পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
প্রস্তাবিত বাজেটে কাঁচামালে আগাম কর (ভ্যাট) আরোপ এবং অগ্রিম আয়কর সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি করবে। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম বাড়বে ৪২ টাকা। এতে স্থানীয় শিল্প এবং এই খাতের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা ঋণও খেলাপিতে পরিণত হবে। সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যয় বাড়বে সরকারের মেগা প্রকল্পের। বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতি (বিসিএমএ) বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সিমেন্ট খাতের জন্য ব্যবসাবান্ধব নয়। তাঁরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে টনপ্রতি সিমেন্টে কর ও শুল্ক বাড়বে ৯৫৩ টাকা। এ হিসাবে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে খরচ বাড়বে ৪২ টাকা। উৎপাদন পর্যায়ে এই বাড়তি খরচ দেশের সিমেন্ট শিল্পকে হুমকিতে ফেলবে।
সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানান, অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় রেট সিডিউলের ওপর ভিত্তি করে। নির্মাণসামগ্রীর দরের ওপর ভিত্তি করে রেট সিডিউল তৈরি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে রেট সিডিউল নির্ধারণ করেছে সওজ অধিদপ্তর। এবার সিমেন্টের দাম বাড়লে সিডিউল রেট হার নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বলেন, সড়ক উন্নয়নের যে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে ও হয়েছে, সেগুলোর ব্যয় বেড়ে যেতে পারে সিমেন্টের দাম বাড়লে।
বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান এবং ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, বর্তমানে সিমেন্ট সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় ১৫ শতাংশ। আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করলে এর জন্য ব্যাংক ঋণ করতে হবে। ব্যাংকঋণের জন্য আমাদের সুদের হার বৃদ্ধি পাবে। এই অতিরিক্ত ৫ শতাংশ পরে সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। কারণ এই শিল্পে শুধু গ্রান্ডিং ও মিক্সিং করা হয়। এটি শতভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর শিল্প। মূল্য সংযোজনের হার খুবই কম। ফলে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আগাম কর সমন্বয়ের সুযোগ নেই। এতে ব্যাগপ্রতি দাম বাড়বে ৪২ টাকা।
আবাসন খাতের মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ সিমেন্ট সেক্টরে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে আবাসন খাতে প্রভাব ফেলবে। ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাত চাঙ্গা করার জন্য যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হব।
বিসিএমএ সভাপতি আলমগীর কবির দেশের সিমেন্ট শিল্প স্বয়ংসম্পন্ন উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও রপ্তানি করা হয়। এই সম্ভাবনাময় শিল্পে অতিরিক্ত কর আরোপ করলে এই শিল্প রুগ্ন হয়ে পড়বে। সরকারের অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়বে। এ ছাড়া আবাসন খাত ও বাজেটে চাপে থাকা মধ্যবিত্তের ওপর খড়্গ নেমে আসবে। আলমগীর কবির বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সিমেন্ট খাতে কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ এআইটি ও ৩ শতাংশ উেস কর চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এটি সমন্বয় করে আগের মতো ফেরতযোগ্য কর করার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া আগাম কর ৫ শতাংশ প্রত্যাহারের আহŸান জানান। তিনি বলেন, চলতি বছর নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে আমদানি পর্যায়ে চলতি হিসেবে ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত অগ্রিম ভ্যাট দিতে হবে। রাজস্ব খাতে অগ্রিম আয়কর ও নতুন ভ্যাট আইনে দেওয়া ৫ শতাংশ অতিরিক্ত জমা হলে এনবিআরের কাছে দেশীয় শিল্পের কয়েক হাজার কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে পড়ে থাকবে। এতে স্থানীয় শিল্পের চলতি মূলধনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আলমগীর কবির বলেন, এই শিল্পের কাঁচামাল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। তাই আমদানি পর্যায়ে দেওয়া ৫ শতাংশ রেয়াত সুবিধা না থাকলে বিক্রয় ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫৫ শতাংশ মোট মুনাফা এবং মূল মুনাফা ১৫ শতাংশ করতে হবে। কিন্তু তা কিছুতেই সম্ভব নয়। ফলে মূল্য নির্ধারণ বাজার সহায়ক না হলে উৎপাদন ও বিক্রয় কমে গিয়ে এই শিল্পের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতা কমবে।
রাজস্ব খাতে আগাম হিসেবে এখনো কয়েক শ’ কোটি টাকা জমা পড়ে আছে উল্লেখ করে বিসিএমএ সভাপতি বলেন, এ টাকা কবে পাওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এরপর আরো ৫ শতাংশ হারে আগাম ভ্যাট কর্তন করলে দেশের শিল্পে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে। এই শিল্পে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকিতে পড়বে।
আলমগীর কবির বলেন, ১০ বছর ধরে এই খাতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাজারে সাড়ে তিন কোটি টন সিমেন্টের চাহিদা রয়েছে। দেশের ৪২টি সিমেন্ট কারখানা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় সিমেন্ট রপ্তানি করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।