মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
মাহফুজ আল মাদানী
পিতা-মাতা। যাদের মাধ্যমে একটি সন্তান এই সুন্দর পৃথিবীর মুখ দেখে। মহান আল্লাহতায়ালা তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়ে বলেনÑ ‘পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর’ Ñ(সূরা আল ইসরা : ২৩)। সন্তানের প্রতি যেভাবে পিতা-মাতার অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে একজন সন্তানের হক বা অধিকার রয়েছে তার পিতা-মাতার প্রতি। যে অধিকার প্রদান করেছে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম। আসুন জেনে নেই সে সম্পর্কে কিছু।
প্রথমেই একজন পুরুষের উচিত একজন আদর্শ স্ত্রী নির্বাচন করা। যিনি হবেন ওই সন্তানের মা। কেননা, একজন আদর্শ মা ছাড়া একটা নেক বা আদর্শ সন্তান পাওয়া দুষ্কর। তাই একজন সতী-সাধবী, আদর্শবান ও ধার্মিক নারী চয়ন করে বিয়ে করতে হবে। ‘মা’ই হচ্ছেন একটি নেক সন্তান তৈরির প্রথম প্রতিষ্ঠান। এরপর পিতা-মাতা উভয়েই মিলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে একজন নেক সন্তান কামনা করে দোয়া করতে থাকবেন। যেভাবে হজরত যাকারিয়া (আ.) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘সেখানেই যাকারিয়া (আ.) তার পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন। বললেন হে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পূতঃপবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’ Ñ(সূরা আল ইমরান : ৩৮)।
জন্মলগ্ন থেকেই একটা সন্তানের অধিকার শুরু হয়ে যায়। যা তার পিতা-মাতার প্রতি অপরিহার্য। জন্মের পরে শিশুর কানে আজান ও ইকামত দিতে হবে। তার একটি নাম চয়ন করতে হবে, যা হবে সুন্দর ও অর্থবহ। হাদিস শরিফ যার বর্ণনা দিয়েছে এভাবে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেনÑ সাহাবায়ে কেরাম বললেন হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা সন্তানের ওপর পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে জানি, তবে পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অধিকার বা হক কী? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ ‘পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অধিকার বা হক হলো তার সুন্দর নাম রাখা এবং তাকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া’। শুধু নাম রেখেই শেষ নয়, সন্তানের জন্মে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ এবং সন্তানের সম্মানার্থে আকীকা করতে হবে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকীকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেনÑ ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আকীকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন’।
এরপর থেকে তার সঠিক পরিচর্যা করা পিতা-মাতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। পরিচর্যার ক্ষেত্রে সন্তানের পানাহার, পোশাক-আশাক, শারীরিক গঠনসহ মেধা বিকাশ ও সুস্বাস্থ্য গঠনে পিতা-মাতাকে নজর রাখতে হবে। কেননা, ইসলাম চায় পিতা-মাতা যেন তাদের সন্তানকে শক্তি সামর্থ্য ও কার্যকলাপের দিক থেকে সক্রিয় হওয়ার যোগ্যতা গড়ে তুলে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ ‘একজন শক্তিশালী মুমিন একজন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রিয়’। আর সেজন্য পিতা-মাতার উচিত সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করে সুঠাম হৃদয়ের অধিকারী বানিয়ে একজন শক্তিশালী মুমিন হিসেবে গড়ে তোলা।
সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই আদর্শ ও নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে যদি পিতা-মাতার অর্থ ব্যয় করতে হয় তাহলে পিতা-মাতার সেটা করতে হবে। এটা সন্তানের অধিকার। কেননা, এভাবেই একটা সন্তান নেক বা আদর্শবান হয়ে উঠবে। যে তার পিতা-মাতার মৃত্যুর পরে দোয়া করতে থাকবে। যার সওয়াব পিতা-মাতা কবরে থেকে ভোগ করবে। আর এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ ‘যখন কোন বনী আদম মৃত্যুবরণ করে তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। (তন্মধ্যে একটি হলো) ওই নেক সন্তান যে তার পিতা-মাতার জন্য দোয়া করবে’। তাই পিতা-মাতার উচিত সন্তানকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলা। যা হবে পিতা-মাতার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের উসিলা।
শুধু তাই নয়, পিতা-মাতার কর্তব্য সন্তানকে বিশুদ্ধ আকীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস শিক্ষা দেয়া। হযরত লোকমান (আ.) তার সন্তানকে আকীদা শিক্ষা দিতে গিয়ে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার বর্ণনা পবিত্র কোরআন এভাবে দিয়েছেÑ ‘হে বৎস! আল্লাহর সাথে শরিক করো না, নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরিক করা মহাঅন্যায়’ -(সূরা লোকমান : ১৩)। অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ ‘প্রত্যেক সন্তান জন্মগতভাবে প্রবৃত্তির ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান অথবা অগ্নিপূজক করে গড়ে তোলে’। যদি সন্তান বিশুদ্ধ আকীদা বিশ্বাস না শিখে তাহলে পিতা-মাতাকেই আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। এ জন্য পিতা-মাতার ওপর দায়িত্ব হলো সন্তানকে বিশুদ্ধ আকীদা শিক্ষা দেয়া।
সন্তানকে সৎচরিত্র, ইবাদত, হালাল-হারাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহব্বত, অনুসরণ অনুকরণসহ প্রাসঙ্গিক সবকিছু শিক্ষা দেয়া পিতা-মাতার ওপর আবশ্যক। হাদিস শরিফে এসেছেÑ ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের জন্য আদেশ দাও। (যদি নামাজ না আদায় করে তাহলে) দশ বছর বয়সে তাকে প্রহার কর’। আলেমগণ বলেন, অনুরূপভাবে রোজার ক্ষেত্রেও তাগিদ দিতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইবরাহীম (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, ইবরাহীম (আ.) বলেছিলেনÑ ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নামাজ কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও’ Ñ(সূরা ইবরাহীম : ৩৮)।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানদের অধিকারের মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা। ভালোবাসা, পরিচর্যা করা, কোনো কিছু প্রদান করা বা অর্থ দেয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে একজনকে অন্যজনের ওপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না। হাদিস শরিফে এসেছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে কিছু দেয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর’। এ ছাড়া হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেনÑ ‘পিতার প্রতি সন্তানদের অধিকার হলো তার সুন্দর নাম রাখা, তাকে কিতাব তথা আল কোরআন শিক্ষা দেয়া এবং যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তখন তাকে বিয়ে করানো’। তাই সব পিতা-মাতার উচিত প্রত্যেক সন্তানের অধিকার প্রদান করে নিজে সুখে থাকা এবং সন্তানদেরকে সুখে রাখা। আর ইসলাম ধর্মই প্রত্যেক মানুষের অধিকার বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেছে। আল্লাহ যেন সবাইকে তাওফিক দান করেন।
ষ লেখক : প্রভাষক, জালালাবাদ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসা, সিলেট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।