Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিটিআরসি কেন অপারেটরদের পক্ষপাতিত্ব করছে- গণশুনানীতে প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৯, ৭:৪২ পিএম

গ্রাহকরা অপারেটরদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনছে তার পক্ষে মতামত না দিলেও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) কেন অপারেটরদের পক্ষপাতিত্ব করছে সে প্রশ্ন তুলেছে গণশুনানীতে অংশগ্রহণকারীরা। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত গণশুনানীতে এই প্রশ্ন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৫০০ জন। এতে গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়া, বাণিজ্যিক খুদেবার্তা ও কল করে বিরক্ত করা, নেটওয়ার্কের নিম্নমান, দ্রুতগতির ইন্টারনেট না থাকা, গ্রামে নিম্নমানের সেবা, কলরেট ও ইন্টারনেটের দাম নিয়ে নানা অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা।

গণশুনানীতে অংশ নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় তিন বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানীর অভিযোগ আজ কেন প্রকাশ করা হচ্ছে? বিটিআরসির’র গণশুনানীর ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও বিটিআরসির কেন এ ধরণের বাধ্যবাধকতা নেই? গ্রাহকরা অপারেটরদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তার পক্ষে অপারেটররা মতামত না দিয়ে কমিশন কেন তাদের পক্ষপাতিত্ব করছে? ভয়েস কলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কমিশনের কাছে জানতে চাইলে কমিশনের উত্তর বিশ্বের দুই-একটি দেশ ছাড়া বাংলাদেশের কলরেট সব চাইতে কম। এমএনপি’র ডিপিং চার্জ কেন? এর উত্তরে কমিশনের বক্তব্য বিষয়টি ভবিষ্যতে খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি বলেন, ৪জি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্পেকট্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু স্পেকট্রামের উচ্চমূল্যের কারণে অপারেটররা নিলামে প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম কিনছে না। এ বিষয়ে কমিশনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। ৪জি’র গতি নিয়ে কমিশনের বক্তব্য ৪জি সেবা পেতে আরো সময় লাগবে। ৫জি নিয়ে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে কমিশন বলেন বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে ৬ মাসের মধ্যে ৫জি চালু করা হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করার দাবী জানালে কমিশনের উত্তর সামাজিক উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দিয়ে হাওর ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ফিক্সড ইন্টারনেট ব্যবসায় নৈরাজ্য ও মূল্য নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে গণশুনানীতে জানান। গণশুনানীতে সংগঠনের পক্ষে বিটিআরসি কাছে মুঠোফোন এসোসিয়েশন বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়। এসব প্রশ্ন হলো- ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে আনিত অভিযোগ ও তার কার্যক্রমের উপর বিটিআরসি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। কলরেট নির্ধারণের জন্য ২০১০ সালে সর্বপ্রথম কস্ট মডেলিং করে কলরেট এর সর্বনিম্ন (ফ্লোর রেট ২৫ পয়সা) ও সর্বোচ্চ (সিলিং রেট ২ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর ১৫ আগস্ট যে কলরেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা কস্ট মডেলিং করা হয়েছিল কিনা? কল রেটের মূল্য নির্ধারণ কমিটি আছে কিনা? কমিটি থাকলে কারা কারা আছে? আমাদের দাবি অনুযায়ী ভয়েস কলরেটের ফ্লোর রেট ২৫ পয়সা ও সিলিং রেট ৬০ পয়সা নির্ধারণের ব্যাপারে বিটিআরসির বক্তব্য কি? ৪জি ইন্টারনেটের গতি ২০ এমবিপিএস থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে সর্বোচ্চ গতি ৫এমবিপিএস বা তার চাইতেও অনেক কম। আবার প্রান্তিক পর্যায়ে ৩জিও পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে বিটিআরসির ভূমিকা কি? ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণের জন্য আমরা জানি একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে কস্ট মডেলিং করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার অগ্রগতি কতটুকু? ইন্টারনেট ও ভয়েস কলরেটের প্যাকেজ নিয়ে গ্রাহকদের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসির করণীয় কি? প্রায় ৭ লাখ রিটেইলার এর কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য বিটিআরসির কি ব্যবস্থা রয়েছে? রিটেইলাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে খুচরা টাকার অযুহাতে সব সময় ১ টাকা বেশি নিয়ে থাকে। তার পরে অপারেটররা রিটেইলারকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য বেজোর সংখ্যা প্যাকেজ প্রদান করে থাকে, এ ব্যাপারে বিটিআরসি ব্যবস্থা নিবেন কি? কলড্রপের যে ড্রাইভটেস্ট রিপোর্ট প্রদান করেছে বিটিআরসি তাতে ৩টি বিভাগের, বাকি ৫টি বিভাগের রিপোর্ট কবে নাগাদ পাওয়া যাবে? আইজিডাব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন ও এমএনপি অপারেটরদের কার্যক্রম কি গ্রাহকরা জানেনা। এসকল অপারেটর রেখে গ্রাহকদের লাভই বা কি? বিশ্বে বেশিরভাগ দেশেই আইজিডাব্লিউ, আইসিএক্স, এনটিটিএন অপারেটর তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে নতুন করে লাইসেন্স প্রদানের কারণ কি? সরকার ৫জি চালু করতে চাচ্ছে, কিন্তু ৫জির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা, অপারেটর কিংবা গ্রাহকরা কি প্রস্তুত? ৫জির প্রয়োজনীয়তা কতুটুকু এ ব্যাপারে বিটিআরসির কোন জরিপ আছে কি? এ মুহুর্তে ৫জির প্রধান সমস্যা তরঙ্গের মূল্য, হ্যান্ডসেট ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক এ সকল সমস্যা নিরসনে বিটিআরসির পরিকল্পনা কি? ভারতে ৪জি হ্যান্ডসেট ডিভাইসে সর্বনিম্ন মূল্য ২০ ডলার হলেও আমাদের দেশে সর্বনিম্ন মূল্য ৯০ ডলার হবার কারণ কি? বাংলাদেশের ব্যবহুত হ্যান্ডসেট ডিভাইসের মান আইএনআরসিপির মান অনুযায়ী করার জন্য বিটিআরসির পরিকল্পনা কি? মুঠোফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা তৈরী করার জন্য বিটিআরসি আজ পর্যন্ত কি কি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে?

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ফিক্স ইন্টারনেট এর মূল্য এক এক এলাকায় এক এক রকম এবং এ খাতে অরাজগতা চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। ফিক্স ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণ ও নৈরাজ্য নিরসনে বিটিআরসির পরিকল্পনা কি? ১ থেকে ৫ বছরের শিশুরা স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে এ থেকে মুক্তির জন্য বিটিআরসির পরিকল্পনা কি?

একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, অপারেটরেরা ২০০ টাকা পর্যন্ত ধার দিচ্ছে। ধার নিয়ে টাকা খরচের পর যতবার ছোট অঙ্কের অর্থ রিচার্জ করা হচ্ছে, ততবার টাকা কেটে নেওয়া হয়। মানুষ ধার নেয় সাধারণত জরুরি প্রয়োজনে। তাই পরিমাণ ৫-১০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। এ সময় বিটিআরসির মহাপরিচালক এ বি এম হুমায়ুন কবির বলেন, ইতিমধ্যে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৫ টাকার বেশি ধার না দিতে বলা হয়েছে।

গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য ২৪ মে আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০২ জন নিবন্ধন করেন। তাদের মোট প্রশ্ন ছিল ১ হাজার ৩১৯টি। গণশুনানিতে উপস্থিত থেকে গ্রাহকেরা মোট ১৭টি প্রশ্ন করেন। এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে ৩০-৩৫টি প্রশ্ন আসে। বিটিআরসি জানায়, সকল প্রশ্ন ও অভিযোগের সুরাহা করে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

শুনানীতে বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক, কমিশনার মোঃ আমিনুল হাসান, মোঃ রেজাউল কাদের, মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মহাপরিচালকগণ নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

এছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ, কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, ভোক্তা অধিকার সংঘ, মোবাইলফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন, বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তাদের এসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিটিআরসির গণশুনানী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ