পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কমিটি বিলুপ্ত করে বয়স নির্ধারণ করে দেয়ার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে কার্যালয়ে আসা ছাত্রদলের সাবেক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে লাঞ্ছিত করা, কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে অশালীন ভাষায় গালাগালি, নিজ ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মারধর করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের নতুন কমিটির জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিক্ষুব্ধ সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সাথে বৈঠক করেও কোন সমাধান করতে পারেননি।
ছাত্রদলের বিক্ষোভের সময় নয়াপল্টনে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, পথচারি, দোকানদার অনেকেই প্রশ্ন করেন- এতোদিন কোথায় ছিল এই ছাত্রদল? তারা বলেন, খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর কোনদিন তো ছাত্রদলের এতোগুলো নেতাকর্মী একসাথে হতে দেখিনি। এরা কি শুধু পদের জন্যই রাজনীতি করে? ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এটিকে যতটা না ছাত্রদলের অসন্তোষ তার চেয়ে বেশি সিন্ডিকেটের সুযোগ সন্ধানী ঘুঁটি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিএনপি নেতাদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের সময় ছাত্রদলের নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু দলীয় কার্যালয়ে তালা দেয়ার জন্য শত শত নেতাকর্মী উপস্থিত। সে সময় তারা মামলা, পুলিশের কারণে বের হতে পারেন না। এখন কার্যালয় অবরুদ্ধ করতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, যারা আজকে কার্যালয়ে বিক্ষোভ করছে, কালকে কর্মসূচি দিলে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছাত্র সংগঠনটি এখন পদলোভীদের কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন তারা।
বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘিরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপির একাধিক সিন্ডিকেট। এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নিতে মাঠে নেমেছেন তারা। যে কোনো মূল্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে বের করে দিয়ে দফতর দখলে নিতে চাচ্ছেন। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের। এজন্য ইতোমধ্যে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা (স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রভাবশালী সম্পাদক) বিক্ষুব্ধদের সাথে পৃথকভাবে কথা বলেছেন, তাদের উস্কানি দিয়েছেন। রিজভীকে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়ার আন্দোলনেও পেছনে সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা। তাদের ইন্ধনে ঐক্যবদ্ধ গতকাল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ছাত্রদল। খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর কোন সভা-সমাবেশের ডাকও দেয়নি সংগঠনটির নেতারা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানোর জন্য দু’একটি ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করেন তারা। যেসব মিছিল গুটানো ব্যানার খুলে মেলে ধরার আগেই শেষ হয়ে গেছে। এমনকি গত ২৯ মে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সাথে বৈঠকের ডাক দিলে ৭৩৬ সদস্যের মধ্যে দুই শতাধিকও সেই সভায় যোগ দেয়নি। এছাড়া কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যের তথ্য-প্রমাণ সবই হাতে পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব কারণে গত ৩ জুন ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তারেক রহমানের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত ও কাউন্সিলের নির্দেশনা দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান রুহুল কবির রিজভী। বিগত দিনগুলোতে ব্যর্থতার কারণে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে যারা ২০০০ সালে এসএসসি পাস করেছে তাদের দিয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র (২০০০ সালের আগে এসএসসি পাস যাদের) নেতারা।
ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিক্ষুব্ধ নেতারা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে দলের বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এদের মধ্যে- সিনিয়র একজন নেতা, দুইজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী তিনজন সম্পাদক, একটি অঙ্গসংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদল নেতাদেরকে আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা বিক্ষুব্ধদের বোঝান রুহুল কবির রিজভী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে কমিটি বিলুপ্ত করেছে এবং তুলনামূলক কম বয়সীদের দিয়ে কমিটি করতে চায়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে কয়েকদফা বৈঠকে এ ব্যাপারে রিজভীর কাছে জবাবদিহি চাইতে সবাইকে দফতরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে একপর্যায়ে রিজভী আহমেদকে কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রদলের বিক্ষুপ্ত কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব শর্ত জানান।
সিন্ডিকেটের আশ্বাস পেয়ে গতকাল সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়ার পর বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেন। এমনকি সিনিয়র নেতাদেরও কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি তারা। অবশ্য বিকেলে বিএনপির স্থাায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ অসুস্থ্য রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে যান। তারা চলে যাওয়ার পর কার্যালয়ে ফের তালা লাগানো হয়। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে সেখানেই অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন কার্যালয়ের নিচ তলায় অনশনেও বসেন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দাবি, ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে। ছাত্রদলের দেওয়া তিনটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে নতুন কমিটি করতে হবে। তিন প্রস্তাব হলো- বয়সের সীমা না রাখা, স্বল্পমেয়াদী কমিটি গঠন এবং কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও কলেজের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে হবে।
তারা ‘সরকারের দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান’, ‘আমাদের অধিকার দিতে হবে দিতে হবে’, ‘সিন্ডিকেট মুক্ত কমিটি চাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে শুরু করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়েছিল বলে তার বিরুদ্ধেও অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধরা। রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ্য অবস্থায় দলীয় কার্যালয়েই আছেন। সেখানেই গত কয়েকদিন ধরে তার চিকিৎসা চলছে।
জানা যায়, ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব বেলা ১১টার দিকে কার্যালয়ের সামনে এলেও বিক্ষোভের মুখে পড়ে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এসময় কয়েকজনকে লাঞ্ছিতও করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরআগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস আদালতে হাজিরা দিয়ে কার্যালয়ের সামনে এলে বিক্ষুব্ধদের সামনে পড়েন। তাদের দাবির কথা শুনে সেখান থেকে চলে যান তারা। সাবেক নেতাদের মধ্যে খায়রুল কবির খোকন ও আজিজুল বারী হেলাল সকালে বিক্ষোভ শুরুর আগেই কার্যালয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টা দিকে তারা অফিস থেকে বেরিয়ে এলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কিছু সময় নয়া পল্টনে হোটেল ভিক্টোরির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ছাত্রদলের সাবেক এই নেতারা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে তারা লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ভ‚ত পরিস্থিাতি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় বিকেলে চারটার দিকে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ সিনিয়র কিছু নেতাকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নেন সাবেক ছাত্রনেতারা। সেখানে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বৈঠক হয় বিক্ষুব্ধ ও সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে। বৈঠকে বিক্ষুব্ধদের দাবি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন সাবেকরা। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে একদিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না। এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় কর্মসূচি চলবে বলেও জানানো হয়।
ছাত্রদলের বাতিল হওয়া কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট সাংবাদিকদের বলেন, এটা আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। হঠাৎ করে ঈদের আগে এই কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আমাদের দাবি বয়সের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা না রেখে ধারাবাহিক কমিটি হতে হবে।
ফজলুল হক মিলন বলেন, বিক্ষোভ থাকতেই পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। তাদের দাবি থাকতে পারে, যৌক্তিকতাও থাকতে পারে। এটা সমন্বয় করে বাস্তবায়নের দিকে আমরা যাচ্ছি। শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, যারা বিক্ষোভ করছেন, তারা আমাদের ছোট ভাই। আমরা সমস্যা সমাধানের কাজটি অবশ্যই করব। বয়সসীমা প্রসঙ্গে এ্যানি বলেন, এটা তো আমার একার বিবেচনার বিষয় নয়, এটা তাদের সাথে আলোচনা করেই সমাধান ও সমন্বয় হতে পারে।
এদিকে সকালে তালা দেয়া কার্যালয়ের ভেতর থেকে ১০জন বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা। এরমধ্যে ভেতরে থাকা ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়নকে বিক্ষুব্ধরা বেধড়ক মারধর করে তৃতীয় তলা থেকে নামিয়ে আনেন। পরে বিক্ষুব্ধরা নয়নকে ঘিরে রেখে সিএনজিতে উঠিয়ে দেয়। বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে কার্যালয়ের তালা খুলে ভেতরে ঢুকেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। এদের মধ্যে ছিলেন বিলুপ্ত কমিটির এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার রহমান কবির, আসাদুজ্জামান আসাদ, ওমর ফারুক মুন্না, মফিজুর রহমান আশিক, আবুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, বায়েজিদ আরেফিন প্রমূখ। বিক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, আমরা ৯/১০ জনকে বের করে দিয়েছি। আমরা দীর্ঘদিন ছাত্র দল করি, কোনো পদবী নাই। এতো দিন থেকেছি কিন্তু যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে আমরা চিনি না। তারা টোকাই ও বহিরাগত। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।