পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুই বছর আগে সাহসিকতার সঙ্গে ডোবায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার একটি বাস থেকে একাই ৩৫ জনকে উদ্ধার করে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ মিয়া।
বীরত্বের সে গল্প তখন ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পেয়েছিলেন পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বিপিএম পদক। ওই সাহসী পুলিশ পারভেজ স¤প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। আর দুর্ঘটনায় থেঁতলে যাওয়া তার ডান পা কেটে ফেলা হয়েছে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) গত ২৯ মে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল গণি মোল্লা গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুর্ঘটনায় আহত পারভেজের পায়ের পচা ও থেতলে যাওয়া অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি জানান, পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কনস্টেবল পারভেজের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পারভেজের জীবন বাঁচাতেই এই বোর্ডের পরামর্শে পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে পাটি কেটে ফেলা হয়।
গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ও পারভেজের চাচাতো ভাই মাসুম মোল্লা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত ২৭ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার জামালদি বাসস্ট্যান্ডের সামনে পারভেজ হাইওয়ে পুলিশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পাশেই দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাকে গজারিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। দায়িত্ব পালনের সময় একটি বেপরোয়া কাভার্ড ভ্যান পারভেজকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গুরুতর আহত হন পারভেজ। তিনি ডান পায়ের গোড়ালি ও হাতে মারাত্মক আঘাত পান।
জানা গেছে, পারভেজ আহত হওয়ার পর প্রথমে ‘ট্রমালিংক’র স্বেচ্ছাসেবক তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মানবিক ও সাহসিকতার প্রতীকে পরিণত হওয়ায় পারভেজের এখন সময় কাটছে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে। এবারের ঈদও কেটেছে হাসপাতালের বেডে শুয়ে। হাসপাতালে পারভেজকে সঙ্গ দিচ্ছেন ছোট ভাই মহিউদ্দিন ও মেজো বোন রতœা মণি। বাড়িতে স্ত্রী সাবরিনা জাহান, নয় মাসের মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা, বাবা আর ব্রেন স্ট্রোকের রোগী মা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় পারভেজের সঙ্গে। অর্ধেক শরীরে ব্যান্ডেজ জড়ানো অবস্থায় কথা বলার শুরুতেই শোনালেন দুই বছর আগের সেই সাহসিকতার গল্প।
পারভেজ বলছিলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমার পঙ্গুত্ব পরিবারের জন্য অন্ধকার ডেকে এনেছে। পরিবারে আমিই একটু পড়াশোনা করেছিলাম। আল্লাহর রহমতে পুলিশে চাকরি পাই। জানি না এক পা নিয়ে কীভাবে পুরো পরিবারের ভার বহন করব। পারভেজের ছোট ভাই মো. মহিউদ্দিন বলেন, তার পায়ে আরেকটি অপারেশন আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে করা হতে পারে। চিকিৎসকদের বলেছি, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করতে, শুধু তাকে ফিরে পেতে চাই। পারভেজের বোন রত্না মণি জানান, আইজিপি ও ডিআইজি স্যার সব সময় খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, প্রায় এক থেকে দেড় মাস ভাইকে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। জেনেছি তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে এখানকার চিকিৎসকরা সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার হলেও পারভেজের অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক আবদুল গণি মোল্লা বলেন, পচন ধরায় অস্ত্রোপচার করে পারভেজের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হলেও ওপরের অংশেও পচন আছে। অবস্থা খারাপ হলে আরও কাটা লাগতে পারে। পারভেজকে নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করবে তারা। সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, পারভেজের পুনর্বাসন পুলিশ বাহিনীতেই করা হবে। তার কম্পিউটারে দক্ষতা ভালো। প্রয়োজনে সে দায়িত্ব দেওয়া হবে তাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।