Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঘরে ফিরছে মানুষ

সড়কপথে নেই যানজট : ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পরা ভিড়। এর মধ্যে ট্রেনে চাপ সবচেয়ে বেশি। সড়কপথে এবার ভোগান্তি অনেকটাই কম। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নেই। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো যানজট ছিল না। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কেও যানজটের খবর পাওয়া যায় নি। সব মিলে এবার অনেকটাই স্বস্তিতেই মানুষ যাত্রা করতে পারছে।

গত ২৩ মে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর যারা কাঙ্খিত টিকিট হাতে পেয়েছিলেন, সেসব ঘরমুখো মানুষই গতকাল শনিবার পরিবার-পরিজন নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে এসেছিলেন। সকাল থেকে অল্প কিছু বিলম্বে ট্রেন ছেড়ে গেলেও চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে। এজন্য নীলসাগরের যাত্রীদের অপেক্ষার সাথে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে।

রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ১ ঘণ্টা বিলম্বে ১০টার পরে ছেড়ে যায়। তবে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত শুক্রবার প্রায় ৭ ঘণ্টা বিলম্ব করার পর রেলমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার। সেই অনুযায়ি শুক্রবার রাতেই ডাউন রংপুর এক্সপ্রেস নামে বিকল্প একটি রেক রংপুর থেকে চালিয়ে দেয়া হয়। এতে করে বিলম্ব অনেকটাই কমে আসে। তবে ট্রেন বদল করায় অনেক যাত্রীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আহমেদ তাহের নামে এক যাত্রী বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি, কিন্তু রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি সিট আর এই এসি সিট এক নয়। তাহলে আমার এত ভোগান্তি সহ্য করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে কী লাভ হলো? এছাড়া, ওই ট্রেনে এসির যতগুলো সিট এই ট্রেনে ততগুলো নেই। তিনি বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকিট কাটা থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত প্রতিবছর নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এর যেন শেষ নেই।

এদিকে, চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস প্রায় ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তাদের মধ্যে একজন আশিক। তারা তিন বন্ধু একসঙ্গে বাড়িতে যাচ্ছেন। আশিক বলেন, একবার ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছি। এখন ট্রেন লেটের কারণে স্টেশনে বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আসলে আমাদের সিস্টেমই খারাপ। বিশ্বের কোনো দেশে মনে হয় ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য মানুষকে এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয় না। ভোগান্তি নিরসনে এক অ্যাপ বানানো হলো, কিন্তু যাত্রীরা আশানুরুপ সুফল পেলেন না। আশিকের বন্ধু বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রমজান মাসে দীর্ঘক্ষণ স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে বড় বিড়ম্বনা আর কিছু থাকতে পারে না।

যানজট নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে
ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। মানুষের চাপ সামাল দিতে সমহারে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যাও। তবে দুটি মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পরই এই দুই মহাসড়কের দৃশ্য পাল্টে যায়। আগে এই তিন সেতু পার হতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যেত। কিন্তু এখন এই সেতু পার হতে সময় লাগে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। মূলত এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধ্যমে এবার মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছে।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজট নিরসন ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ ও ৪৫০ কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক মহাসড়কে যানজট নিরসন করতে ও সুশৃঙ্খলভাবে যাতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল করে, সেজন্য দায়িত্ব পালন করছেন।

গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজট নেই। আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত আট লেনের সড়ক থাকলেও কাঁচপুর পুরনো সেতুতে যানবাহন চলাচল করত এক লেনে। যে কারণে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকত। কিন্তু চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় শিমরাইল মোড়ে এবার কোনো যানজট নেই।

অন্যদিকে মেঘনা টোল প্লাজা ও কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজায় প্রতিটি ঈদ উৎসবে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের নাকাল হতে হতো। কিন্তু ঈদযাত্রার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেয়ায় এ সড়কে কোনো যানজট নেই। সকাল থেকে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে।
এ ব্যাপারে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম আলী সরদার জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের ছুটির আগে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। যে কারণে দুদিন ধরে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তিনি বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই যানবাহনের চাপ বাড়ছে। তবে এবার তিনটি সেতু খুলে দেয়ায় মানুষ যানজট ছাড়াই স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারেছ।

অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলায় রাস্তায় ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে যানবাহন চলাচলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো যানজট ছিল না।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চাপ বাড়ছে
নাড়ির টানে ছুটে চলা মানুষের যাত্রা শুরুর দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে গণপরিবহনের চাপ বাড়ছে। তবে এ মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি। এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করছে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।

জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের ২৬টি জেলার অন্তত ৯০টি সড়কের যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ২০১৩ সালে দুই লেনের এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৬ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুটি সার্ভিস লেন, ২৯টি নতুন ব্রিজ, চারটি ফ্লাইওভার ও ১৪টি আন্ডারপাস সংযুক্ত হওয়ায় কাজটি এখনও চলমান রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে মানুষ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক হয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৫ হাজার ১৮৬টি যানবাহন চলাচল করেছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৪০ আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সংখ্যা ১১ হাজার ৩৪৬টি।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিন শনিবার এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের চাপ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে মহাসড়কে যানজট না থাকলেও কিছু কিছু স্থানে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় ওই সকল স্থানে যানবাহন চলাচল করছে একটু ধীরগতিতে। এ সত্তে¡ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ঈদ সামনে রেখে রেল, সড়কপথের মতো নৌপথেও ঢাকা ছাড়ছে লোকজন। শনিবার সকাল থেকেই যাত্রীরা সদরঘাটে আসতে থাকেন। বেলা যত এগোচ্ছিল বাড়ছিল যাত্রীর সংখ্যা। দুপুরের মধ্যে ঘাটে থাকা বেশিরভাগ লঞ্চ যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়।

সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড়
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রী পরিবহনের জন্য দেড় শতাধিক লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে লঞ্চগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। শুক্রবার থেকে এ ভিড় আরও বেড়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্যাগ-বস্তাসহ পন্টুনে বসেছিলেন মকবুল হোসেন। তিনি ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, তার বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। স্ত্রী ও দুই সন্তান গ্রামের বাড়ি থাকেন। তিনি জানান, সকাল ৯টা থেকে সদরঘাটে এসে পন্টুনে বসে আছেন। কোনো লঞ্চ এখনও ঘাটে আসেনি। তবে দুপুরের পরে একে একে লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে বলে যাত্রীরা জানান। সন্ধ্যায় বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা করা একজন যাত্রী বলেন, দুপুরের আগেই বেশিরভাড় যাত্রী সদরঘাটে এসেছে। একে একে লঞ্চ আসছে আর যাত্রীরা ধাক্কাধাক্কি করে লঞ্চে উঠছে। ভিআইপি যাত্রীদেরকে তাই কর্তৃপক্ষ আগেই সদরঘাটে আসার জন্য অনুরোধ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও লঞ্চে ভিড় বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ