বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নিয়ন্ত্রণহীন ওষুধের বাজার। প্যাকেটে খুচরা মূল্য উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দামে বিক্রি হয় না। ২৫ টাকার ইনজেকশন ৫শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৈধ-অবৈধ খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দামে ওষুধ বিক্রি করছেন। তাদের এ কাজে সহায়তা করেন কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
কুমিল্লার অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ। ডায়াবেটিস, হার্ট ও উচ্চ রক্তচাপ রোগে প্রতি মাসে তাকে ৩-৪ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। হঠাৎ ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যদের মতো বিপাকে পড়েন তিনিও। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এমনিতেই নাগালের বাইরে, তারপরও ওষুধের দাম বেড়ে গেছে।
সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২৫ টাকার ইনজেকশন ৫০০ টাকায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। মোক্তার আহম্মদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি দৈনিক ইনকিলাকে বলেন, তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজারের জেনেসা ফার্মেসি থেকে ২৫ টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন বিক্রয় করেছে ৫০০ টাকায়। তিনি বিষয়টি লিখিত ভাবে কুমিল্লা জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের কমকর্তারা সরেজমিনে গেলে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। উক্ত ফার্মেসির মালিককে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অভিযোগকারী মো. মোক্তার আহম্মদ চৌধুরী ওই জরিমানার ২৫ শতাংশ হিসাবে ১২,৫০০ টাকা পান। একই দিন উপজেলার পৌর বাজারে বিনামূল্যের ঔষধ সংরক্ষণ করায় আরেক ফার্মেসিকে দুই হাজার টাকা ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় মেসার্স কে বি এন্টারপ্রাইজকে তিন হাজার টাকা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুল ইসলাম এই জরিমানা করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ মাসে কখনো ৫শতাংশ কখনো আবার ১০ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে উদাস। নিউরোলজি, হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিস গ্যাস্ট্রিক ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ব্যবহৃত হাঁপানি ও কাশির ওষুধ এমনকি অস্ত্রোপচারের জন্য যেসব ওষুধের প্রয়োজন সেগুলোর দাম বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের অর্থপেডিকের রোগী জাকির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ওষুধের দাম ক্রমান্বয় সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। একটি সিরাপ ৭৫ টাকায়ও কোম্পানী লাভ করতো এখন তা ৮০ টাকা হয়েছে। মনিটরিং এর অভাবে বিগত কয়েক বছরে শতাধিক ওষুধের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেওয়ায় দাম বাড়তে থাকে। আর লাগামহীন ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দীর্ঘমেয়াদে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ড্রাগস)পরিদর্শক হারুনুর রশিদ বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে না। কোম্পানিগুলো নিজেরাই মূল্য নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কিছুই করার নেই।
কুমিল্লার বৃহত্তম পাইকারি বাজার আলেখারচর ও বাদশা মিয়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একই মানের হলেও কোম্পানি ভেদে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে একেক দামে। অতিপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক যেমন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন গ্রæপগুলোর মধ্যে ৫০০ মিলিগ্রাম প্রতিটি ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। যা মাস খানেক আগে ছিল ১৩ টাকা। জ্বর-ব্যাথার বিভিন্ন কোম্পানির ট্যাবলেট প্রতি পাতার দাম ২০ টাকা থেকে এখন ২৫ টাকা।
স্যালাইনের দাম মাস খানেক আগে ছিল ৬৮ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ প্রতি ক্যাপসুলের দাম চার টাকা থেকে এখন পাঁচ টাকা। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ব্যবহৃত হাঁপানি ও কাশির ট্যাবলেটের দাম সাত থেকে ১৫ টাকা বেশি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সামনে দাম বাড়তে পারে এমন ওষুধের মজুদদারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা বেশি মুনাফার আশায় ওষুধের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বর্তমান মূল্যের চেয়ে অধিক দাম নিচ্ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেট ঘোষণার আগেই ওষুধের এরকম অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করার কি যৌক্তিকতা আছে? তাদের অভিযোগ, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। শহরের কয়েকটি ফার্মেসি দোকানদাররা বলেন, বছরে ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ওষুধের দাম বাড়ায় বিভিন্ন কোম্পানি।
তবে তারা দাম বাড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আমাদের বলে না, শুধু বলে দাম বেড়েছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের নির্ধারিত রেটেই আমাদের ওষুধ কিনতে হয়। বেশি দামেই ওষুধ বিক্রি করতে হয়। এ দিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, যে ভাবে দিন দিন ওষুধের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়বে। কেননা বড় ব্যবসায়ীরা ইনভেস্ট করতে পারলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পূঁজির অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার অনেকেই পরিকল্পনা করছেন।
২৪ বছর ধরে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো যে দাম চাইছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সেই দামেই বিক্রির অনুমতি দিচ্ছে। ফলে ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি থেকে যাচ্ছে সরকারের নিয়ন্ত্রের বাইরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।