Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবারই ব্যতিক্রম

ঢাকা-চট্টগ্রামের কাঁচাবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশ পরিচালনায় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে ভ্যাটের পরিধি যেমন ব্যাপক হারে বিস্তৃত করা হয়েছে, তেমনি নিত্য ব্যবহার্য কিছু পণ্যের ভ্যাট হারও বাড়ানো হয়েছে। ফলে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিবছর বাজেটের দিন থেকেই সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এবারই ব্যতিক্রম। কারণ বেশিরভাড় পণ্যের তাৎক্ষনিক দাম এবার বাড়েনি। শুধুমাত্র বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কারণে সব ধরনের সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম আগের দামে বিচাকেনা হতে দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজার ও বনানী কাঁচাবাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাজেটে অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট বসানো হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি বলেই জানিয়েছেন বনানী কাঁচাবাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, সবজি-মাছ ও মাংসের দাম এখনও আগের মতো আছে। তবে দ্রুত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজেট নয়, এমনিতেই দাম বেশি। বাজারে সবজির যথেষ্ট সরবরাহ থাকলেও দাম একটু বেশি। ৪০ থেকে ৫০ টাকার নেচেই কোনো সবজিই বাজারে নেই। বনানী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আরাফাত জানান, ঢেড়স, করলা, কাঁকরোল, পটল টমেটো ও ঝিঞা প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বনানী কাঁচা বাজারের মুদিদোকান বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, আমরা ঈদের আগে যে দামে বিক্রি করেছি এখনও সেই দামেই বিক্রি করছি। তিনি বলেন, ঈদের আগে পকেট জাত চিনি ৬০ টাকা ও খোলা চিনি ৫৫ টাকা কেজি দওে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানেও সেই একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার জানা মতে কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। দাম আগের মতই আছে। তিনি বলেন, বাজারে বাজেটের প্রভাব বোঝা যাবে বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হলে। তখন নতুন করে মোকাম থেকে পণ্য আনতে গেলে দামের পার্থক্য বলা যাবে।

ছুটির দিনে ঈদের পর প্রথম সাপ্তাহিক বাজার করতে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে এসেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ঈদের পরে প্রথম বাজারে এসেছি। আমার কাছে মনে হয়, কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। বাজারে সবজির সরবরাহ ভালোই মনে হলো। তবে মাছের বাজারটা একটু চড়া। নতুন বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটের কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে কোনো পার্থক্য চোখে পড়েনি। দেখা যাক, সামনের দিনে কেমন থাকে।
বিক্রেতা বলছেন, বাজেটের সঙ্গে সবজি চাষি কিংবা আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বাজার মূল্য নিজস্ব গতিতেই চলে। আপাতত সবজির আমদানি ভালো থাকায় দামটা বাড়েনি। বরং কিছু কিছু সবজিতে কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি দেশি মসুর ডাল ১০০ টাকা, হাইব্রিড মাঝারি মসুর ডাল ৯০ টাকা, বড় মসুর ডাল ৭০ টাকা, খেসারি ডাল ৬৫ টাকা, কাঁচা মাষকলাই ডাল ৮৫ টাকা, মুগ ডাল ১০৫ টাকা, ছোলার ডাল ৭৫ টাকা, বুট ৮০ টাকা, খোলা চিনি ৫১ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও একই রকম দাম ছিল।

বাবুবাজারের চালের আড়তদার কিবরিয়া জানান, চালের দাম ঈদের আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে। তিনি জানান, মিনিকেট চাল ৪০ টাকায়, আটাশ ৩০, পাইজন ২৫ ও স্বর্ণা ২৩ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করছেন। নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতা ফারুখ জানান, তিনি পাইজাম ৪০ ও স্বর্ণা ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫৮, আটাশ ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন। ঈদের আগেও একই দাম ছিল বলে তিনি জানান।
বেশিরভাগ পণ্যের দাম আগের মতো থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। তিন থেকে চার দিন ধরে বাড়তি এসব পণ্যের দাম। প্রতি কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ছয় টাকা করে। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম আগের মতোই আছে।
ভারতীয় পেঁয়াজের আড়তদার মো. রাজ আলী জানান, তিন দিন আগে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ২৪ টাকা (১২০ টাকা পাল্লা) বিক্রি করেছেন। এখন সেটা তারা বিক্রি করছেন ৩০ টাকা (১৫০ টাকা পাল্লা) প্রতিকেজি। প্রতিকেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ছয় টাকা। রোজা ও ঈদের পর এই প্রথমবারের মতো ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ল। বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলেও জানান রাজ আলী। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ পাইকারি ২২ থেকে ২৪ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি করছেন। ঈদের আগেও প্রায় এরকম দামেই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছের দাম বরাবরের মতই চড়া। মাংসের দামেও কোনো পরিবর্তন নেই। ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়, লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় আর খাসির মাংস মাংস বিক্রেতা আসাদুল বলেন, আমাদের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। এখানে সব ধরনের ক্রেতারা আসেন। পাইকারি, খুচরা সব ধরনের ক্রেতাই রয়েছেন। নতুন বাজেটের কারণে মাংসের দামে পরিবর্তন আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ