Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতা বিএনপির কনসালটেন্ট হতে চাচ্ছেন -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৯, ১:০৯ পিএম

সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোঃ নাসিমসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতা পদ খুইয়ে বিএনপির কনসালটেন্ট হতে চাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী ও খাদ্যে ভেজালকারীরা সমাজের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগে ভেজাল ঢুকে গেছে। বিএনপিকে বলবো অগণতান্ত্রিক আন্দোলন না করে, খাদ্যে ভেজাল ও মাদক নির্মূলে আন্দোলন করুন। আমরা আপনাদের ধন্যবাদ জানাব।’ নাসিমসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতার কথাবার্তায় মনে হয় তারা নিজেদের পদ খুইয়ে হতাশায় ভুগছেন। শুধুই বিএনপি-কে উপদেশ দিচ্ছেন। আমার মনে হয় তারা মন্ত্রীত্ব হারিয়ে বিএনপি’র কনসালটেন্ট হতে চাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগকে শুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগে নিজেদের দলের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে লুটপাট, খুন-ধর্ষণ, খাদ্যে ভেজাল ও মাদক ব্যবসায়ে লিপ্ত। এমনকি তাদের কিছু জনপ্রতিনিধিও আছেন যারা মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। গোটা দেশে তাদের বেপরোয়া অপকর্মে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। তা নিয়ে নাসিম সাহেবদের মাথা ব্যথা নেই। এখন বিএনপি তাদের ধ্যান-জ্ঞান। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার জন্য কথাবার্তায় অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। বিএনপি’র কি নিয়ে আন্দোলন করা উচিত সেই উপদেশও দিচ্ছেন। আপনার নেত্রীকে বলুন যেহেতু অনেক দিন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার কারনে আওয়ামী লীগে ভেজাল ঢুকে গেছে তাই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দল শুদ্ধ করুন। জনগণকে স্বৈরশাসনের ভারী পাথর থেকে দয়া করে পরিত্রান দিন।
সাবেক ইসি সচিবকে মিডনাইট ভোটের পুরষ্কার দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, মিডনাইটে ভোট ডাকাতির অন্যতম কারিগর নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদকে রোববার পুরস্কৃত করেছে মিডনাইট সরকার। তাকে পদায়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের সচিব করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর হোসেনকে। যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত ও বিশ্বস্ত হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি অর্জন করেছেন। ’আওয়ামী দলদাস’ সরকারী কর্মকর্তা ও ভোটারশুণ্য একতরফা নির্বাচনী সংস্কৃতির হোতা নির্বাচন সচিবকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বদলী করার ফলে দেশের স্থানীয় সরকারগুলোতে আওয়ামীকরণের ষোলকলা পূর্ণ হবে। এখন স্থানীয় সরকারগুলোতে নির্বাচনের বদলে সিলেকশনের পথ আরও সহজ হবে। ভোটাররা নয়, মধ্যরাতে পুলিশই ব্যালট বাক্স ভরে দিবে। আবার নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে এই অবৈধ সরকার কর্তৃক আওয়ামী চেতনাপুষ্ট একনিষ্ঠ ও পরীক্ষিত ক্যাডারদের বাছাই করে নিয়োগ দেয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসমস্ত পদক্ষেপ ধ্বংসপ্রাপ্ত গণতন্ত্র ও লুপ্তপ্রায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা-যা এক ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত। বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে মোঃ আলমগীর হোসেনের মতো আওয়ামী লীগ কর্মীর পরিবর্তে একজন দক্ষ-দল নিরপেক্ষ সরকারী কর্মকর্তাকে ইসি সচিব পদে নিয়োগের আহবান জানান।
সারাদেশে দরিদ্র মানুষের করুণ দশা উল্লেখ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকারের লোকজন একদিকে লুটপাট করে অর্থনীতি ফোকলা করে দিচ্ছে অন্যদিকে অভাবের তাড়নায় হতদরিদ্র মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আর সরকার বলছে দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অভাবের তাড়নায় যশোরের শার্শা উপজেলার চালিতাবাড়িয়া দীঘা গ্রামে রোববার (২৬ মে) রাতে দুই শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর এক মা আত্মহত্যা করেছেন। তিন দিন আগে শনিবার অভাবের কাছে হার মেনে নরসিংদীতে দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন এক বাবা। অভাবে জর্জরিত হয়ে এক সপ্তাহে ৯ জনের আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে সরকারী দলের নেতা-কর্মীসহ অন্তত: ৬ লাখ লোক বিদেশে যাচ্ছে ঈদ করতে। যেখানে আগে ঈদ করতে মানুষ যেতো গ্রামের বাড়ীতে।
তিনি বলেন, দেশে সম্পদ বন্টনের এই অসাম্য এবং দুর্নীতি করার অবারিত ব্যবস্থার জন্য দেশে এক লুটেরা গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। আর অন্যদিকে মানুষ অভাবের কারণে করছে আত্মহত্যা, ধানের দাম না পেয়ে কৃষকরা ক্ষেতে আগুণ দিচ্ছে বা মহাসড়কে ধান ঢেলে দিচ্ছে ! গণবিরোধী সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় এক ভয়াবহ অবস্থা চলছে দেশে। বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় দেবখন্ড গ্রামে অল্প জমির মালিক মরিয়ম বেগম তার ক্ষেতের ধান হাটে বিক্রি করে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজের টেলিভিশন বিক্রি করে মুজুরি পরিশোধ করে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ধান পুড়িয়ে দেয়ার একই রকম দৃশ্য সারাদেশেই সংঘটিত হচ্ছে। চারদিকে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য, অস্বস্তি, ক্ষুধা ও হাহাকার। ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে সরকার উদাসীন, এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই, বরং তা বৃত্তপথে ঘোরপাক খাচ্ছে। প্রতিদিনই কৃষকের মনে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে।
কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারী নীতির কারণে ক্ষুধা, হাহাকার, অনাহার ও অর্ধাহারে মানুষের জীবন বিপন্ন ও কৃষককে ধ্বংস করতে কৃষিক্ষেত্রে এই অরাজকতার জন্য দায়ী কৃষি মন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীর এই মূহুর্তে পদত্যাগ দাবি করছি। কোন সভ্য সরকার হলে ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রী পদত্যাগ করতেন। সরকারকে বলবো, জোর জবরদস্তি করে আর ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের প্রতি জুলুম করবেন না। অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। জনগণকে বাঁচতে দিন।



 

Show all comments
  • monir ২৮ মে, ২০১৯, ৫:৩১ পিএম says : 0
    পদত্যাগ শব্দটি বাংলা অভিধানে নেই। কিভাবে পদত্যাগ করবে। মানুষ ভুলে গেছে যে এই জীবন শেষ নয়, আরেকটি জীবন অপেক্ষা করছে তার জন্য। বিবেকহীন প্রাণী বলতে পৃথিবীতে এখন মানুষকেই বুঝায়। কারণ আমি দেখিনা কোনো পশুপাখি তাদের নীতির বাইরে কোনো কাজ করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ