Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাওরবাসীর মনে নেই ঈদ আনন্দ

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় নেত্রকোনা জেলার হাওরবাসীর মনে নেই তেমন ঈদের অনাবিল আনন্দ। নেত্রকোনা জেলা মূলত ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত। এ জেলায় উৎপাদিত ধান কৃষকের সারা বছরের চাহিদা পূরণ করেও অর্ধেকেরও বেশী ধান অন্যান্য জেলায় রপ্তানী করতে পারে। নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চলে গত বছর আগাম বন্যায় তাদের একমাত্র বোরো ফসল সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যায়। ধান পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে মাছে ব্যাপক মড়ক দেখা দেয়। গত বছর ধান ও মাছ হারিয়ে হাওরাঞ্চলের কৃষকের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে যায়।

হাওরাঞ্চলের কৃষকরা আবারো ঘুরে ধারানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাংক, মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ এবং আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো আবাদ করে। কিন্তু এবার আগাম বন্যায় ধানের ক্ষতি না হলেও কোল্ডইঞ্জুরির কারণে ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দেয়। ফলে কৃষকরা এক কাটা জমিতে যেখানে ৬/৭ মন ধান পেত, সেখানে তারা মাত্র ১/২ মন ধান পেয়েছে। এছাড়াও সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সময়মতো সরাসরি ধান ক্রয় না করায় কৃষকরা বাজারে ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক হারুন-অর-রশিদ জানান, গত বছর আগাম বন্যায় ফসল হারিয়েছি। এ বছর ধানে চিটার কারণে তেমন ধান পাইনি। যাও পেয়েছি তারও ন্যায্য মূল্য নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে ঈদ করবো ভেবে পাচ্ছি না।

শালদিঘা স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র রাসেল জানান, এবার ঈদে আমি বাবার কাছে শার্ট-প্যান্ট কিনে দেয়ার কথা বলেছি। নতুন শার্ট-প্যান্ট পড়ে আনন্দ করবো।

খালিয়াজুরী সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সালমা আক্তার জানান, ঈদের দিন নতুন জামা কাপড় পড়ে বান্ধবীদের নিয়ে ব্যাপক আনন্দ করে সময় কাটাব।

লেপসিয়া গ্রামের হাসেম জানান, আমি তিন মন ধান বেচে আমার মেয়ের জন্য ১২শ’ টাকা দিয়ে থ্রিপিস কিনে দিয়েছি। বউয়ের কথা না হয় বাদ দিলাম, ছেলেকে কি দিয়ে শার্ট-প্যান্ট কিনে দেবো তার হিসাব মিলাতে পারছি না।

বল্লী গ্রামের সালাম জানান, মহাজনের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছিলাম, সেই ঋণ দিতেই সব শেষ হয়ে গেছে। হাতে টাকা পয়সা নেই। ছেলে মেয়েদের মুখে ক্যামনে হাসি ফোটাব ভেবে পাচ্ছি না।

বোয়ালী গ্রামের আবুল কালাম জানান, ইতোমধ্যে হাওরে পানি এসে গেছে। ঈদের দিন জামাত পড়ে বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাব।

আমানীপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনলে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পেতো। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মনের আনন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারতো।

উদয়পুর গ্রামের জেলে জব্বার মিয়া জানান, হাওরে গত বছর মাছের মড়ক দেখা দেয়ায় এবং চলতি বছর মাছের ডিম না ফোটায় তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যা মাছ পাই তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চলে না। আমাদের মতো গরীব মানুষের ঘরে ঈদের আনন্দ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ