Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুপেয় পানির হাহাকার

উপকূলে বিশুদ্ধ পানি বঞ্চিত ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে নষ্ট হচ্ছে মিষ্টি পানির আধার। যে কারণে উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত উত্তোলনে এ সঙ্কট আরও প্রকট হচ্ছে।

কিন্তু নানামুখী অপচয়ের কারণে অনেক স্থানে সুপেয় পানির উৎস সঙ্কুচিত, দূষিত ও ধ্বংস হচ্ছে। এসব কারণে সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এ সঙ্কট সর্বাধিক। ওই এলাকায় গড় হিসেবে ২৫২ জনের জন্য একটি নলকূপ থাকলেও অনেক উপজেলায় নলকূপের অস্তিত্ব নেই। সেখানে পানির জন্য পুকুর বা অন্য জলাশয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব এলাকায় সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক জলাশয় নষ্ট হয়েছে। ফলে সুপেয় পানির সঙ্কটও বেড়েছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৭৯ শতাঙ্ক নলক‚পে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়া পদ্মা প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্নতা ও ব্যাপকভাবে লোনা পানির চিংড়ি চাষের দরুণ এলাকায় লবণাক্ততার তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সুপেয় পানির সঙ্কট। এ অঞ্চলের ৬০ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ এ সমস্যায় আক্রান্ত। ক্রমেই এ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, যার কারণে জীবন-জীবিকায় ও বসবাসে মারাত্মক ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।

খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালি ইউনিয়নের বগা গ্রামের গৃহবধূ আছমা বেগম। পরিবারের পানযোগ্য পানির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন খুব সকালে তাকে বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হয় ইসলামপুর গ্রামের সরকারি পুকুরে। পৌঁছতে দেরি হলে আর পরিচ্ছন্ন পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। সেই সঙ্গে বাড়ে পরিষ্কার পানি পাওয়ার অপেক্ষা।

পাইকগাছা উপজেলার ২নং কপিলমুনি ইউনিয়নের নাসির জানান, তাদের ইউনিয়নে কোনো পুকুরেই পানযোগ্য পানি পাওয়া যায় না। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত খনিজ উপাদান থাকায় বেশিরভাগ চাপকলের পানিও পানযোগ্যতা হারিয়েছে।

এই এলাকার মানুষের পানির প্রধান উৎস কপিলমুনি বাজারে বেসরকারি উদ্যোগে বসানো গভীর নলক‚পের পানি। প্রতি লিটার ৫০ পয়সার বিনিময়ে পানি কিনতে হয় তাদের। পানির সঙ্কট এতটাই গভীর যে, চাহিদার কারণে এলাকায় গড়ে উঠেছে পানির জমজমাট ব্যবসা। এমনকি খুলনা থেকেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জার ভর্তি পানি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে সরবরাহ করছে এখানে। তবে যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই এসব ব্যবস্থার কোনোটিই তাদের কাজে আসে না।

জানা গেছে, খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় পানযোগ্য পানি দুষ্পাপ্য। এসব উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নেই গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। এখানে বসবাসরত মানুষ বর্ষা মৌসুমে মূলত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বছরের ২-৩ মাস পান করে।

শুষ্ক মৌসুমে সীমিতসংখ্যক পুকুরই তখন হয়ে ওঠে সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এসব সংরক্ষিত পুকুরের সংখ্যা এতই সীমিত যে, গ্রামবাসী ৪-৫ ঘণ্টা ব্যয় করে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে পুকুরের পানিও শুকিয়ে যায়।

ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, নিরাপদ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের সুযোগ নেই এমন ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধার বাইরে। যার বেশির ভাগই বাস করে উপকূলীয় ও পার্বত্য অঞ্চলে। বিভিন্ন সংস্থার একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আইলাদুর্গত এলাকার ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বর্তমানে পানযোগ্য পানি বঞ্চিত।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি এবং খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার ১৯ ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট। মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাঙ্ক মানুষ নলকূপের মাধ্যমে পানি পাচ্ছে। অন্যদের পানি সংগ্রহের জন্য গড়ে দুই থেকে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে হচ্ছে। এখনও ৭৮ শতাঙ্ক মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না। আর মাত্র ২ থেকে ৩ শতাঙ্ক পুকুর লোনাপানি মুক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ