বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ১৮ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ রোববার। দীর্ঘ এই সময়ে মামলার বিচার করা সম্ভব হয়নি। এই সময়ের মধ্যে শুধু মাত্র মামলার বাদি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। দীর্ঘ দিনেও বর্বরোচিত এই বোমা হামলার বিচার শেষ না হওয়ায় নিহতদের পরিবার ও আহতরা হতাশ হয়ে বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছেন। ২০০১ সালের ১৬ জুন রাতে ভয়াবহ ওই বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের ২০ জন নেতা কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী। ওই ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভেকেট খোকন সাহা বাদি হয়ে পৃথক দু’টি মামলা মামলা দায়ের করেন।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ মামলায় মোট ৭ জন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীট ভুক্তদের মধ্যে মুফতি হান্নানকে ২০১৭ সালে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। মামলার অপর ২ আসামী জমজ সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মুহিবুল মোত্তাকিন ভারতের কারাগারে আটক রয়েছে। ওবায়দুল্লাহ রহমান নামে অপর এক আসামী পলাতক রয়েছেন। মামলার আসামী নাসিকের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু জামিনে এবং শাহাদুৎ উল্লাহ জুয়েল নামে অপর এক আসামী কারাগারে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, এ মামলায় মাত্র বাদি সাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছে। তাও বেশ কয়েক বছর আগে। এরপর আর কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়নি। মুফতি হান্নান জীবিত অবস্থায় তাকে মামলার ধার্য তারিখে আদালতে হাজির করতে না পারার কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়নি। কারণ মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় সব জেলাতেই মামলা ছিল। ২০১৭ সালে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পরে তার মৃত্যুর প্রতিবেদন না আসায় এতদিন সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি মুফতি হান্নানের মৃত্যু প্রতিবেদন নারায়ণগঞ্জ আদালতে এসে পৌছেছে। তাই এখন আর সাক্ষ্য গ্রহণে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। আগামীকাল মঙ্গলবার মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। ওই তারিখে মামলার একমাত্র কারাবন্দি আসামী শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েলকে যাতে মামলার সুবিধার্থে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এনে রাখা হয় সেজন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
বিভীষিকাময় সে রাত
২০০১ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের মেয়াদের শেষদিকে ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। রাতে পৌনে আটটার দিকে তখনকার এমপি শামীম ওসমান যখন জনগণের কথা শোনার জন্য সাক্ষাৎ দিচ্ছিলেন ঠিক তখুনি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় আওয়ামীলীগের ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক লোক। চিরতরে পঙ্গত্ববরণ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলার সভাপতি চন্দন শীল, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন দাস আরো অনেকেই। সে ঘটনায় সেদিনই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা দুটি মামলা (একটি বিস্ফোরক ও অন্যটি হত্যা) দায়ের করেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে এ মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। দুটি মামলায় ১৪ বছরে ৭ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং ৮ম কর্মকর্তা ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২মে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন আছে এবং তা সাক্ষী পর্যায়ে আছে।
মামলা
বোমা হামলার পর দিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় দুইটি মামলায় (একটি বিস্ফোরক অন্যটি হত্যা) জেলা বিএনপির তৎকালীন সাধারন সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রধান করে বিএনপি ও এর অঙ্গ দলের মোট ২৭ জনকে আসামী করা হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বোমা ট্রাজেডি মামলা দুটির ফাইনাল রিপোর্টে বলা হয়, ‘উল্লেখিত ২৭ জনের কেউই চাষাড়া আওয়ামীলীগ অফিসে ১৬ জুন ২০০১ সালের বোমা হামলায় জড়িত নয়। যদি ভবিষ্যতে অত্র মামলার তথ্য সম্বলিত ক্লু পাওয়া যায় তবে মামলাটি পুনরুজ্জিবীত করার ব্যবস্থা করতে হবে।’ দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর মামলাটি হিমাগারে থাকার পর সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারকে আদেশ দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘটনায় নিহত চা দোকানী হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান, তার ভাই নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান সহ আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও এর সহযোগি সংগঠনের ৫৮ নেতাকর্মীকে আসামী করে একটি মামলা করেন। পরবর্তিতে উচ্চ আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দেয়।
ঘটনার দীর্ঘ ১২ বছর পর দু’টি মামলায় ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি প্রদান করে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দু’টি মামলার প্রত্যেকটির ৯৪৭ পাতার চার্জশীট দাখিল করা হয়। এতে মামলা থেকে চার্জশীট থেকে
তৈমূর আলম খন্দকার সহ ৩১জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর অভিযুক্ত ৬ জন হলেন, শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, ওবায়দুল্লাহ রহমান, ভারতের দিল্লী কারাগারে আটক সহোদর আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু।
সেই ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন
সেদিনের ঘটনায় নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সাবেক জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।