Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ঈদুল ফিতরের ছুটি উদযাপনে ঈদের চতুর্থ দিনেও রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিশেষ করে হাতিরঝিল, লালবাগকেল্লা ,চিড়িয়াখানায় ও আহসান মঞ্জিলসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছোট বড় হাজারো মানুষের ঢল নামে। অন্য সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ দর্শনার্থী ঐতিহ্যবাহী লালবাগ কেল্লায় দেখা যায়। সর্বত্রই দেখা যায় কেবল মানুষ আর মানুষ। একই অবস্থা হাতিরঝিলসহ অন্যান্য স্পটগুলোতেও। সরেজমিনে ঘুরে এ এমন দৃশ্য দেখা যায়।
গতকাল দুপুরের পর থেকে হাতিরঝিলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দীর্ঘ লাইন ধরে কেউ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বা চক্রাকার বাসে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ সবুজ গাছপালা বেষ্টিত সুন্দর পরিবেশে ফুটপাতে পরিবার পরিজন নিয়ে হাঁটছেন, কেউ ওয়াটার বাসে চড়ছেন আবার কেউবা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অপেক্ষা করছেন। অন্য সময়ে হাতিরঝিলের ফুডকোডগুলো প্রায় জনশূন্য থাকলেও গতকাল বিকাল প্রতিটি ফুডকোডে ছিল অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি। এ সময় খেলনা, ওজন মাপার মেশিন, ভাসমান ফাস্টফুড, চটপটি, ফুচকা, আচার ও ঝাল মুড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের হকারদের উচ্চস্বরে হইচই করে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা যায়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমিতে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে তৈরি হাতিরঝিলে এখনও পর্যন্ত বিনোদনের তেমন কোনো সুব্যবস্থা না থাকলেও ইতোমধ্যেই ঈদ পূজা-পার্বণসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটির দিনে হাতিরঝিলে সাধারণ মানুষের কাছে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস ও ওয়াটার বাসে দীর্ঘ লাইন। এ দুটির কোনোটিতেই উঠতে না পেরে অনেকেই ফুটপাত ধরে হাঁটছেন। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বিকেলে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে শিশুদের নিয়ে নির্মূল পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোর জায়গার খুবই অভাব। তবে হাতিরঝিলের চারপাশে সবুজের সমারোহ, গাছে রঙিন ফুল ও পাখিদের কলরব শুনতে খুবই ভালো লাগে। এ কারণে ঈদ ছাড়াও ছুটির দিনে প্রাইভেটকার নিয়ে সপরিবারে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসেন তিনি।
শাহাদাত হোসেন জানান, হাতিরঝিলে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে খুবই ভালো লাগে।রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমবারের মতো হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক তোতা মিয়া। তিনি বলেন, দুপুরের পর এখানে এসে প্রথমেই স্ত্রীকে নিয়ে ওয়াটার বাসে বেগুনবাড়ি থেকে পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যার পর ওয়াটার লাইট প্রদর্শনী দেখে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান।
লালবাগ কেল্লায় তিনগুণ দর্শনার্থী : ঈদুল ফিতরের ছুটি উদযাপনে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন নগরবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ওমর। জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান, অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দর্শনার্থী। দর্শনার্থীদের টিকিট দিতে ব্যস্ত সময় কাটছে। এ জন্য কথা বলার সময়ও পাচ্ছেন না ওমর। দেখা যায়, দর্শনার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে নিচ্ছেন। সারিবদ্ধভাবে কেল্লার প্রবেশ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করছেন। লাইনে দাঁড়ানো কারও মাঝে বিরক্তির ছাপও দেখা যায়। কিছুটা গরম থাকলেও তা উপেক্ষা করেই কেল্লার ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিনোদনপ্রেমী নগরবাসী।
রাজধানীর অদূরে সাভার থেকে আসা রাসেল-বৃষ্টি দম্পতির সঙ্গে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছুটির সময় কাটাতে এসেছেন লালবাগ কেল্লায়। এ দম্পতি কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, বাচ্চাদের টিকিটও একই মূল্য রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছোট বাচ্চাটার টিকিট লাগেনি। তবে আমার ছেলেটাও তো ছোট, ওর জন্যও টিকিট নিতে হয়েছে। কাজের ব্যস্ততায় বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। ঈদের ছুটিতে সব কিছুই বন্ধ। তাই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসেছি এ কেল্লাটি দেখানোর জন্য। এমন বেশ ক’জন দম্পতির বিরতি দেখে টিকিট কাউন্টারে জানতে চাইলে বলা হয়, ৫ বছরের উপরের বাচ্চাদের জন্য অবশ্যই টিকিট নিতে হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় লালবাগ কেল্লার কাস্টোডিয়ান হালিমা আফরোজের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্ট্যাডি ট্যুরে আসলে অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের অনুমতি নিয়ে যদি শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম ও আইডি কার্ড নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে আমরা ৫ টাকা মূল্যের টিকিটে কেল্লা দর্শনের ব্যবস্থা করে থাকি। যেহেতু এখন ঈদের সময় ইউনিফর্ম পরে আইডি কার্ড নিয়ে কেউ আসছে না। তাই ৫ বছরের উপরে হলেই টিকিট নিতে হবে। কেল্লার এ কাস্টোডিয়ান জানান, সাধারণ সময়ে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার দর্শনার্থী হয়ে থাকে। বিগত দুই দিন অর্থাৎ ঈদের দ্বিতীয় দিন সাড়ে ১৬ হাজার দর্শনার্থী হয়েছিল। গত শুক্রবার হয়েছিল ১৫ হাজার ৪০০ মতো দর্শনার্থী। অন্য কোনো ছুটি ছাড়া শুক্রবার প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার দর্শনার্থী থাকে বলেও জানান তিনি।
চিড়িয়াখানায় জনস্রোত : ছুটির দিনে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদের চতুর্থ দিনে রেকর্ড পরিমাণ বেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। এর আগে বৃহস্পতিবার শুক্রবার সকাল ৮টা থেকেই স্রোতের মতো মানুষ চিড়িয়াখানা অভিমুখে ছুটে আসে। চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম জানান, চিড়িয়াখানায় তিলধারণের জায়গা নেই। প্রতিটি খাঁচার সামনেই উপচে পড়া মানুষের ভিড়। তিনি জানান, জিরাফ, সিংহ ও বাঘের খাঁচার সামনেই সবচেয়ে বেশি ভিড়। তবে কোনো খাঁচার সামনে মানুষ নেই এমন খাঁচা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজও দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি।
জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে চিড়িয়াখানার প্রবেশদ্বার খোলা হলেও তার আগে থেকেই চিড়িয়াখানায় অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশুরা ছুটে আসে। ৩০ টাকার টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বেলা যত বাড়তে থাকে মানুষের ভিড় ততই বাড়তে থাকে। ১৪টি টিকিট কাউন্টারের প্রতিটিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ