Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুই-সুতায় জীবনের গল্প মানিকগঞ্জেই

এএফএম নূরতাজ আলম বাহার, মানিকগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৯, ১২:৪৫ এএম

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন নকশী শিল্পীরা। ঈদ সামনে রেখে পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর শাড়িতে নকশা ভরাটের কাজে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন মানিকগঞ্জ জেলার নকশীশিল্পীরা। মানিকগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে তাদের হাতের তৈফর করা পোষাক রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শো-রুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে।

আর এসবের কারুশিল্পী হচ্ছেন গ্রামের গৃহিণী ও স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। যারা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের মাধ্যমে পরিবারের ও সমাজের অর্থনৈতিক অবলম্বন তৈরিতে অবদান রাখছেন। বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে রমজান মাসে মানিকগঞ্জের সুই সুতার মহিলা শিল্পীদের কদর বেড়ে যায়।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সিল্ক, মসলিন ও আদি কর্টন পাঞ্জাবিসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের গলা ও হাতের কারুকাজ করা হচ্ছে। আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, নকশী ও আড়ং ব্র্যান্ডসহ ছোট বড় অন্তত ৪০টি ব্যান্ডের পাঞ্জাবির কারুকাজ করছেন অসচ্ছল পরিবারের এসব নারী শ্রমিক।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে মানিকগঞ্জে শুরু হয়েছিল পাঞ্জাবি-ফতুয়া আর শাড়ির গায়ে সুই-সুতা দিয়ে নকশা বুননের কাজ। শুরুতে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুস্থ নারীদের এ কাজে প্রশিক্ষণ দেয় বেসরকরারি সংস্থা ব্র্যাক। নিজস্ব বিপণন কেন্দ্র আড়ংয়ের মাধ্যমে এসব পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করে সংস্থাটি। এরপর ব্যক্তিগণ ও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শুরু হয় পাঞ্জাবির ভরাট কাজ। এভাবেই গত দুই দশকে এই নকশার কাজে ঘটে গেছে নীরব বিপ্লব।

শুরুর দিকে কাজটিকে ছোট করে দেখা হলেও বর্তমান সময়ে সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পাল্টে গেছে। সময়ের সাথে সাথে অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী এই কাজে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন নিজেরা আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে স্বাভলম্বী হচ্ছেন এবং ঠিক তেমনী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এখানকার নকশাতোলা পাঞ্জাবি-ফতুয়া বিক্রি হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। রফতানি হয় পাশ^বর্তী দেশ ভারত, কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে।

সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের রহিমা বেগম জানান, নকশার আকার অনুয়ায়ী একেকটি পাঞ্জাবিতে ভরাট কাজ করে পাওয়া যায় ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা। একেকটি পাঞ্জাবি নকশা করতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। এসব ছাড়াও তারা শাড়ি, থ্রি পিস সেলাইও করে থাকেন। বাড়ির গৃহস্থালি কাজ শেষ করে সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য এ কাজটি করছেন তারা।

কেউয়ারজানী গ্রামের কলেজছাত্রী নাছরিন আক্তার জানান, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি এই কাজ করে থাকেন। আগে এই কাজে সবাই আসতে চাইতো না। এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ায় অনেক শিক্ষিত তরুণীরাও এই কাজ করছেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নামি ব্র্যান্ডের শোরুমে বিক্রি হয় মানিকগঞ্জের নকশী করা পাঞ্জাবি। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে কে-ক্রাফট, অঞ্জনস, বাংলার মেলা, রং, আর্বুনা, আড়ং, অন্যমেলা, ওজি, বাংলার রং, তুলি, শেকড়, ড্রিম ফ্যাশন ওয়্যার, ডাইজেন, নোঙর, ঋতু বৈচিত্র, নান্দনিক, দেশ কারুপণ্য, খাদি ঘর, মনোরম, নিপূণ, কুমুদিনীসহ বিভিন্ন শোরুম ও বুটিক হাউজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুই-সুতা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ