পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে ধারাবাহিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৯-২০ নতুন অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। এ বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে আজ সোমবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে। একই সঙ্গে আজ থেকে বাস্তবায়ন করা হবে নতুন ভ্যাট আইন।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০১৯ পাসের মাধ্যমে এ বাজেট পাস করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শ্লোগান সম্বলিত এ বাজেট পেশ করেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরের প্রথম বাজেট এটি। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে আগামী অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে তা পাস হয়।
প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশের সমান। এতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।
নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।
গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মত।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে এক লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে এক লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে চার হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান।
অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির পাঁচ শতাংশের সমান। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।
এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশ করার পর সেই বাজেটের ওপর ২৫৫ জন সংসদ সদস্য মোট ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট আলোচনা করেছেন। যা গত শনিবার শেষ হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ১৪ জন সংসদ সদস্য তিন ঘণ্টা ৪৪ মিনিট আলোচনা করেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।
নির্দিষ্টকরণ বিল পাস : আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮৩ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।
এর মধ্যে, সংসদ সদস্যদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমান চার লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় ছয় লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতনও অন্তর্ভুক্ত।
মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব : আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপির সদ সদস্যরা ৪৮৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যেযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দাবী ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।
বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ বাজেট শুধু একটি বছরের জন্য নয়। বাজেটটির ফাউন্ডেশন এ বছর। কিন্ত বাজেটের সুফল ২০৪১ সাল পর্যন্ত অর্জন করতে পারব। সেভাবে আমরা বাজেটটি প্রণয়ন করেছি।
বিদায়ী অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।
এবারের বাজেটের মূল বিষয় হচ্ছে ২০১২ সালে প্রণীত ভ্যাট আইন কার্যকর করা। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিমার্জনের পর ভ্যাট আইন কার্যকরের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। আজ সোমবার (১ জুলাই) থেকে নতুন বাজেট কার্যকর শুরু হবে। এবং আজ থেকেই শুরু হবে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন। এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। এর আগে গত শনিবার বড় ধরনের কোনো সংশোধনী ছাড়াই অর্থবিল-২০১৯ পাস হয়। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে, তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ইতিহাসের বড় বাজেট পাস বাজেট পাসের পর গতকাল সন্ধ্যায় বাজেট-উত্তর নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তপা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
৭ জুলাই পর্যন্ত সংসদ মুলতবি
একাদশ জাতীয় সংসদের চলমান বাজেট অধিবেশন আগামী রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাসের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মুলতবির ঘোষণা করেন।
বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের বাজেট অধিবেশন গত ১১ জুন শুরু হয়। গত ১৩ জুন বাজেট উপস্থানের পর মোট ২৫৫ সংসদ সদস্য ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট আলোচনা করেন। বাজেট অধিবেশন আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। তবে প্রয়োজনবোধে স্পিকার এ সময় বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।
গত শনিবার বড় ধরনের কোনো সংশোধনী ছাড়াই অর্থবিল- ২০১৯ পাস হয়েছে। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এটি চলমান একাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশন। এর আগে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়েছিল গত ২৪ এপ্রিল। মাত্র ৫ কার্যদিবস চলা অধিবেশন শেষ হয় ৩০ এপ্রিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।