পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধান আছে দাম নেই, ঈদ বাজারের পসরা আছে ক্রেতা নেই। অর্থের এই হাহাকার অবস্থা কৃষক থেকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে নিষ্পেষিত হচ্ছে। অথচ আর মাত্র দশ দিন পর পবিত্র ঈদুল উল ফিতর। এবার ঈদের আনন্দ ভরপুর হয়ে উঠার কথা ছিল কৃষকের মনে। কারণ বাম্পার ফলনের ধান ঘরে উঠছে। কিন্তু আনন্দ নয় বিষাদ দানা বেঁধেছে কৃষকের ঘরে। কৃষক তার ধানের নায্য দাম না পেয়ে দিশেহারা। এই ঈদ তাদের বিষন্ন মন নিয়ে কাটাতে হবে। জেলা পর্যায়ের বিপনী বিতান গুলোতে সাধারণত মধ্যবিত্ত, চাকুরিজীবী আর আসে ধান-চাল বিক্রি করা কৃষিজীবী মানুষ। কিন্তু এবার যে হারে ধানের বাজারে দরপতন হয়েছে তাতে কৃষিজীবী মানুষের মেরুদন্ডই ভেঙে গেছে। সারাদেশেই এ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন কাজ আর কথা শোনা গেলেও তাতে কৃষকের অবস্থা বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন কৃষকদের দুর্দশার কথা :
রাজশাহী ব্যুরো জানায় : বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো ধান কাটাই মাড়াই প্রায় শেষ। চারিদিকে ধানের সোঁদা গন্ধ। এত ধান তবু মন ভাল নেই কৃষকের। মণ প্রতি এক হাজার চল্লিশ টাকা হলেও কৃষকের ভাগ্যে জুটছে না সরকারী দাম। পাঁচ সাড়ে পাঁচশো টাকা দরে মিলার আর ফড়িয়াদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে কষ্টের ফসল। মণ প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে দেড় হতে দুশো টাকা।
ধানের দাম নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সংবাদ প্রচারের পর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় এমপিরা নড়ে চড়ে ওঠেন। সরকারী দাম যাতে প্রান্তিক চাষীরা পান সে জন্য ঘটা করে কৃষকের বাড়িতে গিয়ে ধান কেনার মহড়াও চলে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। সরকারী খাদ্য গুদামের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারছে না কৃষক।
ধানের আদ্রতা, মান আর ওজন নিয়ে অভিযোগ তুলে হয়রানী করে বহুদিন আগেই কৃষককে সরকারী খাদ্য গুদাম বিমুখ করা হয়েছে। ভুয়া কৃষক, ক্ষমতার আর্শীবাদপুষ্ট প্রভাবশালী, মিলারচক্র, খাদ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এদের বাইরে কারো ক্ষমতা নেই সরকারী খাদ্য গুদামে ধান চাল দেয়। চলে চাল নিয়ে চালবাজি। আমদানী করা নিম্নমানের চালও সহজে ঠাই পায় সরকারী খাদ্য গুদামে।
সম্প্রতি এমনি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামে। নতুন চালের সাথে নিম্নমানের পুরাতন চাল সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারী নির্দেশনায় দেয়া চালের মান অমান্য করে নিম্নমানের চাল সরবরাহ হয়েছে। নিয়ম অমান্য করে স্টেনসিল (সীল) ছাড়াই ৪৪৯ টন চাল গুদামজাত করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে খাদ্য বিভাগ নিজেরাই তদন্ত করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, নিম্নমানের চাল সরবরাহ ও বস্তায় মিলের লেভেল না থাকা। গুদামে প্রবেশের সময় প্রয়োজনীয় স্টেনসীল না দেয়ার অভিযোগ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোপনে তদন্ত চালান। তদন্তে দেখা যায় চার নম্বর গোডাউনে সরবরাহ করা চার হাজার বস্তার মধ্যে চার শতাংশ বস্তায় সরকারী নির্দেশনার বাইরে নিম্নমানের চাল পাওয়া গেছে। এছাড়া গুদামে প্রবেশের পূর্বেই প্রতিটি বস্তায় চাল মিল ও গুদাম কর্তৃপক্ষের পৃথক স্টেনসিল করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও গুদামে থাকা কোন বস্তায় তা পাওয়া যায়নি। তবে সন্দেহে থাকা ৪ হাজার বস্তার সবগুলো পরীক্ষা না করে মাত্র ৫৩২টি বস্তা নামে মাত্র পরীক্ষা করে এর ওপর গড় করে ফলাফলে পৌছান এই তদন্ত কর্মকর্তা। কারণ হিসেবে তিনি জানান, পর্যাপ্ত জনবল ও সময়ের অভাবে গুদামে থাকা প্রতিটি বস্তা ও এর চাল পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গুদামটির ওসি এলসডি মাজেদুল ইসলামকে শোকজ করা হয়েছে। একই সাথে চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সদর গুদামের ওসি এলসডি মাজেদুল ইসলাম জানান, গুদামে চাল সরবরাহে কোন অনিয়ম নেই। কিছু বস্তায় স্টেনসিল করতে মিস করেছিলো শ্রমিকরা। ওগুলোতে স্টেনসিল করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাংবাদিকদের জানান, বিয়টি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাল সরবরাহের শুরুতেই এমন অনিয়ম বলে দিচ্ছে সামনের দিনগুলো কি হবে।
এদিকে ধান নিয়ে যখন এমন তেলেসমাতি কারবার শুরু হয়েছে। তখন কৃষক তার ধানের নায্য দাম না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আর কটাদিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফেতর। এই ঈদেও তাদের বিষন্ন মন নিয়ে কাটাতে হবে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ধানের দর পতনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের দুরবস্থার সাথে কৃষি অর্থনীতির ভীতও ক্রমশ নাজুক হয়ে পড়ছে। এখনো এ অঞ্চলে প্রতিমন বোরো ধান বিক্রী হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ টাকার নিচে। তবে সে তুলনায় চালের দাম কম নয়। প্রতি মণ চাল (মোটা) বিক্রী হচ্ছে ১ হাজার ৪শ’ টাকারও বেশী। মোটা চালের কেজি এখনো ৩০ টাকার ওপরে।
সদ্য সমপ্ত রবি মৌসুমে সারা দেশে ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদকৃত বোরো ধানের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় আবাদের পরিমাণ ছিল প্রায় সোয়া ৪ লাখ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষ্য ছিল প্রায় ১৪ লাখ টন। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ৭০%-এরও বেশী জমির বোরো ধান কাটা শেষ হলেও দক্ষিনাঞ্চলে সে হার ৯০%-এর বেশী। অন্যান্য এলাকার চেয়ে এবার দক্ষিনাঞ্চলে বোরো ধান কাটা অন্তত ২০% এগিয়ে মূলত ঘূর্ণিঝড় ফনির বৃষ্টিপাতের কারনেই। যা কৃষকদের জন্য নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
সরকারী ধান-চাল ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে যথেষ্ঠ বিলম্বে। গত মার্চের শেষভাগ থেকে দেশের অনেক এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হলেও সরকারী ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। ততদিনে সারা দেশে অর্ধেকেরও বেশী জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ফলে সরকারী ক্রয় শুরু না হবার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিল মালিক ও তাদের ফড়িয়রা নিজেদের মত দর ঠিক করেই মাঠ থকে ধান কিনে নিয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ১৬ হাজার ৩০ টন চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত থাকলেও রবিবার পর্যন্ত মাত্র আড়াই হাজার টনের মত সংগ্রহ হয়েছে। অপরদিকে ৫ হাজার ১৯টন ধান সংগ্রহ লক্ষমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহের পরিমাণ দেড়শ টনেরও কম। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল সংগ্রহ না করলে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক ও কৃষি অর্থনীতির দুরবস্থা লাঘবের বিকল্প পথ থাকবে না।
মহসিন রাজু ,বগুড়া থেকে জানায়: বগুড়ার নিউমার্কেটসহ বিপনী নামী দামি শপিংমল গুলোতে খোজ নিয়ে জানা গেছে ঈদ বাজারের এই চিত্র ।সেলসম্যানরা বলেছেন, এ সময়টায় নিউমার্কেটে উপচে পড়া ভীড় থাকার কথা। কিন্তু কেনাকাটাতো পরের কথা লোকজনই আসছে না মাকের্টে। জানতে চাইলে বগুড়া নিউমার্কেটের প্রবীন ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বাবুল জানালেন, জেলা পর্যায়ের মার্কেট গুলোতে সাধারণত মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরাই আসে। আর আসে ধানচাল বেচা কৃষিজীবী মানুষ। কিন্তু এবার যেহারে ধানের বাজারে দরপতন হয়েছে তাতে কৃষিজীবী মানুষের মেরুদন্ডই ভেঙে গেছে ।
বগুড়া শহরের জামিল শপিং সেন্টার ও জলেশ্বরীতলা এলাকার অভিজাত বিপনী বিতান গুলোতে ও কেনাকাটা এখনো জমেনি। সবারই ধারণা কৃষিজীবী মানুষের হাতে টাকা পয়সা না থাকাটাই এর মুল কারণ ।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার: ধান আছে দাম নেই, ঈদ বাজারের পসরা আছে ক্রেতা নাই, রিক্সা থেকে ইজি বাইক আছে যাত্রী নাই। সব কিছুতেই সব জায়গাতেই শুধু শুধু নাই আর নাই। অর্থের এই হাহাকার অবস্থায় কৃষক থেকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে। অথচ আর মাত্র দশ দিন পর পবিত্র ঈদুল উল ফিতর। এবার ঈদের আনন্দ ভর-পুর হয়ে উঠার কথা দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষের কাছে। কারণ বাম্পার ফলনের ধান ঘরে উঠছে। সব ঠিক আছে-কিন্তু আনন্দ নয় বিষাদ দানা বেঁধেছে দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা দিনাজপুর অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি। শিশু’র দুধ থেকে মৃত্যুর পর কাফন-দাফন সবকিছুই সম্পূর্ণ হয়ে থাকে কৃষির উপর অর্জিত আয় থেকে। হালে এই অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা পড়া-লেখার পর চাকুরীর দিকে ঝুকেছে। কিন্তু এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের এখনও অর্থনৈতিক মূল অবলম্বন কৃষি। বছরে তিনটি ফসলকে ঘিরেই বাৎসরিক খতিয়ান তৈরী করেন। সেই খতিয়ানে এবারের ঈদকে রাখা হয়েছিল পরিপূর্ণ আনন্দে। কিন্তু যে ধানের বস্তা সুখের সন্ধান দিবে সেই ধানের বস্তা দুঃখ ও কষ্ট বয়ে আনে কৃষকের মধ্যে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ধানের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য ধান থেকে উৎপাদিত চালের দাম কিন্তু কমেনি। যাহোক ধানের দাম না থাকায় দিনাজপুর অঞ্চলে মাঠে-প্রান্তরে হাহাকার অবস্থার সৃষ্টি হয়। রমজানের পবিত্রতায় কুঠারাঘাত করতে থাকে অর্থ কষ্ট। দেখতে দেখতে চলে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাজার। এখানেও হাহাকার অবস্থা।
দিনাজপুর শহরের ষ্টেশন রোড হয়ে গণেশতলা পর্যন্ত মাত্র ১৫ দিনের পসরা সাজিয়ে বসা শত শত মানুষ ও পরিবারের আয়ের উৎস। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নাই ঈদের দশ দিন আগে এই সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে পায়ে হাটা ব্যবস্থা চালু করা জরুরী হয়ে পড়তো। সেই সড়কের ঈদ বাজারের সড়কে ক্রিকেট খেলতে পারছে ছোট ছোট ছেলেরা। শহরের মালদহপট্টিসহ বড় বড় বিপনী বিতানগুলিতে ভিড় দেখা যাচ্ছে। ভাল ভাবে খোজ নিয়ে দেখা গেল এসব বাজার ও বিপনি বিতানে কোন কৃষক বা কৃষকের পরিবার সওদা করতে আসছে না। যারা আসছে তাদের অধিকাংশই সরকারী চাকুরীজীবি।
আলাপ হলো জুতা বিক্রেতা সু-ষ্টোরের মালিকের সাথে তার মতে ২০ রমজানের মধ্যে তারা অন্তত তিন বার মাল আনতো কিন্তু এবার একবার অর্থাৎ প্রথম বারের আনা মওজুদ এখনও শেষ হয়নি। লুৎফুন্নেচ্ছা টাওয়ারের গার্মেন্ট দোকানের মালিক আবদুর রাজ্জাক জানালেন তাদের বিক্রি আছে তার কারনও তিনি বললেন তাদের দোকানের ক্রেতারা সমাজের ভিআইপি সরকারী চাকুরীজিবি ও রাজনীতিবিদ। সে নিজেও কৃষকের ঘরের সন্তান। তার মতে গ্রামের মানুষের কোন আনন্দ নেই। তাদের কাছে এবার ঈদও নেই বলেই মনে হচেছ। সব কিছু মিলিয়ে কেবল হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
নোয়াখালী ব্যুরো : নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি কানি জমি (১৬০শতাংশ) চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৫/১৬ হাজার টাকা। কানি জমিতে ধান উৎপন্ন হয়েছে ৩৫/৩৬ মন। বাজারে আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্তমান বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করলে কৃষকরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হবে। এমনকি আগামী বছর কয়েকজন কৃষক চাষাবাদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নোয়াখালী সদর, সূবর্ণচর, হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হাটবাজারে একই চিত্র ফুটে উঠেছে। ধানের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত হাতিয়া উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপন্ন হলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। উৎপাদন খরচ ও ফসলের মূল্যে তারতম্য থাকায় কৃষকরা দিশেহারা। হাতিয়ার বিভিন্ন হাটবাজারে আমন প্রতিমন ৪৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচশত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারী উদ্যোগে ঢিমেতালে ধানক্রয় শুরু হলেও সাধারন কৃষকরা সুবিধা পাচ্ছেনা।
কৃষ্ িনির্ভর নোয়াখালী জেলায় কৃষকরা কাঙ্খিত ধানের মূল্য না পেয়ে চরমভাবে হতাশ। ব্যাংক ঋণ, ধারকর্জ কিংবা স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে কৃষকরা হাজার হাজার টাকা চাষাবাদে বিনিয়োগ করেও কাঙ্খিত সূফল পাচ্ছেনা। ফলে আসন্ন ঈদে কৃষকদের মুখে হাসি নেই। ঈদের কেনাকাটা দূরের কথা, ধারকর্জ করে চাষাবাদ করে এখন তারা বিপাকে পড়েছে। ফলে আগামী মৌমুমে এসব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক চাসাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
যশোর ব্যুরো : ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি পুরণে মানববন্ধন অবস্থান করেও কোন লাভ হয়নি। ‘এক মণ ধানের দামে এককেজি গরুর গোশত’ এটা কী ধরণের কৃষিবান্ধব নীতি এ প্রশ্ন তুলে যশোরে মানববন্ধন হয়েছে। কৃষক ক্ষেতমজুর সমিতি সোমবার যশোরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়। বিক্ষোভকারীরা জানায়, কৃষকরা ধানের মূল্য না পাওয়ায় ঈদ আনান্দ ম্লান হচ্ছে গোটা অঞ্চলে।
হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : বাজারে ধানের মুল্য না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। বাম্পার ফলন হলেও বাজারে মুল্য না থাকায় উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে এনজিও’র ঋণসহ ধার দেনা করে ধান চাষ করে এখন তা শোধ করাই দূরূহ হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ঈদে পরিবার নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো।
বাম্পার ফলন এবং সব এলাকায় একই সময়ে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। যার কারণে শ্রমিক সঙ্কট পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিগুণ মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিতে হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে ধানের মুল্য কম থাকায় বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদরে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তররে বিভিন্ন হাট-বাজারে চিকন ধান মণ প্রতি ৫’শ ৫০ টাকা ও মোটা ধান ৩শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের বর্তমান বাজার দর ও কাটা-মাড়াইয়ে অন্য বছররে তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ খরচ বেশি হওয়ায় বোরো চাষীদরে বিঘা প্রতি সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। যাদের ফলন কম হয়েছে তাদের লোকসানের পরিমাণ আরো বেশি বলে জানয়িছেনে কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। কিন্তু ধানের বাজার মুল্য এ অঞলের কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম হওয়ায় বাজারে ধান বিক্রি করতে গেিয় হতাশ হয়ে পড়ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। মণপ্রতি যে দাম পাওয়ার যাচ্ছে তা দিয়ে লাভতো দুরের কথা বিঘা প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় আসন্ন ঈদ নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো। সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ প্রতি ধানের দাম ঘোষণা করলেও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ৪শ’ থেকে ৪শ’ ৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করছে ফড়িয়াদের কাছে।
বিভিন্ন হাট-বাজারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা ধান প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে গড়ে মাত্র ৫শ’ টাকা। অথচ এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের ন্যুনতম খরচ হয় ৮শ’টাকা। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬শ’টাকা থেকে ৭শ’টাকা। সাধারণ কৃষকরা ধান নিয়ে রীতিমতো বিপাকে আছেন। মূল্য না পাওয়ায় তারা বিক্রি করতে না পারায় ঈদের কেনাকাটা করতে পারছেন না। দারুণ মনাকষ্টে আছেন কৃষকরা।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা: গত সপ্তাহে নাটোরের জেলা-উপজেলা প্রশাসন সরকারিভাবে বোরো ধান ক্রয় শুরু করলেও হাটে বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। বরং শনিবার নলডাঙ্গা হাট ও রবিবার সদরের তেবাড়িয়া হাটে প্রতিমণ ধানে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমে গেছে।
মাধনগরের কৃষক আজিজার রহমান ৪ মণ জিরাশাইল ধান শনিবার হাটে প্রতিমণ ধান ৭১০ টাকা দরে বিক্রি করে গেছেন। অবশ্য এর আগে সেই একই ধান নলডাঙ্গা হাটে প্রতিমণ ৭৬০ -৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। তিনি সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বিষয় শুনেছেন কিন্তু কিভাবে ক্রয় করা হবে সেটা জানেন না। এছাড়াও স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে।
পাবনা থেকে মুরশাদ সুবহানী : কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ভঙ্গ , মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। বোর ধানের বাজার দর কম হওয়ায় কৃষকরা সোনালী সপ্নের বদলে দু:স্বপ্ন দেখেছেন । কোনো কোনো প্রান্তিক কৃষক এনজিও ,দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে কর্জ নিয়ে বোর আবাদ করে ছিলেন। ধানের মূল্য না পাওয়ায় এই ঋণ পরিশোধ দু;:সাধ্য হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতির বড় চালিকা শক্তি কৃষি। ধান এর মধ্যে অন্যতম।
সেই ধানের দরপতন হলে অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে আসে আর কৃষক ধানের মূল্য না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।পাবনাসহ উত্তরের শুধু নয় বলতে গেলে সারা দেশেই হঠাৎ করে ধানের দরপতন ঘটেছে।
প্রতি ধান মওসুমে এক শ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ধানের বাজার মূল্য কমিয়ে দেন। টেকনোলজির যুগে কৃষক কোন হাট-বাজারে বেশী মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন না। ফরিয়া মধ্যসত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামে ধান ক্রয় করে । তবে,
কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মিল মালিকরা কম মূল্যে চাউল বিক্রি করেন না। চাউল কিনতে ক্রেতা সাধারণ বিশেষ করে মধ্যম আয়ের মানুষজনের উপর চাপ পড়ে। কৃষক লোকসান গোনেন আর মুনাফালোভীরা অধিক মুনাফা লুটে নেন। পাবনায় ধান কর্তন ও মাড়াই শেষ পর্যায়ে। মাঠে এখনও পাকা সোনালী শিষের ধান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই ধান কর্তন শেষ হবে।
সরকারিভাবে পাবনায় ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলার নুরপুর খাদ্য গুদামে অভ্যন্তরীণ ধান সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করেন, পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স । এ সময় পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোশাররফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণক কর্মকর্তা আলাউল কবির, নুরপুর এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এক সপ্তাহে ৫২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। এই সংগ্রহ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জানান, উপজেলা পর্যায় এবং জেলা কৃষি দপ্তর থেকে প্রকৃত কৃষকের তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি। প্রকৃত কার্ডধারী কৃষকের ধান পাওয়া গেলে তা অবশ্যই সংগ্রহ করা হবে । পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর’র উপ-পরিচালক আজহার আলী জানান, পাবনায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোর ধান আবাদ ও বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে ১৯ শত ২৬ হাজার মেট্রিক টন, চাউল সংগ্রহ করা হবে মিলারদের কাছ থেকে ৩০ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন আর আপদকালীন চাউল সংগ্রহ করা হবে ৬৮৬ মেট্রিক টন। ধানের মূল্য প্রতি কেজি ২৬ টাকা আর চাউল প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তিনি আরও জানান , এ পর্যন্ত ২০ হাজার কৃষকের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। আরও ২০ হাজার কৃষকের তালিকা প্রদান করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।