পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুড়িল-রামপুরা সড়কের অন্যরকম দৃশ্য। রিকশা না থাকায় স্বাভাবিক গতিতে চলছে গাড়ি। যানজট নেই। মোড়গুলোতে এসে গাড়িগুলোর গতি কমছে। ডানে-বামে মোড় নিয়ে আবার স্বাভাবিক গতিতে চলে যাচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট মূল সড়কে গতকাল রোববার সকাল থেকে রিকশা চলাচল করতে দেয়া হয়নি। এজন্য মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন ছিল। মূল সড়কে চলতে না পেরে ভেতরের গলিগুলোতে ভিড় করে ছিল রিকশাচালকরা। কেউ কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মূল সড়কে প্রবেশ করলেও যাত্রী নিয়ে বেশি দূর যেতে পারেনি। একই চিত্র দেখা গেছে গাবতলী-আজিপুর সড়কেও। সেখানেও সকাল থেকে রিকশা চলতে দেয়নি পুলিশ। এতে করে চিরাচরিত যানজটের এই সড়কেও দেখা গেছে ভিন্নচিত্র।
গতকাল রোববার দুপুরে প্রগতি সরণীর নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রিকশাবিহীন রাজপথে ছিল না কোনো যানজট। মোড়গুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। স্বাভাবিক গতিতে চলেছে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক যান। তবে ভেতরের গলিগুলো থেকে যাত্রী নিয়ে প্রধান সড়কে যাত্রী নামাতে দেখা গেছে রিকশা চালকদের।
রিকশা না থাকায় সড়কে চলাচলকারি যাত্রীদের প্রধান বাহন ছিল গণপরিবহন। অপ্রতুল বাস ও মিনিবাসের কারণে যাত্রীদের কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছে। প্রতিটি লোকাল বাসেও দেখা গেছে অতিরিক্ত ভিড়। গণপরিবহনের জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। তারপরেও রাজধানীর প্রধান তিন সড়কে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে বেশিরভাগ মানুষ খুশি। রামপুরার বাসিন্দা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর প্রকৌশলী সৈকত বলেন, এতোদিন রামপুরা থেকে মতিঝিল যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লাগতো। আজ মাত্র ২০ মিনিটে মতিঝিল গিয়ে কাজ শেষ করে আবার আধা ঘণ্টায় গুলশানে নিজ অফিসে এসেছি। খুবই ভালো ছিল ট্রাফিক ব্যবস্থা। তিনি বলেন, বিশ্বের কোনো দেশের রাজধানীতে রিকশার মতো ধীরগতির যানবাহন নেই। সময়ের প্রয়োজনেই ঢাকাকে রিকশামুক্ত করা উচিত।
বাড্ডা এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ পর্যন্ত সড়কে রিকশার নৈরাজ্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। রিকশার ভিড়ে কোনো যানবাহনই ঠিকমতো চলতে পারতো না। আজ থেকে রিকশা বন্ধ হওয়ায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। যাত্রীরা মাত্র আধা ঘণ্টায় মতিঝিল-গুলিস্তান যেতে পারছে।
তবে বেশ কয়েকজন যাত্রী প্রয়োজনীয় সময়ে বাস না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, রিকশা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগি। কিন্তু তার আগে পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। সকালে বাসে উঠতে না পেরে অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে রওনা করেছে।
রামপুরা বাজারের বাসিন্দা মুনির হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা প্রয়োজনে হাঁটতে চাই। কিন্তু ফুটপাতে সে পরিবেশ নেই। রামপুরা এলাকার ফুটপাতের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কোথাও কোথাও এখনও গর্ত, ভাঙাচোরা। কোথাও বা ফুটপাত দখল হয়ে আছে। ফুটপাত নিয়ে আরও বেশ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাজধানীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করার দাবি জানান তারা।
গত ৩ জুলাই রাজধানীর নির্দিষ্ট তিনটি মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। এগুলো হলো, গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর, সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা হয়ে খিলগাঁও-সায়েদাবাদ পর্যন্ত। রিকশার সাথে অন্যান্য অবৈধ ও অননুমোদিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ডিটিসিএ-এর (ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি) এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন কুড়িল থেকে মালিবাগ এবং গাবতলী থেকে আসাদগেট পর্যন্ত প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল না করার জন্য রিকশা মালিক, চালকদের প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে জানানো হয়, এ বিষয়ে তদারকি করতে মনিটরিং টিম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন যেসব সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে সেসব সড়কে মনিটরিং করার জন্য দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত ছিলেন।
আলাপকালে কয়েকজন রিকশাচালক জানান, প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের জানা ছিল না। সেজন্য সকালে মূল সড়কে উঠে পুলিশের বাধায় আবার গলির ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। গলিপথ দিয়ে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে দেরি হয়েছে বেশি। যদিও ভাড়া বেশি পাননি তারা। মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনের রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নুরুন্নবী বলেন,
সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকাল থেকে রামপুরা সড়কে যাতে রিকশা না চলাচল করতে পারে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যেই দুএকটা করে রিকশা আসছে। সেগুলোকে আমরা গলিতে ফিরিয়ে দিচ্ছি। তিনি জানান, অনেক রিকশাচালকই সিটি কর্পোরেশনের এই সিদ্ধান্তের কথা জানে না। কয়েকদিন গেলে সব রিকশাচালক এই সিদ্ধান্তের কথা জানলে মূল সড়কে আর কোনো রিকশাচালক চলবে না।
গাবতলী-আজিমপুর সড়ক
এদিকে, গাবতলী-আজিমপুর সড়কেও গতকাল সকাল থেকে মূল সড়কে কোনো রিকশা চলাচল করতে দেয়নি পুলিশ। এতে করে চিরাচরিত যানজটের এই সড়কটিতেও ছিল ভিন্নচিত্র। মিরপুরের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, মিরপুর থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত এতো অল্প সময়ে কিভাবে এসেছি টেরই পাইনি। ঈদের রাজধানীর সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, ঈদের সময় রাস্তাঘাট যেমন ফাঁকা আজ সেরকমই মনে হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি বহু অংশে কমে গেল।
ঢাকা কলেজের ছাত্র আবির হোসেন বলেন, যানজট না থাকলে গাবতলী থেকে তার কলেজ আসতে সময় লাগে আধ ঘণ্টার মতো। আর যানজট থাকলে এক ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে আজকের দিনটা একটু অন্যরকম। গাবতলী থেকে কলেজ এসেছেন মাত্র ২০মিনিটে। আবির বলেন, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এত কম সময়ে কলেজ আসা সম্ভব। কারণ এর আগে এমনটি ভুলেও হয়নি।
সায়েন্স ল্যাব থেকে একটু সামনে এগিয়ে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ রহমত আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, রিকশা বন্ধে তিনি খুশি। কারণ এই রাস্তায় রিকশা সামলানো ট্রাফিক পুলিশের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এদিকে, তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই শুরু হয়েছে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। এ নিয়ে শনিবার বিক্ষোভও করেছে রিকশা শ্রমিকরা। যাত্রীরাও প্রশ্ন তুলেছেন, বিকল্প যানবাহন না থাকলে তারা কীভাবে চলবেন। আর এটা নিয়ে সবচেয়ে আলোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য এসেছে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রিকশা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা মহানগরী থেকে অবৈধ, অনিবন্ধিত রিকশা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেয়া হোক। এতে আমাদের আপত্তি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলে দরকার হলে আমরাও সহযোগিতা করব। তিনি বলেন, সকল সড়কে বৈধ রিকশা চলাচল করার জন্য বাইলেন না করা পর্যন্ত বৈধ রিকশাগুলো চলাচল করতে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।