পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাড়ির টানে ফিরছে মানুষ। বাস, ট্রেন লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়। সিডিউল বিপর্যয়ে শিডিউল বিপর্যয়ে ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। গতকাল রোববার সকালে বৈরী আবহাওয়ার কারণে লঞ্চের যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সড়কপথের যাত্রা অন্যান্যবারের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তির। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট না থাকার কারণে সড়কপথের যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানজটের কারণে বিকাল থেকে ভোগান্তির জন্ম দিয়েছে।
এদিকে, গতকাল কমলাপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তিনটি ট্রেনকে ঈদের আগে আর শিডিউলে ফেরানো সম্ভব নয়। সকালে ১১টায় মন্ত্রী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। তিনি বলেন, সারাদেশের ৫৫টি ট্রেনের মধ্যে মাত্র তিনটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় বেশি নয়। গতকাল রোববার সকালে ধূমকেতু, সুন্দরবন, নীলসাগার এক্সপ্রেস ট্রেন বিলম্ব করেছে। এর মধ্যে নীলসাগার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে যাত্রা শুরু করে। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রী জানান, এ অবস্থায় ট্রেনকে আগামী দুদিনের মধ্যে আর শিডিউলে ফিরিয়ে আনা যাবে না।
মন্ত্রী আরও বলেন, দেরি করা ট্রেন তিনটির বিকল্প কোচ ও ইঞ্জিন নেই। যে কারণে এই মুহূর্তে আর শিডিউল ঠিক রাখা যাবে না। তবে অন্যান্য সব ট্রেন ঠিক সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ মনে করছে, আজ সোমবার সবচেয়ে বেশি চাপ যাবে। এদিন বাড়ি ফিরতে সবচেয়ে বেশি মানুষ স্টেশনমুখী হবেন। আগামী ৫ জুন ঈদ না হলে ৪ জুন সন্ধ্যা থেকে দেওয়া হবে পরের দিনের টিকিট।
মহাসড়কে যানজট নেই
এদিকে, এবারই প্রথম মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নতুন তিনটি সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা গোমতী সেতু দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে। আগে এই তিনটি সেতু পার হতে ৩/৪ ঘণ্টা বা কোনো কোনো সময় আরও বেশি সময় লাগতো। অন্যদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে। তবে এই মহাসড়কের ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে কিছু যানজট আছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও অন্যান্যবারের মতো যানজট নেই। পুলিশ জানায়, ফোর লেনের নির্মাণকাজের জন্য কয়েকটি অংশে সড়ক সরু হওয়ায় যানবাহন সেখানে ধীর গতিতে চলায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে যানজট যাতে কোনোভাবে দীর্ঘস্থায়ী না হয় সেজন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মানুষের ঢল সদরঘাটে
এদিকে, গতকাল দুপুরের পর থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে সদরঘাটে। লঞ্চে জায়গা পেতে অনেকেই সকালে ছুটেছেন সদরঘাটের দিকে। যদিও সকাল থেকে ঘণ্টা দুয়েক বৈরী আবহাওয়ায় থেমে ছিল ঈদযাত্রা। পরে ঝলমলে আবহাওয়ায় সদরঘাটে যাত্রীদের ঢল নামে।
দুপুরে সদরঘাটের আগে রায়সাহেব বাজার থেকেই চোখে পড়ে নৌপথের যাত্রীদের। হাত ও কাঁধে একাধিক ব্যাগ, কারো মাথায় বস্তা, মালামাল নিয়ে স্ত্রী-সসন্তানসহ চলছেন লঞ্চের দিকে। দুপুর পর্যন্ত সদরঘাটে যাওয়ার সড়কগুলো ছিল অনেকটাই যানজটহীন, তবে ওইসব সড়কে গাড়ির চাপ ছিল। বেলা ১১টার দিকে সদরঘাটে দেখা যায়, যাত্রীরা আসতে শুরু করেছেন। ঘাটে থাকা কয়েকটি লঞ্চের ডেক যাত্রীতে প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে কিছু সময়ের পরই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়ে ঝড়োহাওয়া বইতে থাকে, সঙ্গে নামে বৃষ্টি। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য ২ নম্বর সংকেত জারি করে আবহাওয়া বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে সদরঘাট থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে দুপুর ১২টার দিকে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, এখন লঞ্চ যাত্রীপূর্ণ হলেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আমরা আগেই ঘাট ছাড়ার নির্দেশনা দিচ্ছি।
দুপুরের মধ্যেই সদরঘাটের মূল ঘাটে থাকা ঢাকা-কালাইয়া রুটে চলাচলকারী বন্ধন-৫, ঢাকা-চরফ্যাশন রুটের কর্ণফুলী-১৩, ঢাকা-হাতিয়া রুটের ফারহান-৪, ঢাকা-বোরহানউদ্দিন রুটের প্রিন্স অব জাহিদ-৭, ঢাকা-ভোলা রুটের কর্ণফুলী-৪, ঢাকা রাঙ্গাবালী রুটের জাহিদ-৪ লঞ্চ যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়।
দুপুরের পর সদরঘাটে যাত্রীর চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে। অনেককেই লঞ্চের ছাদে চাদর বিছিয়ে বসতে দেখা গেছে। বন্ধন-৫ লঞ্চের যাত্রী মো. রাকিবুর রহমান। বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের মৈশাদী গ্রামে। রাকিব বলেন, কাজের তাগিদে শহরে থাকি, মা-বাবা গ্রামে থাকেন। তাই গ্রামে যাওয়া ছাড়া আমাদের ঈদ অপূর্ণ। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে সদরঘাটে এসেছি। ডেকে কোনো রকমে বসার জন্য একটু জায়গা পেয়েছি।
সদরঘাটে দায়িত্ব পালনকারী বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা মনে করছেন, সদরঘাটে সর্বোচ্চ ভিড় হবে আজ সোমবার। মঙ্গলবারও যাত্রীর প্রচন্ড চাপ থাকবে। এর মধ্যেই গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সদরঘাট পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সদরঘাট পরিদর্শনে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের সার্বিক প্রস্তুতি যেটা নিয়েছি; শিমুলিয়া, আরিচা ও সদরঘাট যতটুকু পর্যবেক্ষণ করেছি আমরা সন্তুষ্ট। সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছি।
পাটুরিয়ায় ভোগান্তি শুরু
এদিকে, গতকাল সকাল থেকে পাটুরিয়াঘাটে শুরু হয়েছে ঘরমুখোমানুষের স্রোত। সকাল ৯টার দিকে বৃষ্টি আর ঝড়োবাতাসে প্রায় এক ঘন্টা ব্যহত ছিল ফেরি ও লঞ্চ চলাচল। যার ফলে পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।
দুপুরের আগেই ঘাটে সারি সারি বাস-কোচের লম্বা লাইন দেখা যায়। বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত বড় গাড়ির লাইন ঘাট ছাড়িয়ে চলে যায় প্রায় দুই কিলোমিটার। তবে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশী। ছোট বাসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পাটুরিয়া ৫ নং ফেরিঘাট। ঘাট ছাড়িয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। এতে চরম দুভোর্গের শিকার হচ্ছেন ছোট গাড়ির যাত্রীরা।
ঘাটে অবস্থানরত গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী আকাশ বলেন, ঘাটে আড়াই ঘন্টা ধরে বাসের ভেতর বসে আছি। কখন ফেরি পাবো আর কখনইবা বাড়ি ফিরতে পারবো জানিনা। বাসের ভেতর বসে থাকতে আর ভাল লাগছে না। আমাদের যাত্রীদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।