Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদিক থানায় অভিযোগ

সিংড়া (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সিংড়া উপজেলার আগপাড়া শেরকোল গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত জেরে পিতাকে খুনের পর ছেলেকে খুনের পরিকল্পনার অভিযোগে সিংড়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারি আনোয়ার হোসেন আলীরাজ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সিংড়া (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা।

জানা যায়, আজগর আলী ও তার স্ত্রী নকিরন নেছা ১৯৫৭ সালে সাবেক দাগ ৬৯২ হাল ৪৮০ দাগের ৩৪ শতাংশের কাত ১৩ শতাংশ ও সাবেক ৯৫৮ হাল ১২০২ দাগের ২৯ শতাংশের কাত ১৯ শতাংশ জমি ক্রয় করে ভোগদখল ও বসবাস করতে থাকেন। আর এস রেকর্ডে যৌথ নামে রেকর্ড না হয়ে ওই দাগগুলোর পুরো জমি নকিরন নেছার নামে রেকর্ড হয়ে যায়। তাদের কোন সন্তানাদি না থাকায় বিষয়টিকে তখন গুরুত্ব দেননি আজগর আলী। ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করলে ১৯৭১ সালে দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে আনোয়ার হোসেন জন্ম নেয়। তার জন্মের পরেই বড় মা নকিরন নেছা সতিনের ছেলে আনোয়ার হোসেনকে বড় মা (পিতার প্রথম স্ত্রী) নকিরন নেছা ১৬ শতংাশ জমি দান করেন। ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পাকবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৯৭২ সালের পর তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর প্রায় ১৬ বছর পর প্রতিবেশী আফছার আলি দাবি করেন নকিরন নেছার মৃত্যুর আগে তিনি ২৫ শতাংশ জমি কিনে নিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেয়া প্রত্যয়নপত্রে দেখা গেছে নকিরন নেছা ১৯৭২ সালের পর দলিল দাতার মৃত্যুর প্রায় তিন বছর পর আফছার আলী গং কিভাবে ভূয়া দলিল করলেন তা নিয়ে এলাকায় ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তারা এলাকার অত্যন্ত প্রভাশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পাননা। ১৯৯১ সালে জোরপূর্বক ওই জমি দখল নিতে গেলে নাটোর আমলী আদালতে (সিংড়া কোর্টে) আফছার আলীর ভূয়া দলিলের বিরুদ্ধে মামলা দয়ের করেন আজগর আলী। মামলা চলাকালিন ১৯৯৩ সালে ৫ ছেলে-মেয়ে রেখে হঠাৎ করেই মারা যান তিনি। আজগর আলির ছেলে-মেয়েরা এতিম হয়ে গেলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রতিবেশী আফছার আলী আইনজীবীর যোগসাজসে মামলা ডিসমিস করে দিয়ে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেয় আফছার আলী গং।

চোখের পানি মুছতে মুছতে আজগর আলীর ছেলে-মেয়েরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তার ধারে কলাপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতে থাকে। ১৯৯৬ সালে কবির হোসেন নামে এক প্রতিবেশীর (বর্তমান ইউপি সদস্য) নিকট থেকে দেড় হাজার টাকা ধার নিয়ে সংবাদপত্রের ব্যবসা শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। ২০০১ সালে চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি রেজাউল উল করিম রেজা ও একুশে টিভির নাটোর জেলা প্রতিনিধির সহযোগিতায় সাংবাদিকতায় নিয়ে আসেন। পিতার মৃত্যুর ২৩ বছর পর আজগর আলির ছেলে সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আলীরাজ চলতি বছর ওই মামলার নথিপত্র ও আফছার আলির দলিলের জাবেদা নকল তুলে জানতে পারেন ওই দলিলের দাগ-খতিয়ান কোনটাই সঠিক নেই এবং ১৯৭৫ সালে অন্য লোককে নকিরন নেছা সাজিয়ে ভূয়া দলিল করে নিয়েছেন। আনোয়ার হোসেন আলিরাজ পিতা-মাতার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ও নিজ নামীয় জমি ই নামজারি করে নিয়ে দখলে গেলে ভূয়া দলিল গ্রহিতা আফছার আলী দলবল নিয়ে এসে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আলীরাজ বাদি হয়ে ১ জুন পিতার মৃত্যুর রহস্য উৎঘাটন ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সিংড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পর সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আলীরাজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, যদি আমার পিতা জীবিত থাকতেন, তা হলে ওই সময়েই আফছার আলী গং ভূয়া দলিলের অভিযোগে জেলে যেতেন। তাই আমার ধারনা হয়তো বা ওই ভূয়া দলিল জায়েজ করতে আমার পিতাকে খুন করা হয়েছে। অথবা তাদের মানসিক নির্যাতনে তিনি মারা গেছেন। তিনি আরও বলেন, পিতা জীবিত থাকাকালে আমাদের বাড়ির টিনের ঘর, কাঁসার থালা ও নগদ টাকাসহ অনেক মুল্যবান গহনা লুট করে নিয়ে গেছেন আফছার আলী গং। বিষয়টি গ্রামের অনেকেই জানেন।

সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ