Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনায় প্রাণের মেলা সুন্দরবন পর্যটন স্পট

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের করমজলসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর বৃষ্টির মধ্যেও ৫ দিনের ছুটি মাথায় রেখে সুন্দরবনে আসতে শুরু করেন দেশী-বিদেশী পর্যটক।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেও এখন বনজুড়ে রয়েছে পর্যটকের ঢল। তাদের এ আনাগোনা থাকবে আরো বেশ কয়েকদিন বলে জানিয়েছেন বনবিভাগ। পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শিশু কিশোর, নারী পুরুষসহ নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহি ষাটগম্বুজ মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের বারাকপুর এলাকায় সুন্দরবন রিসোর্টসহ জেলার সব বিনোদন কেন্দ্রে সব বয়সের দর্শনার্থী বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। দর্শক টানতে বিনোদন কেন্দ্রে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে রাখা হয়েছে কুমিরসহ নানা ধরনের পশুপাখি। এবার বাগেরহাটে প্রায় সাড়ে ছয়শ বছরের পুরানো ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীর বেশি ভিড় দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসে ঐহিত্যবাহী এ মসজিদ দেখতে।
এদিকে, আকাশে কখনও কালো মেঘ, কখনও সূর্যের উঁকি আর বিকেল না হতেই মানুষ ছুটে আসছে খুলনার খানজাহান আলী (র.) সেতুতে (রূপসা সেতু)। সন্ধ্যায় যা জনস্্েরাতে রূপ নেয়। তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষের মিলন মেলা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে রূপসা সেতু এলাকা। কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন স্মৃতির পাতায়। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে রূপসা সেতু।
অপরদিকে, যানজট ও কোলাহলহীন ঘুরে বেড়ানোর মাঝে অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন নির্মল আনন্দ। সেতুর দুই পাড়ে শিশুরা যেমন কাটাচ্ছে আনন্দময় সময়, বড়রাও অবসর সময়টা উপভোগ করছেন হাসি আর আড্ডায়। কতো মনোরম প্রকৃতির বিন্যাস। চারিদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। নীল আকাশ ক্ষণে ক্ষণে মেঘে ঢেকে যায়। তারই মাঝে আবার সূর্য উঁকি দেয়। তারই মধ্যে লেকের স্বচ্ছ পানির বুকে মাছের ছোটাছুটি। এ যেন এক মনোরমা সময়। শহরের কোলাহল ছেড়ে এমন দৃশ্য দেখতে খুলনার পশুর নদীর পাড়ে ওয়াইসি রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক কর্ণারে এসেছেন অনেকে। নানান গাছ-গাছালিতে ঘেরা এ রিসোর্টে আছে পুকুরে শান বাঁধানো ঘাট, লেকে নৌকায় বেড়ানোর ব্যবস্থাসহ অবকাশ যাপনের কটেজ। বড়রা এতে বেড়িয়ে যেমন মুগ্ধ হন, তেমনি ছোটরা মিনি শিশুপার্কের বিভিন্ন খেলনায় চড়ে বেশ আনন্দ পায়।
এছাড়া মিনি চিড়িয়াখানায় বানর, বিদেশি কুকুর, পাখি, কবুতর, তীত পাখি, ঘোড়া দেখে ছোটরা খুব আনন্দ করছে। গ্রামের আবহের মধ্যে কৃত্রিম শৈল্পিকতার নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করা বক, ব্যাঙ, ডাইনোসর, মাছরাঙা পাখি, কুমির দেখে ছোটরা মজা পায়। বড়রা তুলছেন সেলফি। তবে সবচেয়ে বেশি মনোমুগ্ধকর হলো রিসোর্টের সামনে নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য। অনেকে নৌবিহারে এ নদী পথে রিসোর্টে এসেছেন। ওয়াইসি রিসোর্টে দর্শনার্থীর ভিড়।
করমজল বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আর পর্যটন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ফরেস্টার আজাদ কবির জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবকিছু মিলে টানা দীর্ঘ ছুটি। আর এ ছুটিতে এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪ সহস্্রাধিক পর্যটক করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসছে। এ ছাড়া বনের হাড়বাড়িয়া, হিরণপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী ও দুবলাচরসহ বিভিন্ন স্পটে প্রচুর দর্শনার্থীর ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে যেতে পারছেনা ভ্রমণ পিপাসুরা। আর তাই এ ভিড়টা করমজল অফিসকেই সামাল দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক বনের কর্মচারিদের। তারপরও পর্যটকের নিরাপত্তায় নিরলস কাজ করছেন তারা। এ ছাড়াও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে করমজল পর্যটন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটিও বাতিল করে তাদের ঈদ করা হয়েছে অফিসে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দরবন ভ্রমনে আসা পর্যটকরা সাধারনত মংলা হয়েই বনে প্রবেশ করে থাকেন। আর মংলা থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান হলো সুন্দরবনের করমজল। এখানে রয়েছে কুমিরসহ বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র। যাতে রয়েছে মায়াবি হরিণ, বানর, ৭/৮ ফুট সাইজের লবণ ও মিষ্টি পানির কুমির। এগুলো দেখার পাশাপাশি উপভোগ করা যায় বনের হরেক রকম সৌন্দর্য্য। যেসব পর্যটক অধিক ব্যায়ে বনের গহীনে যেতে পারেন না তারা স্বল্প খরচেই করমজল ঘুরে দেখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ