Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সিন্ডিকেটে জিম্মি কৃষক ‘অফিসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন ধান নেয়া শেষ’

যশোরের শার্শা উপজেলা খাদ্য গুদাম

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

 শার্শা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা সরাসরি তাদের ধান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে বিক্রি করতে পারছে না। দালাল ছাড়া কেউ এখানে ধান বিক্রি করতে পারছে না। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে কৃষকরা। ফলে প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। শার্শা উপজেলায় গত ২৬ মে থেকে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হয় এবং আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ক্রয় করা হবে।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, আমার দায়িত্ব শুধু প্রকৃত কৃষকদের নামের তালিকা তৈরি করা। সে হিসাবে আমি ৯ ধাপে প্রায় ৩২০০ কৃষকের তালিকা খাদ্য অফিসে পাঠিয়েছি। ৬৫২ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের কথা কিন্তু তারা এ পর্যন্ত ১৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে ধান ক্রয়ের কথা কিন্তু তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ও নিরাপত্তা প্রহরী হারুনের সহযোগিতায় প্রতি ইউনিয়ন থেকে কয়েকজন আড়ৎদার ও প্রভাবশালী কিছু লোকের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা কৃষকদের কৌশলে ম্যানেজ করে তাদের ভর্তুকির কৃষিকার্ড সংগ্রহ করছে। কৃষকের নিকট থেকে কমমূল্যে ধান কিনে ঐ কৃষি কার্ড ব্যবহার করে সরকারি খাদ্য গুদামে মণ প্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছে। কার্ড প্রদানকারী সহজসরল কৃষকদের ঐ সিন্ডিকেট সান্ত¦না স্বরুপ দিচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকা। সিন্ডিকেটের বাহিরে কোন কৃষক ধান বিক্রি করার জন্য খাদ্য গুদামে গেলে কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিচ্ছে ধান কেনা শেষ হয়ে গেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শার্শা উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬৫২ মেট্রিক টন এবং প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে তালিকাভূক্ত কৃষকদের নিকট থেকে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি ধান কেনার কথা। একজন প্রকৃত কৃষকের নিকট থেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান কেনার বিধান থাকলেও এ দফতর ঘোষণা দিয়েছে প্রতি কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ১৫ মণ ধান কেনা।

ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধান সংগ্রহের বিদান থাকলেও এ দফতরের কর্তা ব্যক্তিরা তা মানছেন না। তালিকা ভূক্ত কোন কৃষক ধান নিয়ে গেলে এ ধানে ময়েশ্চার বেশি, চিটা আছে বলে ফেরত দিচ্ছে কিন্তু ঐ কৃষক পরক্ষণে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান জমা দিলে অফিস ধান কিনে নিচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একজন কৃষক ১৫ মণ ধান বিক্রি করে যে টাকা লাভ করবে, সেই লাভের টাকা দিতে হবে ধান পরিবহনের জন্য ট্রলি বা ভ্যান চালককে।

অথচ সিন্ডিকেট সদস্যরা অফিসের সহযোগিতায় বাজারের কৃষকের নিকট থেকে সাড়ে ৫’শ টাকা দিয়ে হীরা ধান কিনে কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সরকারি গুদামে সরবরাহ করছে। মে মাসের প্রথম দিকে সরকারি গুদামে যদি ধান কেনা হত তাহলে কৃষকরা লাভবান হতো। এদিকে আবহাওয়া ভাল থাকায় কৃষকেরা বোরো ধান কাটা ও মাড়াই আগেই শেষ করেছে। জমি চাষ, সেচ, সার, কীটনাশক ও ধান কাঁটার খরচ মেটাতে তারা বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন। সরকারি দাম ভালো থাকলেও সঠিক সময়ে সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় তারা ধান দিতে পারেনি।

প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের ভয়ে ভীত হয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ বুরুজ বাগানের একজন কৃষক জানান, সরকার ঘোষণা করেছে যে সকল কৃষকের ভর্তুকির কার্ড আছে তাদের নিকট থেকে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান সংগ্রহ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমি অফিসে গেলে লেবার ও কর্মকর্তারা বলেন ধান নেওয়া শেষ হয়ে গেছে। তাই আমাকে ফিরে যেতে হল। আমি ধান দিতে পারি নাই কিন্তু এখনও ধান নিচ্ছে। একই অভিযোগ করেন কন্দর্পপুর ও নিজামপুরের গ্রামের নাম প্রকাশ না শর্তে দুই কৃষক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক মুমার মন্ডল খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান আমার দপ্তরে জনবল কম থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে ধান কিনা সম্ভব হয়নি। শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মন্জু জানান, সরকার চাচ্ছে মাঠ পর্যায় থেকে ধান কিনতে। সেখানে না কিনলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবেনা। ফুড গোডাউনে যা করা হচ্ছে তা আদৌ কাম্য নয়। সিন্ডিকেট’র কিছু সদস্য কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল জানান, ফুড গোডাউনের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ধান সংগ্রহ করতে হবে। আমরা কোনভাবেই ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হতে দেব না।

 



 

Show all comments
  • ash ২৪ জুন, ২০১৯, ৬:৪৮ এএম says : 0
    AKTA KULOKHONE DESH, KONO NIOM E E DESH E 2 SHOPTAR BESHI TIKE NA ! DU SHOPTAR MODDY JE LAW SHEI KODU HOE JAY !! DESH ER PROTITA DEPERTMETER TOP THEKE PION PORJONTO PURO SET CHANGE KORA WCHITH ! PONNER SHATHE SHATHE PROSHASHON O VEJAL HOE GASE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ