পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘সমৃদ্ধ আগামীর’ অঙ্গীকার সামনে রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পসমূহ এগিয়ে নেয়া এবং উন্নয়ন ধারাবাহিকতার প্রতিফলন রয়েছে। মেগা প্রকল্পবহর ছাড়াও গুচ্ছ প্রকল্প ও নিয়মিত উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যদিয়ে পরিবর্তনের বাঁকে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম।
আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২টি মেগাপ্রকল্প ও মাঝারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। ‘বাস্তবমুখী স্বপ্নময় পরিকল্পনা এবং তার সময়োচিত ও সার্থক রূপায়নে’ দৃঢ় আশাবাদী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বিগত মেয়াদে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় অর্থনীতির হৃৎপিন্ড বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামকে বদলে দেয়ার প্রত্যয়ে বিভিন্ন খাতে বড়সড় প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেন।
অর্থমন্ত্রীর সদ্যঘোষিত ২০১৯-২০ সালের বাজেটে বৃহত্তর চট্টগ্রামের জন্য আর্থিক বরাদ্দপ্রাপ্ত চলমান প্রধান মেগা প্রকল্পবহরের মধ্যে রয়েছে, কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মাণাধীন দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম-ঢাকা দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলে কারিগরি সম্ভাব্যতা সম্পন্ন করা ও রেলপথের উন্নয়ন, দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নির্মাণাধীন বে-টার্মিনাল প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন, মহেশখালীর মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরসহ জ্বালানিকেন্দ্র সম্প্রসারণ, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও শিল্পায়ন প্রসারের উদ্যোগ।
আসছে অর্থবছরে এসব মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের সমৃদ্ধি, আধুনিকায়ন ও গুরুত্ব আরো বৃদ্ধির প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে এখানকার শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী মহলে। অর্থমন্ত্রীর সদ্যঘোষিত বাজেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুসারে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সহায়ক একই সাথে গণমুখী, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও বিনিয়োগবান্ধব উল্লেখ করে স্বাগত জানান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ও মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান।
১৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেয়া যায়, সরকারের অগ্রাধিকার এবং প্রধানমন্ত্রীর ফাস্ট ট্র্যাকভূক্ত বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলো। চট্টগ্রামের এসব মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতিফলন রয়েছে এবারের বাজেটে। কেননা চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবকাঠামোর উন্নয়ন বা আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণের সাথে দেশের বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আমদানি-রফতানির চাকা গতিশীল করা, জাতীয় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, পর্যটন সুবিধার প্রসার, জ্বালানি খাতের মৌলিক উন্নয়নের প্রশ্নগুলো নিবিড়ভাবে জড়িত।
সদ্যঘোষিত বাজেটের নিরিখে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মেগাপ্রকল্প দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের অবাকাঠামো সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বহুল আলোচিত চলমান বে-টার্মিনাল প্রকল্প দ্রæততর সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা হাইস্পিড ট্রেন চালুর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি সম্ভাব্যতা সম্পন্ন করার অঙ্গীকার বাজেটে রয়েছে।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে এবার বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে এই মেগাপ্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। মাতারবাড়ীকে ঘিরে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও এলএনজি, জ্বালানি তেল স্থাপনা, বহুমুখী গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের কাজ চলছে। সেখানে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা এবং বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের সন্নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল রেললাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ মেগাপ্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।
তবে এ মেগাপ্রকল্পে ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ এবং কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ও সামুদ্রিক জেলেদের মাছ বাজারজাতে যুগান্তকারী উন্নতি আসবে। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিন পর্যন্ত মহাসড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ স্থাপন হবে সহজ।
আসছে বাজেটে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বহুলেন সড়ক টানেল তথা বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ মেগা প্রকল্পে আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তবে এই মেগা প্রকল্পে বিগত ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। দেশের প্রথম এ টানেল নির্মিত হলে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ হিসেবে কর্ণফুলী নদীর উভয় পাড়ে মেগাসিটি বিকশিত হবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মূল কার্যক্রম টিবিএম-এর সাহায্যে টানেল খননকাজ এগিয়ে চলেছে। এ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। সরকার এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে টানেল নির্মিত হচ্ছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত ‘একমুখী’। যা সড়ক মহাসড়ক-নির্ভর। এই চাপ কমাতে এবং সমতা আসতে রেলপথকে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় সরকার।
এই লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ঘোষিত ২০১৯-২০ সালের বাজেটে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের উন্নয়ন, দূরত্ব কমিয়ে আনা, দ্রুত গতিসম্পন্ন ট্রেন চালুসহ সামগ্রিকভাবে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে বৃদ্ধি পেয়েছে বরাদ্দ। নয়া প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলওয়ে খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৮ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। সরকার দেশের প্রধান রেলরুট হিসেবে চট্টগ্রাম-ঢাকা দ্রুত গতির রেলপথ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এ ব্যাপারে কারিগরি সমীক্ষার প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। হাইস্পিড ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যকার দূরত্ব ৭০ থেকে ৯২ কিলোমিটার পর্যন্ত কমিয়ে আনার উদ্যোগ বা বিকল্পগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। এরজন্য এই রুটে অপ্রয়োজনীয় বাঁকগুলো পরিহার করে সোজাসুজি লাইন নির্মাণ করা হবে। দ্রুত গতির ট্রেনে যাত্রীরা সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। আবার চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি যেতে পারবেন দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত। এরফলে রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।