পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুঁজিবাজারের অস্থিরতা, বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র সাধারণের কাছে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপকারভোগীদের অধিকাংশই হলেনÑ পেনশনভোগী, বৃদ্ধ, দুস্থ ও অসহায় নারী। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কিছুটা বাড়ানোর পরও বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের ঝোঁক কমেনি। তবে বর্তমানে একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন, কিনছেন তার চেয়েও বেশি। আর এসব কিনছেন নামে বেনামে। একই সঙ্গে যাদের সুবিধা পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছেন না। আর এরই অংশ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে কিছু সংস্কার করা হবে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমছে না। ইতোমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলেও ১ জুলাই থেকে এই গতি আরও বাড়বে। সংস্কার কার্যক্রমে সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের ডাটাবেজ তৈরি, কেনার সময় করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বর্তমানে একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন, কিনছেন তার চেয়েও বেশি। আর এসব কিনছেন নামে বেনামে। বিনিয়োগ হচ্ছে অবৈধ টাকা। ফলে, এই খাতে স্বল্প আয়ের মধ্যবিত্ত, পেনশনে যাওয়া ব্যক্তিরা সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পাচ্ছেন না। বরং নামে বেনামে ধনীরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন। প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা যাতে এর উপকারভোগী হয় সে জন্য সুদ না কমিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কি হবে তা নীতি নির্ধারকরা ঠিক করেন। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। তবে জনপ্রতি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেওয়া অংকের বেশি যাতে কেউ বিনিয়োগ করতে না পারে সে জন্য কিছু সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে এর কাজও শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ জুলাই থেকে সারাদেশে অনলাইন লেনদেন শুরু হচ্ছে। এছাড়া, স্থাপন করা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রণয়ন করা হচ্ছে কঠোর নীতিমালা। এরইমধ্যে এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সব লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হবে। এর বাইরে নতুন করে আরও কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছর থেকে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। কারণ, এই খাতে কালো টাকা বা অবৈধ টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। এসব কারণে নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব সংস্কার কাজের পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে শুধু ঢাকা শহরে চলতি মাস থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বেচাকেনা শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ক্রেতাদের টিআইএন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও মোবাইল ফোন নম্বর সংযুক্ত করা। এতে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচায় কিছুটা ধীরগতি এসেছে।
ঢাকা অঞ্চলে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন জমা দেওয়ার নিয়ম কার্যকর হয়েছে। তবে এ নতুন পদ্ধতি পুরোনো সঞ্চয়পত্রধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আগামী ১ জুলাই থেকে সারাদেশে এ পদ্ধতি চালু করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ১৫ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারী ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচী বিভাগ থেকে জারি করা এ নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে জেলা শহরে সঞ্চয়পত্র স্কিম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের সব কার্যালয় ও শাখাকে লেনদেন শুরু করতে হবে। ১ জুন থেকে অনলাইন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতির বাইরে সঞ্চয়পত্র বেচাকেনা না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, টিআইএন থাকলেই কর দিতে হবে না। করযোগ্য আয় হলেই কেবল কর দিতে হবে। সংস্কারের ফলে নামে বেনামে ডাকঘর, সঞ্চয় অফিস ও ব্যাংকের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ হবে। বিনিয়োগের উৎস জানতে না চাওয়ার কারণে এ খাতে যে কালো টাকা বিনিয়োগ হতো তা বন্ধ হবে। ভিন্ন ভিন্ন অফিসের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি লেনদেন হওয়ায় তা ধরা যাচ্ছিল না। সঞ্চয়পত্র খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ রোধ, ধনী ও কর্পোরেট শ্রেণীর হাত থেকে সঞ্চয়পত্রকে রক্ষা, ঋণ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো ও অধিক সুদ পরিশোধে বাজেটের ওপর থেকে অতিরিক্ত চাপকে কমাতেই মূলত নানামুখী সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রসঙ্গত, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের কমপক্ষে প্রতি দুই মাস অন্তর সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে সরকার। এ হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা।
এতে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। তবে, দেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ‘পরিবার সঞ্চয়পত্রে’। এতে সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো নারী এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। পাঁচ বছর মেয়াদী ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র দেশের যে কোনো নাগরিক কিনতে পারেন। একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে এই দুই সঞ্চয়পত্রে। এছাড়া, পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদী তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। এর আগে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে দুই শতাংশ করে কমানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।