিক মাইকেল ওকশট ভালো কথা বলেছেন, রক্ষণশীল হতে অপরিচিতের সাথে পরিচিত, সচেষ্টর সাথে নিশ্চেষ্ট, সত্যের সাথে রহস্য, বাস্তবের সাথে কল্পনা, সীমার সাথে অসীম, দূরের সাথে কাছের নৈকট্য প্রয়োজন। ধ্রুপদি উদার ধারণার মত রক্ষণশীলতাও জ্ঞানেরই অংশ।
উদারবাদীরা বলেন, যে ব্যক্তির স্বাধীনভাবে কাজ করা থেকে স্বতস্ফ‚র্তভাবে সামাজিক শৃঙ্খলার অভ্যুদয় ঘটে, কিন্তু রক্ষণশীলরা বিশ্বাস করেন যে সামাজিক শৃঙ্খলা প্রথমে আসে, সৃষ্টি করে স্বাধীনতার পরিস্থিতি। পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ ও তার গতি মন্থর করতে তা পরিবার, কর্তৃত্ব, গির্জা, ঐতিহ্য ও স্থানীয় সমিতির প্রতি দৃষ্টিপাত করে। আপনি বিপজ্জনক মনে করলে প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করে দিতে পারেন। ঠিক এ ধরনের ধ্বংস রক্ষণশীলদের মধ্যেও সংঘটিত হচ্ছে এবং তা আসছে ডানপন্থীদের কাছ থেকে।
নতুন ডানপন্থীরা রক্ষণশীলতার পরিবর্তন নয়, বরং তার প্রত্যাখ্যান। দখলকারীরা ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট। তারা হতাশাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল। তারা বিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করে এবং তা দেখে যাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যাক হত্যাকান্ড বলেছেন।
বিবেচনা করুন যে তারা কিভাবে একের পর এক রক্ষণশীল ঐতিহ্য ধ্বংস করছে। রক্ষণশীলতা বাস্তবানুগ বিষয়। কিন্তু নতুন ডান হচ্ছে উদ্দীপনাপূর্ণ, ভাবাদর্শগত ও বীরত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়া খরা ও রিফ সম্বলিত সমুদ্রের সমস্যা কবলিত, কিন্তু সেখানে ডানরা এমন এক দলের ব্যানারে বিজয়ী হয়েছে যার নেতা পবিত্র বস্তুর ন্যায় কয়লার একটি ডেলা হাতে পার্লামেন্টে বক্তৃতা করেন।
ইটালিতে নর্দার্ন লীগের নেতা ম্যাট্টিও সালভিনি ভ্যাক্সার-বিরোধী আন্দোলন জোরদার করেছেন। ট্রাম্পের জন্য ক্ষোভ জাগিয়ে তোলা ও ও উপজাতীয় আনুগত্য পাওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ঘটনা ছিল তার ইমেজ বা স্লোগান প্রচারের উপকরণ।
কনজার্ভেটিভরা পরিবর্তনের ব্যাপারে সতর্ক। কিন্তু ডানরা এখন ভাসা ভাসা ভাবে বিপ্লবের কথা ভাবছে। জার্মানির জন্য বিকল্প হচ্ছে ইউরোর সদস্যপদের জন্য গণভোটের ভান করা। ট্রাম্প যদি তার ন্যাটো ত্যাগ করার হুমকি বাস্তায়ন করতেন তবে তাতে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেত। ব্রেক্সিট চুক্তি না হলে তা হবে এক অজানার পথে যাত্রা। কিন্তু টোরিরা এর জন্য পাগলপ্রায় যদি তাতে স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাথে ইউনিয়নকে ধ্বংস করে, তবুও।
রক্ষণশীলরা চরিত্রে বিশ্বাসী, কারণ যুক্তির মত বিচারও রাজনীতির বিষয়। তারা ক্যারিশমা ও পার্সোনালিটি কাল্টস নিয়েও সন্দিহান। আমেরিকাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ১৬ জন নারীকে যৌন নির্যাতনের জন্য অভিযুক্ত হওয়া সত্তে¡ও বহু রিপাবলিকান তাকে সমর্থন করেন।
ব্রাজিলিয়ানরা জেয়ার বলসোনারোকে নির্বাচিত করেছে যিনি সামরিক শাসনের দিনগুলোর কথা ভালোবাসার সাথে স্মরণ করেন। ক্যারিশম্যাটিক বরিস জনসন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় যদিও এমপির তাকে বিশ্বাস করেন না। কারণ তাকে ‘হেইনকেন টোরি’ বলে মনে করা হয় যিনি ভালুকের মত অংশগুলো তাজা করেন যেখানে অন্য কনজার্ভেটিভরা পৌঁছতে পারেন না।
কনজার্ভেটিভরা ব্যবসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অর্থনীতির বুদ্ধিমান চালক, কারণ সমৃদ্ধিই সবকিছুর গোড়া। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান নিজেকে একজন কম আয়ের অর্থনৈতিক রক্ষণশীল হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু আইনের শাসনকে অবজ্ঞা করেন যার উপর ব্যবসা নির্ভরশীল। ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধের উদ্গাতা।
৬০ শতাংশেরও বেশি টোরি সদস্য ব্রেক্সিট নিশ্চিত করতে অর্থনীতির গুরুতর ক্ষতি সাধনে ইচ্ছুক। ইটালিতে লীগ সরকারি কাগজ অবহেলার সাথে ইস্যু করে বাজারকে অস্বস্তির মুখে ফেলেছে যা ইউরোর সাথে সমান্তরাল মুদ্রা হিসেবে কাজ করবে।
পোলান্ডে কল্যাণ সুবিধা হিসেবে আইন ও বিচার ছলকে উঠেছে। ফ্রান্সে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় রিপাবলিকান পার্টি বিচক্ষণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার চেয়ে ইউরোপের ‘ইহুদি-খ্রিস্টান শিকড়’ সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সর্বশেষ ডানরা তাদের মূল বিষয়েরই পরিবর্তন করছে। হাঙ্গেরি ও পোলান্ডে ডানরা রক্ত ও মাটি জাতীয়তাবাদে উল্লসিত, যা বর্জিত ও বৈষম্যমূলক। স্পেনের নতুন শক্তি ভক্স ‘রিকনকুইস্তা’র (স্পেন থেকে মুসলিম বিতারণ) দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। এক ক্রুদ্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল জাতীয়তাবাদ সন্দেহ, ঘৃণা ও বিভক্তির উন্মেষ ঘটিয়েছে। এটা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির অ্যান্টিথিসিস যা জাতি, গির্জা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্তি জনসাধারণকে একত্র করতে এবং অভিন্ন মঙ্গলের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে।
রক্ষণশীলতা কয়েকটি কারণে উগ্রপন্থা অবলম্বন করেছে। একটি হচ্ছে এডমন্ড বার্ক কথিত ‘লিটল প্লাটুন’- এর পতন যা ধর্ম, ইউনয়ন ও পরিবার নির্ভর ছিল। আরেকটি হচ্ছে আর্থিক সংকট, কৃচ্ছ্রতা এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে ডান ও বাম উভয় পক্ষের সম্মানহানি।
নগরগুলোর বাইরে জনগণ লোভী, স্বার্থ পরায়ণ নাগরিক সুবিধাভোগী কর্তৃক নিজেদের মনে করে। কেউ কেউ মনে করেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পররাষ্ট্র নীতিবাজ, নিরপেক্ষরা এবং সাংস্কৃতিক ও ব্যবসাপন্থী রক্ষণশীলদের ঐক্যবদ্ধ করে রাখা আঠাকে অকেজো করে দিয়েছে। এসব প্রবণতার কোনেটাই পরিবর্তন করা সহজ নয়।
সঠিক উপাদান
এর অর্থ এই নয় যে সবকিছই নতুন ডানপন্থী দলগুলোর পথে চলে যাচ্ছে। অন্তত ব্রিটেন ও আমেরিকার জনসংখ্যা তাদের বিরুদ্ধে। তাদের ভোটদাতারা সাদা ও অপেক্ষাকৃত বয়স্ক। বিশ্বিদ্যালয়গুলো ডানপন্থী মুক্ত এলাকা। পিউ-এর গত বছরের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৯ শতাংশ আমেরিকান মিলেনিয়াল ভোটার ডেমোক্র্যাট বা ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকে আছে।
পক্ষান্তরে রিপাবলিকান ভোটার হচ্ছে ৬২ শতাংশ। ১৯২৮-১৯৪৫এর মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ‘নীরব প্রজন্মে’র মধ্যে ডেমোক্র্যাট সমর্থকের সংখ্যা ৪৩ শতাংশ, আর রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫২ শতাংশ। এটা পরিষ্কার নয় যে তরুণ প্রজন্ম পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডানদের দিকে যাবে কিনা।
নতুন ডানপন্থীরা ক্ল্যাসিক্যাল উদারপন্থীদের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন। ঝুঁকি হচ্ছে, ডান ও বামরা রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুললে ও একে অপরকে উগ্রপন্থীদের দিকে অগ্রসর হওয়ার উস্কানি দিলে মধ্যপন্থীরা সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। ভোটারদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না। ট্রাম্পের বিরোধিতায় ডেমোক্র্যাটরা বামদের দিকে আরো এগিয়েছে।
ব্রিটেনের মানুষ দুই বড় দলের মধ্যে লেবার পার্টির শক্ত নেতা জেরেমি করবিন এবং বরিস জনসনের নেতৃত্বে উগ্রপন্থী টোরি দলের কাউকে বেছে নিতে হবে। যদি মধ্যপন্থীদের কেউ ভোট দেয়, যেমন ফ্রান্সে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, একদল বারবারই ত্রুটি দ্বারা জয়লাভ করবে যা দীর্ঘ মেয়াদে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
রক্ষণশীলরা সর্বোচ্চ তাদের প্রভাব অব্যাহত রাখতে পারে। রক্ষণশীলরা যুক্তির পক্ষপাতী ও বিচক্ষণ, তারা যোগ্যতার মূল্য দেয়, তাদের তাড়াহুড়ো নেই। এ সব দিন চলে গেছে। আজকের ডানরা আগুনের মধ্যে আছে ও তারা বিপজ্জনক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।