Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পুঁজিবাজারে তারল্য সংকটের কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের নগদ লভ্যাংশ প্রদান

নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ৮:০০ পিএম

পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছর ধরেই চলছে মন্দাভাব, লেনদেনও হচ্ছে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী গত দুই মাসে ডিএসইর গড় লেনদেন ৪০৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বাজারের পরিধির তুলনায় এ লেনদেন অন্তত এক হাজার কোটি টাকা হওয়া দরকার। পুঁজিবাজারে টাকা থাকছে না বলেই এ তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো যদি তাদের লভ্যাংশ হিসেবে নগদ লভ্যাংশ দিয়ে দেয় তাহলে এ টাকাও বাজার থেকে বের হয়ে অন্য খাতে চলে যাবে, যা চলমান তারল্য সংকটকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তারল্য ধরে রাখার স্বার্থে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর স্টক ডিভিডেন্ড বা রিটার্ন অন ইউনিটকে (আরআইইউ) উৎসাহিত করতে হবে।

সূত্র মতে, মিউচুয়াল ফান্ড হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন উত্তোলন করে ফান্ড ম্যানেজার একটি ফান্ড গঠন করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন। আর ওই বিনিয়োগের মুনাফা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান করেন। এক্ষেত্রে লভ্যাংশ নগদেও দেওয়া যায়। আবার সমপরিমাণ টাকা অনুযায়ী ওই ফান্ডের ইউনিটও দেওয়া যায়, যা পুনরায় বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে ফান্ড ম্যানেজার। এ লভ্যাংশকে আরআইইউ বলে।

জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় ৩৮টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে যেগুলোর পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৫ হাজার ৫৩৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ফান্ডগুলো বছরে গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। তাতে লভ্যাংশের পরিমাণ হয় প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা। ফান্ডগুলো যদি এ টাকা নগদ লভ্যাংশ হিসেবে দিয়ে দেয় তাহলে তা পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে ব্যাংকিং খাত বা সঞ্চয়পত্র সহ অন্যান্য সঞ্চয় মাধ্যমে চলে যাবে। আর যদি এ টাকা আরআইইউ দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের কাছে রেখে দেয় তাতে টাকাটা পুঁজিবাজারেই থাকবে, তারল্যও বাড়বে।

বাজারে তারল্য ধরে রাখার যুক্তিকে সামনে রেখেই ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মিউচুয়াল ফান্ডলোকে আরআইইউ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। তবে আগামীতে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংশোধনের কথা চলছে। তাতে এ সুযোগ না দেওয়ার জন্য অনেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সুপারিশ করছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা এ ধরনের সুপারিশের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অনেকেই না বুঝে আরআইইউকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। বরং পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোনো ফান্ড ম্যানেজোর আরআইইউ দিতে চাইলে তা স্বাভাবিক এবং আইনসিদ্ধ।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আরআইইউ প্রদান মন্দা বাজারের সহায়ক। কারণ একটি ফান্ড যদি নগদ অর্থ বিনিয়োগকারীদেরকে প্রদান করতে চায় তাহলে ফান্ড ম্যানেজারকে তার বিনিয়োগকৃত শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়, এতে বাজারে বিক্রয়ের চাপ সৃষ্টি হয়। আর যদি আরআইইউ প্রদান করে সেক্ষেত্রে তাকে শেয়ার বিক্রি করতে হয় না, যা বাজারে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করবে না। মিউচুয়াল ফান্ডকে বোনাস ইউনিট না দিয়ে নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে বলে কোন কোন পক্ষ দাবি জানালেও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে মন্দা বাজারে নগদ লভ্যাংশ দিতে বাধ্য করা হলে শেয়ার বাজারে পরিস্থিতি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আরআইইউ দীর্ঘমেয়াদি ভালো রিটার্ন প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কারণ আরআইইউ প্রদানের মাধ্যমে ফান্ডের মেয়াদান্তে নেট অ্যাসেট ভ্যালু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যা পরবর্তীতে ভালো রিটার্ন দিতে ভূমিকা রাখে। তাই দীর্ঘমেয়াদি মুনাফার জন্য আরআইইউ অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিউচুয়াল ফান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ