পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদ এলেই পুরাতন লক্কর-ঝক্কর বাস ও মিনিবাসগুলো হয়ে যায় নতুন। ঈদে যাত্রীদের চাপ থাকে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফিটনেসবিহীন বাসগুলোতে রঙ লাগিয়ে নামানো হয় রাস্তায়। রাজধানীর অধিকাংশ ওয়ার্কশপ বা গাড়ি মেরামতের কারখানায় এখন দারুণ ব্যস্ততা। সবখানেই চলছে পুরোনো ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর বাসগুলোকে রাঙানোর কাজ। হাতুড়ি পিটিয়ে সমান করা হচ্ছে বাসগুলোর বডি। তারপর তাতে দেওয়া হচ্ছে নতুন রঙ। সেগুলো পরিণত হচ্ছে চকচকে ‘নতুন’ গাড়িতে। মিরপুর, কালশি, গাবতলী, আমিনবাজার, পল্লবী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বাড্ডা, রামপুরাসহ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় পুরোদমে চলছে পুরাতন বাস মেরামত করে রঙ লাগানোর কাজ।
ঈদ উপলক্ষে কাল থেকেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করবে ঘরমুখী মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ যাতায়াত করবে বাসে। পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারও সড়কপথে যাতায়াত করবে ৩০ লাখের বেশি মানুষ। এর বিপরীতে বিআরটিএতে নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা ৭৬ হাজার। আর সড়কে ফিটনেসবিহীন মোটরযানের সংখ্যা প্রায় ৭১ হাজার। বিআরটিএ’এর হিসাবে সারাদেশে সড়কে চলছে সাড়ে ৬ হাজার আনফিট বাস। এর মধ্যে বড় বাসের সংখ্যা ৩ হাজার ৭০২। মিনিবাস ২ হাজার ৭৯৮। এই সাড়ে ৬ হাজার ফিটনেসবিহীন বাসই ঈদ এলে নতুন হয়ে যায়। সেই নতুনের সাজগোজ চলছে এখন পুরোদমে। আসছে ঈদুল ফিতরে এসব বাসেই যাতায়াত করবে কয়েক লাখ মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিটনেসবিহীন মোটরযানের সংখ্যা আরো বেশি। তাদের মতে, একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অন্যদিকে মাঝপথে নষ্ট হয়ে যানজট তৈরির শঙ্কা-দুটোই বাড়িয়ে দেবে এসব আনফিট যানবাহন।
প্রতিবছরই ঈদযাত্রায় লঞ্চ ও ট্রেনের পাশাপাশি যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে বাসে। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগান বাস মালিকরা। সারাবছরের ত্রুটিযুক্ত বাসগুলোকে নতুন মোড়কে সাজিয়ে পরিবেশনের এই তো সময়। ঈদযাত্রায় প্রয়োজন প্রচুর যানবাহন, তা অপ্রতুল থাকায় বাস মালিকরা নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো নতুন চেহারায় পথে নামান পুরোনো বাসগুলোকে। যেগুলোর হয়তো ফিটনেসই নেই, সেগুলোই স্রফে রঙের ছোঁয়ায় চালিয়ে দেওয়া হয় নতুন বাস হিসেবে।
নিয়ম অনুযায়ী, মোটরযানের এক্সেল লোড, টায়ারের বিড, গতি, ব্রেক ও ধোঁয়ার রঙ, হেডলাইট, অ্যালাইনমেন্ট, রঙ, আসন সংখ্যাসহ ৬৫ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফিটনেস সনদ দেয় বিআরটিএ। কোনো মোটরযানের ফিটনেস সনদ না থাকলে ধরে নিতে হবে, সেটিতে ত্রুটি আছে। বাস শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ব্যস্ততায় যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করতেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি দিয়ে দেদারছে ব্যবসা চলে। ব্যস্ততার মধ্যে তখন কেউ আর ফিটনেসের খবর রাখে না। মূলত যাত্রীদেরকে আকর্ষণ করার জন্যই গাড়িগুলোকে নতুন করে সাজানো হয়। তবে ফিটনেসবিহীন বাসে রঙ করে পথে নামানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাস মালিকরা। তাদের দাবি ফিটনেস আছে, কিন্তু রঙ ফিকে হয়ে গেছে এমন বাসই কেবল রঙ করে পথে নামানো হচ্ছে। পুলিশের দাবি, সারাদেশে শুরু হয়েছে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান। তাই কেউ চাইলেই ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন বাস চালাতে পারবে না।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া ও রায়েরবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদযাত্রার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সারি সারি ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেখানে খালি জায়গা পেয়েছে সেখানেই দাঁড়িয়ে রঙের কাজ করানো হচ্ছে। রঙ করার আগে টুকটাক ঝালাইয়ের কাজও করানো হচ্ছে। রঙের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরাও এখন দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। দিনরাত গাড়ির রঙের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
রায়েরবাগের রঙমিস্ত্রি আলমগীর বলেন, প্রতিবছর ঈদ এলেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। অনেকে ঈদের দুই-তিন মাস আগ থেকেই চুক্তি করে রাখে। ২৫-২৬ রমজানের মধ্যেই কাজ শেষ করার তাগিদ থাকে। তাই এ সময়ের আগেই আমরা চেষ্টা করছি কাজ শেষ করতে। আবহাওয়া ভালো থাকলে রাতদিন কাজ করি আমরা। একটা গাড়ি দুই-তিনজনে মিলে রঙ করলে এক থেকে দেড় দিন লাগে কাজ শেষ করতে। খরচ হয় ৮/১০ হাজার টাকা। তিনি জানান, গত সপ্তাহে চারটি কোম্পানির বাস মেরামতের কাজ করেছেন।
আরেক রঙমিস্ত্রি জমির উদ্দিন বলেন, যেগুলোর কাজ করেছি সেগুলোর ফিটনেস আছে কি নাই, আমরা তো তা জানি না। আমাদেরকে বলে রঙ করে দিতে, তাই করি। কিন্তু দুয়েকটা গাড়ি রঙ করার সময় দেখি অন্য মেকানিকরা ইঞ্জিনের কাজও করে। কিন্তু বেশিরভাগই দেখি শুধু রঙ করায়। তিনি বলেন, শুধু রায়েরবাগ না এমন কাজ মিরপুর, বসিলা, বাড্ডা, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা, গাজীপুরা এবং সাভারেও দেদারছে চলছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা যথেষ্ট নজরদারি করছি যেন ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ না হয়। তাই ফিটনেসবিহীন কোনো বাস যেন সড়কে না চলতে পারে, সেজন্য আমরা বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসনকে যথেষ্ট সহযোগিতা করব। শুধু ঈদ যাত্রায় নয়, কোনো সময়ই যেন ফিটনেসবিহীন বাস না চলতে পারে, সেজন্য আমরা সোচ্চার রয়েছি।
বিআরটিএর হিসাব মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ফিটনেস সনদ না থাকা মোটরযানের সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৫৮৪। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাস ৬ হাজার ৫০০। এর বাইরে ৩৪৩টি অ্যাম্বুলেন্স, ২২ হাজার ৮২৯টি অটোরিকশা, ১২৮টি কার্গো ভ্যান, ৫৮টি কাভার্ড ভ্যান, ২ হাজার ৫৯৬টি ডেলিভারি ভ্যান, ২ হাজার ৪৩৪টি হিউম্যান হলার, ৩ হাজার ৩৪টি জিপ, ৩ হাজার ৩৬৪টি মাইক্রোবাস, ৩ হাজার ২৪৫টি পিকআপ ভ্যান, ৫ হাজার ৭৯৫টি প্রাইভেট কার, ৯৬৬টি স্পেশাল পারপাজ ভেহিকল, ১৮০টি ট্যাংকার, ৬ হাজার ৬২০টি ট্রাক্টর, ৮ হাজার ৪৮২টি ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন রয়েছে আরো ৪ হাজার ৬৪৪টি।
হাইওয়ে পুলিশ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফিটনেসবিহীন মোটরযান প্রধানত দুইভাবে সড়কে ভোগান্তি বাড়ায়। একটি ব্যস্ততম মহাসড়কের ওপর বিকল হয়ে। যে জায়গায় বিকল হয়, সেখান দিয়ে যান চলাচলের জন্য সড়কের প্রশস্ততা কমে যায়। মাঝরাস্তায় গাড়ি বিকল হলে, সেটি রেকার দিয়ে সরাতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এ সময় সড়কে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট, যা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে আরো কয়েক ঘণ্টা। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের ফিটনেস ঠিক নেই। ব্রেক, চাকা, স্টিয়ারিং, গিয়ারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পার্টস দুর্বল থাকায় যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। ঘটে দুর্ঘটনা। গত তিন ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৮০০ মানুষ। আহতের সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। প্রাণহানির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি করে মানুষের ভোগান্তিও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক মানদন্ডে একটি বড় বাসের গড় আয়ু ধরা হয় ১০-১২ বছর। বিআরটিএতে নিবন্ধিত বাসের হিসাবে দেশে ১০ বছর বা তারচেয়ে কম বয়সী বড় বাসের সংখ্যা ১৯ হাজার ৭০২। একইভাবে ১০ বছর বা তারচেয়ে কম বয়সী মিনিবাস আছে মাত্র ২ হাজার ৯২৫টি। আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া পুরনো বাসগুলোর একটা বড় অংশ এখনো রাস্তায় চলছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। এগুলোকে তারা চিহ্নিত করেছেন ‘ফিটনেস ডিফল্টার’ হিসেবে। প্রতি বছরই ফিটনেস সনদ হালনাগাদ করার কথা থাকলেও এখনো দেশে সাড়ে ছয় হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করছে তা না করেই। এগুলোকে ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ঈদের সময় পুলিশ শুধু যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার বিষয়েই জোর দেয়। এ কারণে যানবাহনের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, তা দেখা হয় না। এ সুযোগেই রাস্তায় আনফিট বাসের পাশাপাশি সিটি বাসও রাস্তায় নেমে পড়ে। শহরের বাস দূরপাল্লায় ও মহাসড়কে চললে সেগুলোর কারণে দুর্ঘটনা, যানজটের ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মাসুদ রহমান বলেন, যারা সড়কে ফিটনেসবিহীন পরিবহন চালাতে চায়, তাদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশকে সতর্ক থাকতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়কে যাতে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সারাবছরই সোচ্চার থাকে। নিয়মিত পরিবহনে কাগজপত্র চেকিং করা হয়। ঈদ উপলক্ষে পুলিশ আরও বেশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। অনাকাঙ্খিত দুর্ভোগ এড়াতে এরই মধ্যে দেশের সব ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন কোনোভাবেই ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন চালক পরিবহন নিয়ে চলাচল করতে না পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।