Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন টাকায় ঠগবাজি

জমজমাট গুলিস্তানে নতুন টাকার হাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ২:০৪ পিএম, ১ জুন, ২০১৯

ঈদ মানেই নতুন পোশাক। আর নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন টাকা না হলে যেন জমে না। পকেটে নতুন টাকার নোট থাকলে মনও প্রফুল্ল থাকে। শিশুদের ঈদের আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েকটি নতুন নোট। সালামি ছাড়াও দান-খয়রাতের জন্যও নতুন টাকার চাহিদা রয়েছে। তাই ছোট-বড় সবার কাছেই ঈদে সালামি হিসেবে নতুন টাকা পছন্দ। দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে।
ঈদ এলেই নতুন টাকা বদলে নিতে ব্যাংকগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করে জনসাধারণ। পাশাপাশি ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ঝামেলাসহ নানা হয়রানি এড়াতে অনেকেই মতিঝিল, গুলিস্তানসহ ফুটপাথে বসে থাকা নোট কারবারিদের কাছে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে নতুন নোট ক্রয় করেন। কিন্তু অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে কারবারিদের কাছ থেকে নতুন নোট ক্রয় করেও ঠকছেন ক্রেতারা। কারবারিরা অতি মুনাফা করতে নতুন নোটের মধ্যে জাল নোট এবং নোট কম দিয়ে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছে।
ভুক্তভোগী লোকমান হোসেন ভূঁইয়া নামে এক নতুন নোট ক্রেতা জানান, মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ থেকে থেকে ১০০, ২০ এবং ১০ টাকার কয়েকটি নতুন নোটের বান্ডিল যথাক্রমে অতিরিক্ত ৫০, ৭০ এবং ৮০ টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করি। ঝামেলা এড়াতে বেশি দামে নতুন নোট ক্রয় করলেও বাসায় গিয়ে টাকা গুনে দেখা যায় প্রতিটি বান্ডিলে ৪-৫টি নোট কম। লোকমান হোসেন কারবারিদের এ ধরনের জালিয়াতি রোধে সবাইকে নতুন নোট ক্রয়ের সময় টাকা গুনে নেয়ার আহ্বান জানান।
জুয়েল নামে এক গ্রাহক জানান, ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা এড়াতে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে গুলিস্তানের কারবারির কাছ থেকে ১০০০ টাকার বান্ডিলে তিনি একাধিক জাল নোট পেয়েছেন। বাসায় নিয়ে টাকা গুনে জাল নোট পেয়ে তিনি কাউকে কিছু বলতেও পারেননি। কারণ, জাল নোটের বিষয়টি কারবারির কাছে এসে বললে নিজেকেই কিনা বিপাকে পড়তে হয়- এই ভয়ে তিনি আর অভিযোগ করেনি। জুয়েল হোসেন এ ক্ষেত্রে ফুটপাথের নতুন নোট কারবারিদের জালিয়াতি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
সূত্র মতে, ঈদ উপলক্ষে দালালদের নতুন নোট নিয়ে ব্যবসা বন্ধ এবং গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৫ সালে আঙুল থেরাপি (আঙুলের ছাপ) চালু করে। কিন্তু তা কাজে আসছে না। কারণ ‘সর্ষের ভেতরে ভূত’ প্রবাদের মতো বাংকে কর্মরত এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাই দালালদের কাছে নতুন নোট সরবরাহ করছেন নানা কৌশলে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট সরবরাহে কঠোরতা গ্রহণ করলেও দালাল চক্র ভিন্নপথে টাকা উঠাচ্ছে এবং ব্যাংকের সামনেই খোলা বাজারে ফেরি করছে। সূত্র আরো জানায়, এসব কারবারি ঠিকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাধ্যমে বাগিয়ে নিচ্ছেন নতুন টাকা।
রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় খোলা আকাশের নিচে সারিবদ্ধভাবে বসে নতুন নোট ‘কেনাবেচা’ করে থাকেন তারা। ছেঁড়া, অচল ও বড় নোট রেখে বাড়তি কিছু টাকার বিনিময়ে নতুন নোট সরবরাহ করে থাকেন নতুন টাকার এসব কারবারি। এই হাট ছাড়াও গুলিস্তানের সুন্দরবন মার্কেট এলাকা ও মতিঝিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনেও নতুন নোটের কারবারিদের দেখা যায়।
এ ছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ কয়েকটি প্রধান শহরেও কারবারিরা মানুষের কাছে নতুন টাকা বিনিময় করে থাকেন। অভিযোগ আছে, এসব বাজারে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার জাল নোটের লেনদেন হয়। যদিও এভাবে টাকা লেনদেনের কোনো বৈধতা নেই, বরং আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। তবুও যুগ যুগ ধরে এক শ্রেণীর লোক নতুন টাকার নোট কেনাবেচা করছেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। সেখান থেকেই টাকা সংগ্রহ করে তারা বিক্রি করেন খুচরা ও পাইকারি হিসেবে। সিরাজুল ইসলাম নামে গুলিস্তানের এক নতুন নোট কারবারি জানান, সারা বছর কোনো রকমে ব্যবসা ধরে রাখি। ঈদ উপলক্ষে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে নতুন টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। ঈদে মানুষ বাড়ি যাওয়ার সময় বড় নোটের বিনিময়ে নতুন খুচরা নোট নিতে আসে। এ সময় ব্যবসায় ভালো হয়। তবে তিনি জাল নোট এবং নোট কম দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুই ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নোট কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রেতারাও ব্যস্ততার মধ্যে দ্রুত নতুন নোটের বান্ডিল নিয়ে চলে যায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতি মুনাফার লোভে কারবারিরা বান্ডিলে জাল টাকা দিয়ে দেয় এবং নোটের সংখ্যা কম দেয়।
তিনি বলেন, জাল নোটের তৎপরতা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তদারকি করছে। তবে নোট সংখ্যা যাতে কম দিতে না পারে, সেজন্য অবশ্যই ক্রেতাকে টাকা গুনে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।



 

Show all comments
  • Hasib Wahid ১ জুন, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
    ব্যাংকে পাওয়া যায় না। অথচ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বিক্রি করে কেমন দুর্নীতিতে ভরা এই দেশ কল্পনা করোন এবার।
    Total Reply(1) Reply
    • MAHMUD ১ জুন, ২০১৯, ৯:২৪ এএম says : 4
      Bhai, deser sob dik dia UNNOYONER JOAR bohitese. Amra sudu joare vasite thakibo.
  • অনির্বাণ আরিফ ১ জুন, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
    ধরেন আপনি খুব গরীব। আপনার ঈদের বাজেট বলে কিছু নেই। কেউ একজন আপনাকে একটি জামা দান করলেই আপনার ঈদ চমৎকারভাবে কেটে যাবে। ধরেন আপনি নিম্নবিত্ত। আপনার ঈদের বাজেট খুব কম। আপনি কোনমতে রাস্তার পাশে হকারের কাছ থেকে একটি জামা, একটি প্যান্ট কিনে ঈদটাকে সাধারণ ভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবেন। ধরেন আপনি মধ্যবিত্ত। আপনার একটি ছোট জব আছে। আপনার একটি সোসাইটি আছে। আপনার একটি ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। আপনার ঈদের বাজেট ও আছে। অথচ আপনার পকেটে মাসশেষে টাকা নেই! কিন্তু আপনার মা, বাবাকে আপনার ঈদ গিফট দিতে হবে। ছোট ভাই - বোনকে ঈদ গিফট এবং ঈদ সালামি দিতে হবে। হয়তো আপনার ভাগ্নে - ভাগিনাও থাকতে পারে। তারাও আপনার কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করে। আবার হুট করে খুব কাছের কেউ আপনার কাছ থেকে ঈদ সালামি চাইতে ও পারে। সেজন্য পকেট সব সময় ফোলা রাখতে হবে। কিন্তু আপনার কাছে সত্যি ই কোন টাকা নেই। এটা না পারবেন কাউকে বলতে না পারবেন বিশ্বাস করাতে। এটাই মধ্যবিত্ত। প্রতিদিন ব্যালেন্স করে চলতে হয়। প্রতিদিন খালি পকেটকে বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে রাখতে হয়। ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে ফ্যাশনেবল স্যুট পরে ঠাঁট বজায় রেখে হাঁটতে হয়। স্যোশাল মেইনটেইন করতে হয়। সার্কেল মেনটেইন করতে হয়। কী করবেন! আপনাকে শুধু বেঁচে থাকলেই হবে না সামাজিকভাবে বেঁচে থাকতে হবে। অথচ আপনি খুব গরিব বা নিম্নবিত্ত হলে অসামাজিক ভাবে বেঁচে থাকলেও চলতো। কোনমতে চলে যেতো!
    Total Reply(0) Reply
  • Rokonul Haque ১ জুন, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
    এই ধরনের টাকা কেনা বেচা করা অর্থাৎ একই ধরনের টাকার বিনিময়ে সেই একই টাকা অতিরিক্ত মুল্যে বেচা কেনা করা এটি ইসলামী শরিয়াতে হারাম কেননা এই অতিরিক্ত টাকা যা নেয়া হয় সেটি সূদের অন্তর্ভুক্ত। আর সুদ দাতা গ্রহিতা উভয়েই এই পাপের ভাগিদার। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Hmd Alamgir ১ জুন, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ব্যাংক এই বছর ৪২ কোটি টাকা নতুন নোট ছাড়ছে কিন্তু সেই নতুন নোট ব্যাংকে থাকার কথা, কিন্তু ব্যাংকে না থেকে আছে ফুটপাতে। ব্যাংকের কর্মকর্তা রা সেই নতুন নোট দিয়ে ব্যবসা শুরু করছে। দূর্নীতিতে দেশটা ভরে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • আরিফ হাসান ১ জুন, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    ইসলামী শরিয়তে সমমূল্যের টাকা অর্থাৎ বাংলাদেশী ১০০ টাকার নতুন বান্ডিল ১০০ টাকার অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ক্রয় যেমন- ঢাকার গুলিস্তানসহ বিভিন্ন জায়গা ১০টাকার একটি বান্ডিল কিনতে গেলে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দিতে হয় এটা জায়েজ নয়। এটা সুদ হবে। আর সুদকে আল্লাহ হারাম করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Taslima Siddik Ratna ১ জুন, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    ব্যাংক গেলে বলে নতুন টাকা এইবার আসেনি অতচ রাস্তা পবাযাই। এরে নাম ব্যাংক সেবা
    Total Reply(0) Reply
  • Shanto AkaSh ১ জুন, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    টাকা কিনতে হবে কেনো, এটা কি ধরনের ব্যবসা। ব্যাংকে গেলে বলে নাই, আসেনাই, কিন্তু রাস্তায় লাখ লাখ টাকা বিক্রি করছে কিভাবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ