Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধান সংগ্রহে ভেল্কিবাজি

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গোবিন্দগঞ্জে ধান সংগ্রহ পদ্ধতিতে চলছে ভেল্কিবাজী। চলতি বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণে ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হলেও কৃষক পর্যায়ে ৩টি সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ২ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন। অপরদিকে মিল চাতাল ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহের এ পর্যন্ত বরাদ্দ মিলেছে ১১ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন। বোরো ধান সংগ্রহে বরাদ্দ অপ্রতুল হলেও গত দেড় মাসে ৩টি সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১৩৩ মেট্রিক টন। এ অবস্থায় ক্ষতির শিকার হচ্ছে সাধারণ কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ৩১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। জুলাই মাস পর্যন্ত সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে সংগ্রহের (ক্রয়) বরাদ্দ মিলেছে ধান-১ম পর্যায়ে ৯২০ মেট্রিক টন, ২য় পর্যায়ে ১ হাজার ৫৩৩ মেট্রিক টন, মোট ধান সংগ্রহের বরাদ্দ ২ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন। আর মিল-চাতাল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের (ক্রয়) বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সিদ্ধ চাল ১০ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন ও আতব চাউল ১ হাজার ৪২ মেট্রিক টন। তবে মাসের শেষ পর্র্যন্ত কি পরিমাণ ধান-চাউল সংগ্রহ করা হয়েছে তার কোন হিসেব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল আহাদ আলী।

খাদ্য অধিদপ্তরের কামদিয়া খাদ্য গুদামের ওসি এলএসডি আবু সাঈদ জানান, কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহের জন্য তার আওতাধীন খাদ্য গুদামে ৩৫৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ পেয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ মাত্র ৮২ মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাউল বরাদ্দ ২ হাজার মেট্রিক টন, সংগ্রহ ১ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন এবং আতব চাউল বরাদ্দ ১শ’ মেট্রিক টন। মহিমাগঞ্জ খাদ্য গুদামের ওসি এলএসডি আনজুমানারা জানান, ধান সংগ্রহের জন্য তার আওতাধীন খাদ্য গুদামে ১৪৮ মেট্রিক টন বরাদ্দ পেয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ মাত্র ৫৪ মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাউল বরাদ্দ ৫ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ২ হাজার ৫১১ মেট্রিক টন এবং আতব চাউল বরাদ্দ ৫৮৩ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ১২৯ মেট্রিক টন। উপজেলা সদরের গোলাপবাগ খাদ্য গুদামের ওসি এলএসডি শফিকুল ইসলাম জানান, ধান সংগ্রহের জন্য তার আওতাধীন খাদ্য গুদামে ৩৮১ মেট্রিক টন বরাদ্দ পেয়েছেন এবং এ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ মাত্র ৩৭ মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাউল বরাদ্দ ৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ২হাজার ৩শ’ মেট্রিক টন এবং আতব চাউল বরাদ্দ ৩৫৪ মেট্রিক টন, সংগ্রহ ৪২ মেট্রিক টন। তবে হিসেবে দেখা যায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ধান সংগ্রহের চাইতে চাউল সংগ্রহে বেশী উৎসাহী।

এদিকে উৎপাদনের চেয়ে সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক কম হওয়ায় এবং সংগ্রহ পদ্ধতিতে ভেল্কিবাজীর কারণে প্রকৃত কৃষকরা হতাশ। সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ের জন্য উপজেলা অভ্যন্তরীণ ধান ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি খাদ্য গুদামে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যে যে লটারী করা হয়েছে সেখানেই হয়েছে ভেল্কিবাজী। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে, লটারীতে অংশ নেয়ার জন্য কৃষকদের যে কৃষিকার্ড তৈরী করা হয়েছে সেটিও ক্রটিপূর্ণ। নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি নেই এমন ব্যক্তিকেও কৃষিকার্ড এর তালিকাভ‚ক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ ইউপিতে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্ডধারীর মধ্যে লটারী হওয়ায় প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছে। যার কারনে ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন থাকার পরেও দেড় মাসেও ২ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য গুদাম গুলো। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন ভেল্কিবাজীর তালিকা বাতিল করে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে এমনটাই তাদের চাওয়া।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ