Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় ময়নাতদন্তে বিড়ম্বনা জনসাধারণের ভোগান্তি চরমে

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

 কুমিল্লার একমাত্র জেনারেল হাসপাতাল ছাড়া জেলার অন্য উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশ মামলাভুক্ত লাশ নিয়ে স্বজনদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক সময় ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন কাফন করতে গিয়ে লাশ নিয়ে দু’তিন দিন টানাহেঁচড়া করতে হয়। এতে স্বজনদের, বিশেষ করে দরিদ্র প্রকৃতির স্বজনদের পুলিশসহ সবকিছু ম্যানেজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য বিভাগসহ জেলাবাসীর দাবি থাকলেও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া মহিলা লাশের ক্ষেত্রে মহিলা ডাক্তার দিয়ে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থার দাবিও বাস্তবায়িত হয়নি।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে ময়নাতদন্তের জন্য একটি লাশ কাটা ঘর নির্মাণ করা হয় এবং সেখানে হাসপাতালের একটি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে পুলিশ মামলাভুক্ত লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। যার কারণে কুমিল্ল­ার ১৭টি উপজেলার লোকজনকে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লার একমাত্র সদর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ছুটে আসতে হয়। সাধারণত কোন মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মনে করা হলে পুলিশ প্রথমে সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর হতে ক্রম মর্যাদাসম্পন্ন এমন একজনকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। যিনি লাশ সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করে লাশ মর্গে পাঠিয়ে দেন। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন থেকে লাশ মর্গে আনার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশও বরাদ্দ নেই। নেই পর্যাপ্ত যানবাহন। ফলে লাশের ওয়ারিশদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে কুমিল্লা জেলা সদরের মর্গে লাশ আনতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কুমিল্লার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতে এখন পর্যন্ত কোনো ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা না থাকায় একমাত্র কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে পুলিশ মামলাভুক্ত যেমন সড়ক দুর্ঘটনা, খুন, আত্মহত্যা এ জাতীয় মৃত্যুর ঘটনায় লাশের ময়নাতদন্ত করতে হয়। দূর-দূরান্ত থেকে নিহতের আত্মীয়স্বজনকে পুলিশের কথামতো কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ধরনা দিয়ে বসে থাকতে হয়।

সূত্রমতে, দেশের অধিকাংশ জেলার মতো কুমিল্লা জেলা সদর থেকে থানাগুলোর শেষ প্রান্তের গ্রাম ৫০/৬০ কি.মি. দূরে। সেখানে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু, অপমৃত্যু, হত্যা, দুর্ঘটনাসহ যে কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য দÐবিধির ১৭৪ ধারা মতে সেই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লাশ ভ্যান, বেবিটেক্সি, নৌকা বা অন্য কোনো যানবাহনে প্রথমে থানায় আনতে হয়। এরপর পুলিশের সময় সুযোগ বুঝে উপযুক্ত তেলখরচ বা গাড়ি ভাড়াসহ বকশিশ হাতে ধরিয়ে দেয়ার পর রওনা দিতে হয় জেলা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। দূরত্ব যতই হোক অফিস সময়ে বিকাল ৫টার মধ্যে লাশ হাসপাতালের মর্গে পৌঁছতে না পারলে পর দিন অফিস সময়ের জন্য আবার অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় গ্রাম থেকে থানা, থানা থেকে জেলা সদরে হাসপাতাল মর্গে এবং অফিস সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করতে দু’দিনও লেগে যায়। এসব কারণে আত্মীয়স্বজনদের দুর্ভোগের আর সীমা থাকে না।

কয়েকজন ভ‚ক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাশ থানায় আনার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতে তা থানার বাহিরে ফেলে রেখে, এর পরদিন তা মর্গে পাঠানো হয়ে থাকে। বিভিন্ন উপজেলা সদরে মর্গ না থাকার কারণে বহু লাশ প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা হতে জেলা সদরে আনতে হয়। জেলার কোথাও লাশ আনা নেয়ার জন্য ৫০/৬০ কিলোমিটার পথও অতিক্রম করতে হয়। এর জন্য কোন ভ‚ক্তভোগীর কখনো কখনো ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকে। আর লাশ পঁচা গলা হলে তো কথাই নেই। অর্থ ব্যয় এবং যন্ত্রণার পরিমাণ আরও বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় সব উপজেলার সদরেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেøক্স গড়ে উঠেছে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেনি। অথচ জেলা সদরের উপরে চাপ কমানোর জন্য উপজেলা পর্যায়ে সরকার ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেন। তাতে জনসাধারণ দুর্ভোগ হতে রেহাই পেত।

এদিকে কুমিল­া জেলায় সড়ক দুর্ঘটনাসহ অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার দিন-দিন বেড়েই চলছে। এসব অপমৃত্যুর তুলনায় লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা খুবই সীমিত। সারা জেলায় একটি মাত্র মর্গ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আনা লাশগুলো অনেক সময় মর্গে পড়ে থাকে। এভাবে পড়ে থাকতে থাকতে অনেক সময় লাশে পচন ধরে যায়। ময়নাতদন্তে আনা লাশগুলোর আতœীয় স্বজনকে মর্গে নানা অজুহাতে হয়রানী করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেওয়ারিশ লাশ হলে তো কথাই নেই। এক্ষেত্রে ডোমেরা কোন টাকা না পাওয়ায় লাশগুলো কাটা ছিড়া করে সেলাই না করেই ফেলে রাখে। এ অবস্থায় অনেক লাশ থানা পুলিশ কোন রকম দাফন কাফন ছাড়াই মাটিতে পুতে ফেলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ