Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় পণ্যে সয়লাব কুষ্টিয়া অঞ্চল

জমজমাট ঈদ বাজার

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বৃহত্তর কুষ্টিয়া তথা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ১২টি উপজেলা সদর ও অন্যান্য মার্কেটগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা সাধারণের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশী পণ্যের পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বৃহত্তর কুষ্টিয়ার বাজারগুলো সয়লাব।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্ত, মেহেরপুর জেলার গাংনী, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামরহুদা ও জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতীয় চোরাকারবারীরা ভারত থেকে পণ্যসামগ্রী নিয়ে সীমান্ত এলাকায় জড়ো করে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে পণ্যসামগ্রী নছিমন, করিমন, বাস, ট্রাক ও ট্রেনের সাহায্যে কুষ্টিয়ার ১২টি উপজেলায়সহ দেশে অনান্য স্থানেও সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মার্কেটগুলোতে ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে নিয়ে আসা পণ্যসামগ্রী অবাধে বিক্রি চলছে।

শহর এবং শহরতলীর বিপনী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ১০টার পর থেকে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা, সিএনজি ও অটোরিকশার চাপে অধিকাংশ সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর থেকে শুরু হওয়া এনএস রোড কেন্দ্রীক দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় শুরু হয়। প্রচন্ড গরম থেকে রক্ষা পেতে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অভিজাত মার্কেটগুলোতে তরুণ তরুনীসহ সব বয়সী ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। শহরের পরিমল শপিং কমপ্লেক্স, লাভলী টাওয়ারে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা সাধারনের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ মাকের্টে বিভিন্ন ধরনে থ্রিপিস নিতে রুচিশীল মেয়েদের কালার্স ভিউতে ভিড় ছিল লক্ষনীয়। কালার্স ভিউ’র বিক্রেতা শাহরিয়ার ঈমন জানান, ঈদকে সামনে রেখে রুচিশীল ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে তাদের পছন্দের সব আইটেম দিয়েই দোকান সাজিয়েছেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি বিক্রি হবে বলে জানান।

এ সুযোগে বিক্রেতারা এসকল পণ্যের উপর অতিরিক্ত মূল্য চাচ্ছেন বলে জানান ক্রেতারা। শহরের ইসলামিয়া কলেজ ও বঙ্গবন্ধু মার্কেটে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এখানে সব বয়সের মানুষের পোশাকাদির সমারোহ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সমবায় মার্কেট, তমিজ উদ্দিন সুপার মার্কেট, কুষ্টিয়া হাইস্কুল মার্কেট, চাঁদ সুলতানা স্কুল মার্কেট, শতাব্দি ভবন মার্কেট, জেলা পরিষদ মার্কেট, বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট, রজব আলী মার্কেটের দোকানগুলোতেও ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পোশাকের পাশাপাশি থানার সামনে জুতা স্যান্ডেলের দোকানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পোশাকের পাশাপাশি স্বর্ণের দোকানেও ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মত। এছাড়া প্রসাধণীর দোকানগুলোতে নানা বয়সের মেয়েদের ভিড় বেশি। ঈদের বাজার করতে আসা ক্রেতা সাধারণ জানান-বাজারে সব ধরনের পোশাকাদি এবং জিনিসপত্র পাওয়া গেলেও দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার প্রায় সব মার্কেটে একই দৃশ্য লক্ষণীয়।

ঈদুল ফিতরের আনন্দ শতভাগ উপভোগ করতে নতুন পোশাকের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে অনেকেই গজ কাপড় কিনে পছন্দের ডিজাইনের পোশাক বানাতে দর্জি বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। বিশেষ করে নারীরা পোশাকে নিজেকে সাজাতে গজ কাপড় কেনা শেষে ছুটছেন দর্জিবাড়ি। কাপড়ের রং আর শেপ মিলিয়ে অনেকেই লেইস কিনেছেন। সেই সাথে ম্যাচিং করে ওড়না, সালোয়ার তো আছেই। তাই ভিড় এড়াতে শহরের অলিগলিসহ বিভিন্ন মার্কেটের টেইলার্সগুলোতে পোশাকের অর্ডার দিচ্ছে অনেকে। তবে এখন শহরের বেশিরভাগ দর্জি দোকানগুলোতে পোশাক তৈরির অর্ডার নেয়া প্রায় শেষ।

গজ কাপড়ের দোনগুলোতে গিয়ে জানা যায়, এবার তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কাতান, সিল্ক জর্জেট, প্রিন্টের জর্জেট, লিলেন, খাদি, অরগেন্ডির সাথে চুমকি আর সুতার কাজের চিকেন জুটকটন। এসব কাপড়ের মধ্যে গার্জিয়াস বানাতে কাতানের তুলনা নেই। কুষ্টিয়া শহরের বস্ত্রশোভা দোকানের বিক্রয়কর্মী উজ্জল হোসেন বলেন, বাজারে প্রতি গজ সুতি কাতান বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, আর সিনথেটিক কাতান বিক্রি হয় ৩৫০ টাকায়। জুট কটন কাপড় প্রতি গজ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, চিকেন কাপড় প্রতি গজ ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, অরগেন্ডির ওপর কাজ করা কাপড় প্রতিগজ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, সুতির মধ্যে বাটিক আর টাইডার কাপড় প্রতি গজ ৯ থেকে ৪০০ টাকা, সিল্ক টাইডার ২০০ টাকা ও জর্জেটের বাটিক ৪০০ টাকার মধ্যে।

শহরের এন এস রোডের আলামিন টেইলার্সে পোশাক তৈরির অর্ডার দিতে আসা কলেজ ছাত্রী চুমকি বলেন, আমি নিয়মিত এখানে অর্ডার দিই, কারণ এখানকার কারিগরের সেলাই ও কাজ নিখুত। কয়েকদিন পর ঈদ, আর ঈদে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাবো তাই পছন্দের ডিজাইনের পোশাকের অর্ডার দিতে এসেছি। এদিকে অনেকেই মোবাইল থেকে কাটিং মাস্টারকে সালোয়ার কামিজ আর ব্লাউজের নকশা দেখাতে ব্যস্ত। এখানকার কাটিং মাস্টার জানান, গরমের কারণে সুতি পোশাকের ফরমায়েস বেশি। সালোয়ার কামিজ তৈরিতে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে পোশাকের নকশা ও কাপরের প্রকারভেদে মজুরী ভিন্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে আসছে ঈদের আনন্দ শতভাগ উপভোগ করতে পোশাকের দিকে ঝুঁকছে সবাই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ