পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উজবেক ছাত্রী লুইজা মুমিনজোনোভা দেশের বিকাশমান ইসলামিক পর্যটন ক্ষেত্রে কাজ করতে চান। কিন্তু গত বছর রাজধানী তাশকেন্তের (তাসখন্দ) একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ১৯ বছর বয়স্কা এ তরণীর একমাত্র অপরাধ হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলিম হওয়া ও মাথায় হিজাব পরা।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, তাদের কত বড় সাহস যে শুধু ধর্মের কারণে তারা আমার সাথে বৈষম্য করছে। আমার ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে বাধা পেয়ে মুমিনজোনোভা থেমে যাননি। তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন যা তাকে উজবেকিস্তানের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিতর্কের কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। তার পরিবার উজবেকিস্তান আন্তর্জাতিক ইসলামিক একাডেমিতে মামলা করেছে। তারা এখন এ আইনি লড়াইকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।
উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মির্জিইয়োয়েভ-এর অধীনে সূচিত রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে উজবেকদের প্রকাশ্যে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনের প্রস্তুতি ক্রমেই জোরদার হয়েছে। মুমিনজোনোভার মামলা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সোভিয়েত আমলে উজবেকিস্তানে দীর্ঘদিন ধর্মীয় কঠোর দমন চলে। ১৯৯১ সালে মস্কোর কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পরও দমন বহাল থকে। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্টের সময়ে তা ব্যাপক ভাবে শিথিল করা হয়েছে।
দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ইসলাম করিমভ ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের ব্যাপারে বিতৃষ্ণ ছিলেন। মানবাধিকার গ্রুপগুলো তার ধর্মীয় কঠোরতার সমালোচনা করে। ১৯৯০ দশকে ইসলামপন্থীরা করিমভের শাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানায়। ১৯৯৯ সালে উপর্যুপরি বোমা হামলার ব্যাপারে তাদের দায়ী করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত উজবেক ইসলামিক স্টেটসহ ইরাক ও সিরিয়ায় লড়াইরত জঙ্গি গ্রুপগুলোতে যোগদান করে।
পরিবর্তিত সময় : করিমভের মৃত্যু ও ২০১৬ সালে ক্ষমতায় মির্জিয়োয়েভের আগমনের পর সরকার মুসলমানদের ধর্ম পালনে উপর আরোপিত কঠোরতা শিথিল করে। গত বছর এক দশকেরও বেশি সময় পর উজবেকিস্তানে মসজিদগুলো থেকে প্রথম নামাজের সময় আজান দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। গত মাসে ঐতিহাসিক তারমেজ শহরে একটি মাজার পরিদর্শনের সময় মির্জিইয়োয়েভ ধর্মের প্রতি কর্তৃপক্ষের অতীত দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘আমাদের ট্র্যাজেডি’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসলাম আলোর প্রতীক।
উজবেকিস্তানের তিন কোটি ৩০ লাখ অধিবাসীর ৯০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম। দেশে বিশেষ করে প্রদেশগুলোতে সামাজিক রক্ষণশীলতা গভীর। ইসলামী পুনরুজ্জীবনের আবহাওয়ায় সম্প্রতি স্কুলের পোশাক রক্ষণশীল ও ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থকদের মধ্যে লড়াইয়ের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
গত বছর মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য হাঁটুর নিচে ঝুল সম্বলিত সর্বজনীন স্কুল ইউনিফর্ম চালুর নির্দেশ জারি করা হয়। এর পরপরই সেপ্টেম্বর মাসে এক টেলিভিশন রিপোর্টে স্বল্প ঝুলের স্কার্ট পরার জন্য শিক্ষিকা ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করা হয়। এ রিপোর্ট সামাজিক মাধ্যমে বিস্ফোরক বিতর্ক সৃষ্টি করে। টিভি চ্যানেলের পরিচালকের পদাবনতি করা হয়। একই মাসে স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরার অধিকার প্রদানের আহ্বান জানানো রক্ষণশীল ব্লগারদের আটক করার খবর পাওয়া যায়।
স্কুল থেকে বহিষ্কার : লুইজা মুমিনজোনোভা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাকেসহ আরো ৯ জন ছাত্রীকে বহিষ্কারকারী বিশ^বিদ্যালয় প্রায় শ’খানেক নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রীর জন্য একটি শর্ত আরোপ করেছে। তারা বলেছে হয় তোমাদের মাথার রুমাল খুলে ফেলতে হবে, না হয় বহিষ্কার হতে হবে।
কিন্তু তিনি এ নির্দেশ না মানায় তাকে ডরমিটরি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তাকে ক্লাসে যোগদানেরও অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, হিজাব না পরার নির্দেশ জোর করে আমার ধর্ম ত্যাগ করানোর মত। পরিহাসের বিষয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় বিষয় শিক্ষার উপর জোর দিয়েছে। যে দেশের নাগরিকরা দশকের পর দশক ধরে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক চলছে সে দেশে পরবর্তীতে যা ঘটেছে তা উল্লেখ করার মত।
লুইজা মুমিনজোনোভার পরিবার তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্বহাল ও তার হিজাব পরার অধিকার দিতে বিশ^বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আশ্চর্য ব্যাপার যে একটি স্থানীয় আদালত তার মামলার শুনানি করতে রাজি হয়। শুনানির সময় মুমিনজোনোভার প্রতি সংহতি প্রদর্শন করতে কয়েক ডজন হিজাব পরিহিতা মেয়ে ও তাদের মায়েরা আদালত কক্ষের কাছে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু জেলা ও সিটি কোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় মুমিনজোনোভার পরিবার মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গেছেন।
অনেকেই এখনো কারাগারে : ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে অনেকটাই উদার পদক্ষেপ গ্রহণ করায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর গত বছর ‘সুনির্দিষ্ট উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে উজবেকিস্তানের নিষেধাজ্ঞা-বহনকারীর তকমা অপসারণ করেছে। কিন্তু এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন বলেছে যে ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন চলছে। পররাষ্ট্র দফতরকে সুপারিশ করেছে যেন উজবেকিস্তানকে উত্তর কোরিয়া ও সউদী আরবের মত নজরদারি তালিকায় রাখা হয়।
আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপ মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে অধিকতর ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদানের ব্যপারে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য নয়া প্রশাসনের সাথে সংলাপ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্য এশিয়া গবেষক স্টিভ সোয়ার্ডলো আখ্যান- সাক্ষ্য উদ্ধৃত করে বলেন যে মির্জিইয়োয়েভ ক্ষমতায় আসার পর কারাগারগুলো থেকে শত শত ধর্মীয় বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা মনে করেন, উগ্রপন্থী অভিযোগে যাদের জেল দেয়া হয়েছে তাদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তা করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন করা হয়েছে। সোয়ার্ডলো বলেন, বহু সংখ্যক মানুষ (ধর্মীয় বন্দি) এখনো কারাগারে রয়েছেন।
লুইজা মুমিনজোনোভাকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের পর তার শিক্ষাবর্ষের এক বছর পেরিয়ে গেছে। তার পরিবারের আইনজীবী আবদুভাহোব ইয়াকুভভ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিচার বিভাগ মামলাটি বিলম্বিত করছে। উল্লেখ্য, তার নিজের মেয়েও একই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, মার্চে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের উচিত ছিল ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের শুনানি করা। কিন্তু তা করেনি। এদিকে অনমনীয় মুমিনজোনোভা বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থা যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে যাবেন। তিনি বলেন, আর আমরা চুপ করে থাকব না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।