রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ডাকাত-ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। বিভিন্ন স্থানে রাতের অন্ধকারে চলন্ত গাড়িতে হঠাৎ বিকট শব্দ। যান্ত্রিক ক্রটি ভেবে চালক দ্রæত গাড়ি থামান সমস্যা খুঁজে দেখতে। আর তৎক্ষণে গাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে সশস্ত্র ডাকাতদল। অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে লুটে নেয় সর্বস্ব।
কখনো কখনো ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে আহত হয় অনেক যাত্রী। বিশেষ করে মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তীরচর থেকে হাড়িখোলা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত এবং বুড়িচং উপজেলার নিমসার থেকে সৈয়দপুর এছাড়াও ফেনীর লালপুল থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কুমিরা পর্যন্ত প্রায় দশটি পয়েন্টে নানা কৌশলে যানবাহনে ডাকাতি করে তারা। গত দু’বছরে র্যাবের অভিযানের মুখে কিছুটা কমলেও ডাকাতি বন্ধ হয়নি। তবে ডাকাতি প্রতিরোধে টহল জোরদারের পাশাপাশি আকস্মীক চেকপোস্ট বসানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা যায়, মহাসড়কের চারটি অংশে তাদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। ডাকাতদের প্রধান টার্গেট শিল্পপণ্য বোঝাই ট্রাক-কাভার্ডভ্যান। এ নিয়ে উদ্বেগে আছে ব্যবসায়ীরা। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দিনে-রাতে ৩৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে।
ডাকাতদল মহাসড়কে ডাকাতি করার জন্য বেছে নেয় একটি উপযুক্ত স্থান। নির্ধারিত স্থানে অস্ত্র হাতে থাকে ৮-১০ জন ডাকাত। তাদের অন্তত ১০০ গজ আগে রড ও পাথর হাতে থাকে দুজন। তাদের কাজ হলো প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট পরিবহনগুলোকে লক্ষ্য করে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে রড বা পাথর ছুড়ে মারা। আর চলন্ত গাড়িতে রড বা পাথরের আঘাতে হয় বিকট শব্দ। তখন চালক গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করে থামাতে থামাতে চলে যান সংঘবদ্ধ ওই ডাকাতদলের অবস্থানের কাছাকাছি। আর তখনই ডাকাতদল হানা দেয় ওই গাড়িতে।
চলন্ত গাড়িতে রড ও পাথর ছুড়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তীরচর থেকে বুড়িচং উপজেলার কাবিলা এলাকা পর্যন্ত। স¤প্রতি কয়েকটি স্থানে চলন্ত গাড়িতে রড ছুড়ে ডাকাতির চেষ্টা চলে। গত শনিবার রাতে মহাসড়কের কোরপাই এলাকায় পুলিশের প্রাইভেট কারে রড ছুড়ে ডাকাতির চেষ্টাকালে এক ডাকাতকে আটক করা হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে তীরচর এলাকায় ওই রড পার্টির কবলে পড়েন সাতজন ভারতীয় নাগরিক। কলকাতা থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে মাইক্রোবাস যোগে চান্দিনায় আসার পথে ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়ান। এমনকি ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হন তিনজন। ওই ডাকাতচক্রকে রড পার্টি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কারণ তাদের হাতে থাকে লোহার বাঁকা অ্যাঙ্গেল।
চান্দিনার ছয়ঘড়িয়া এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া মজুমদার। মহাসড়ক হয়ে হাড়িখোলা পৌঁছতেই একটি মোটরসাইকেল যোগে দুই ছিনতাইকারী তার হাত থেকে ভ্যানিটি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। এতে তার ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২৪ হাজার টাকা খোয়া যায়। ৭ জুন বিকাল ৪ টায় মোটরসাইকেল যোগে ইলিয়টগঞ্জ থেকে চান্দিনায় আসছিলেন দেবীদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামের রবিউল আজম। তিনি তীরচর এলাকায় পৌঁছার পর পেছন থেকে ২টি মোটরসাইকেল যোগে চারজন ছিনতাইকারী তাকে আটক করে ছিনিয়ে নেয় ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৭০০ টাকা। গত ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে ময়নামতি থেকে চান্দিনায় আসছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম। তিনি মদিনা পেট্রল পাম্প অতিক্রম করার পর ২টি মোটরসাইকেল যোগে চারজন ছিনতাইকারী হঠাৎ তার মোটরসাইকেলকে চাপিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে মোটরসাইকেলটি থামাতেই অপর দুই মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারী সদস্যরা তাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিয়ে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও মানি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ডাকাতি সংগঠিত হওয়ার পর অধিকাংশ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জানা থাকলেও ছিনতাইয়ের অধিকাংশ ঘটনাই তাদের অজানা। ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দারস্থ হচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।
এদিকে ৩৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশ দেড়শ’ কিলোমিটারেরও বেশি। এরমধ্যে হাইওয়ে পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে মাত্র তিনটি। গত ৫ জুন সীতাকুন্ডে বাড়বকুন্ড এলাকায় ডাকাত দল অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে, গাড়িতে থাকা রোগীর মেয়ে ও স্বজনদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার এবং চিকিৎসার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ জানান, জনগণের চলাচল সুগম ও নিরাপদে পণ্য মালামাল সরবরাহে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স¤প্রতি মোটরসাইকেলযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। মহাসড়কের অন্যান্য যানবাহনের মতো মোটরসাইকেলও নজরে এনেছি। ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।