পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যানজটে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী শহর ঢাকা। এতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। গতকাল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রার কারণে এমন তিব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন বেসরকারি অফিসগামী মানুষ রাস্তায় নেইমে পড়েছে যানজটের কবলে। বিশেষ করে বিকালে ঘরে ফেরা মানুষেরা যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে। যানজটের কারণে সময়মত পাওয়া যায়নি গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। মাত্র দেড়-দুই কিলোমিটার পথ যেতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, জাতীয় প্রেসক্লাব, যাত্রাবাড়ি, শাহবাগ, ফার্মগেট, মহাখালি, অভিজাত এলাকা উত্তরা, গুলশান, বানানী, বারিধারা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার থেকে বাবুবাজার, নয়াবাজার, নবাবপুর রোডসহ সারা শহরই যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। ফুটপাতেও মানুষে ঠাসাঠাসি অবস্থা। অগত্যা যাত্রিরা হেঁটেই রওনা দেন গন্তব্যের উদ্যেশে। রায়সাহেব বাজার জজকোর্টের আইনজীবী রুহুল আমিন জানান, রায়সাহেব বাজার কোর্ট থেকে গুলিস্তানে এসে দেখি যানজটের অবস্থা ভয়ানক। কোনো দিকেই কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। মাথার ওপরে চাঁদি ফাটানো রোদের তিব্রতা। দুঃসহ গরমে জীবন অতিষ্ঠ। যেতে হবে অনেক দূর। মহাখালী পর্যন্ত রিকশায় যাওযারও উপায় নেই। কাজেই পায়ের ওপর ভরসা করেই গুলিস্তান থেকে চলা শুরু করেন তিনি। যদি জাতীয় প্রেসক্লাব বা কাকরাইলের ওদিকে কোনো বাহন মেলে, সেই আশায়। কিন্তু যতই এগিয়েছেন, কোনো হেরফের চোখে পড়েনি। পুরো শহরটাই যেন অচল হয়ে আছে। এ কঠিন দুর্ভোগের কারণ সম্পর্কে এনামুল হক কিছুই জানতেন না। পরে লোকমুখে শুনেছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রার কারণে এই ভয়াবহ যানজট।
বিরক্তির সঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো কথা হলো! যার যখন ইচ্ছা পথ আটকে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে এমন অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ঠেলে দেবে! আর কর্তৃপক্ষই বা কী করছে? মনে হয় কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেখারও কেউ নেই।
রুহুল আমিনের মতো লাখ লাখ মানুষ বাসার বাইরে গিয়ে গতকাল সকাল থেকেই যানজটের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে। স্কুল-কলেজ ছুটির পর শিশু-কিশোরদের অমানবিক দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলো সাইরেন বাজিয়েও হাসপাতালে পৌঁছেছে কচ্ছপের গতিতে। রাজধানীতে যানজট নতুন বিষয় নয়। পথে নেমে ভোগান্তি নগরবাসীর নিয়তির লিখন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার তা যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়।
রথযাত্রার কারণে তীব্র যানজটে মহানগর অচল হয়ে পড়ে। শান্তিনগর মোড় থেকে মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত দুর্বিষহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে গুলশান, বনানী, মহাখালীতেও। ওদিকে মিরপুর রোডে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ায় পুরো মিরপুর এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে গতকাল দুর্ভোগের শহর হয়ে ওঠে ঢাকা।
রথযাত্রার কারণে গতকাল রিকশাও চলাচল করতে পারেনি। অনেকেই বাধ্য হয়েছে প্রখর রোদে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে। ফলে সময় মেনে গন্তব্যে পৌঁছার মতো সৌভাগ্যবানের সংখ্যা গতকাল ছিল না বললেই চলে। একে তো ফুটপাতে হরেক রকমের পণ্যের পসরা, তার ওপর মানুষের ঠাসাঠাসি। এতে হাঁটাচলাও ছিল কষ্টকর। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে যাওয়া এবং ছুটির পর বাড়ি ফিরতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের অভিভাবকদের নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনে আটকে ছিলেন নয়াপল্টনের সাবিনা হক। ছেলে আনন আশরাফ পড়ে ধানমন্ডির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। স্কুল ছুটি হয়েছে দুপুর দেড়টয়। কচ্ছপের মতো একটু একটু করে তিনটায় পান্থপথে এসে গাড়ি একেবারে অনড়। চারটায় ছেলে কোচিংয়ে যায়। নির্ঘাত মিস করবে। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সবাই বড় বড় বক্তৃতা দেয়, উন্নয়নের গল্প শোনায়। রাজধানীর যানজটের মতো জ্বলন্ত সমস্যা কারও চোখে পড়ে না। রাস্তায় বের হলে নিরাপত্তা নেই। যখন-তখন গাড়ি ভেঙে দেয়, আগুন দেয়। কারও কিছু হয় না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে কারও কি কোনো ভাবনা আছে? পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, কেন এমন দুর্বিষহ যানজটে শহর অচল হলো, অনেকেই তা জানতেন না। রাজধানীর মতো একটি ব্যস্ত শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে থাকবে, তা কেউ মানতে পারেননি। একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চালান জহুরুল ইসলাম। ইন্টারকন্টিন্যান্টাল হোটেলের মোড়ে তিনি আটকে ছিলেন বেলা ৩টার দিকে। কাঁঠালবাগান থেকে রওনা দিয়েছেন একটার দিকে। প্রধান সড়কে উঠতে পারেননি। সেন্ট্রাল রোড-ভ‚তের গলি-হাতিরপুল-পরিবাগ হয়ে ইন্টারকন্টিন্যান্টাল মোড়ে আসতে লেগেছে পাক্কা দুই ঘণ্টা। যাবেন মালিবাগ। কখন যেতে পারবেন, তা জানেন না। কন, এমুন হইলে কি চলাফেরা করা যায়? না, আসলেই যায় না। সে কথা মর্মে মর্মে টের পেয়েছেন ভুক্তভোগী নগরবাসী। কিন্তু যাঁরা এর প্রতিকার করতে পারেন, তাঁরাই তো ছিলেন নির্বিকার।
প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চিরচেনা ঘটনা। যানজট নিরসনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অতীতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকছেন মানুষ। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। হাঁফিয়ে উঠছে নগারবাসী। নারী, শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তিই সবচেয়ে বেশি। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারছেন না কর্মজীবীরা। শিক্ষার্থীরা হিমশিম খাচ্ছেন ক্লাসে পৌঁছতে। মানুষের এ দুর্ভোগ যেন সমাধানের নয়। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।