পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সরকার নতুন অর্থবছরে ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে। সরকারের খসড়া বাজেটের চেয়ে অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটের আকার দ্বিগুণেরও বেশি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০’ তুলে ধরা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে এ ধরনের বিকল্প বাজেটের প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে অর্থনীতিবিদদের পেশাদার এই সংগঠন। অনুষ্ঠানে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদসহ সমিতির সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সমিতির প্রস্তাবিত মোট বাজেট ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকা, যা সরকারের সম্ভাব্য ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার দ্বিগুণেরও বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) ও ৩১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর (ভ্যাট), অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের যোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়। বাজেটটি সম্পূর্ণ বৈদেশিক ঋণমুক্ত।
ড. বারকাত বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে ২০টি নতুন উৎস চিহ্নিত করেছি যা আগে ছিল না। এর মধ্যে অর্থপাচার রোধ, কালো টাকা উদ্ধার ও সম্পদ কর এই তিনটি উৎস থেকেই সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারেন। আর এ টাকা দিয়ে প্রতিবছর তিনটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব।
ড. আবুল বারকাত বলেন, সমিতির প্রস্তাবিত বাজেট অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না, প্রস্তাব অনুযায়ী বাজেটের আয় কাঠামোতে মৌলিক গুণগত রূপান্তর ঘটবে। আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, কেউ হয়তো বলবেন অনেক বড় ঘাটতি। এক্ষেত্রে বলতে চাই জাপানে বাজেট ঘাটতি ২৫৬ শতাংশ। ঘাটতি বাজেটে অসুবিধা হলে এক পয়সাও ঘাটতি না রেখে আমাদের প্রস্তাবিত রাজস্ব আয় দিয়েও মোট বাজেট প্রস্তুত করতে পারেন। আজকের উন্নত দেশের প্রায় সবাই যখন উন্নতি করছিল ১৯৩০-১৯৭০ দশক পর্যন্ত সময়ে তখন তাদের সবারই সরকারি ব্যয় বরাদ্দ ছিল বেশ বেশি, প্রবৃদ্ধির হারও ছিল বেশি।
অর্থনীতি সমিতির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে, মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তারপর আছে জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত। চলতি বছরের সরকারি বরাদ্দের চেয়ে বেশি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ। অন্যান্য খাতগুলো হলো- কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, জনশৃঙ্খলা-নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা।
কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার বিষয়ে আবুল বারকাত বলেন, আমরা মনে করি যে প্রস্তাবিত বাজেট বছরেই কৃষি ও কৃষক ভাবনার যথার্থতা বিচারে ১ লাখ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ বিঘা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া সম্ভব, আর পাশাপাশি ২০ হাজার জলাহীন প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার বিঘা খাস জলাশয় বন্দোবস্ত দেয়া সম্ভব। বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে এ লক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দসহ বাস্তবায়ন কৌশল সংশ্লিষ্ট পথনির্দেশনা দেয়া জরুরি।
কৃষি ফসলের উৎপাদন অঞ্চল গঠন ও কৃষককে কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য দেয়ার প্রস্তাব করে বারকাত বলেন, এ বছর বোরো ধানে কৃষকের প্রকৃত লোকসান হবে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। এ নিয়ে সরকারের চিন্তিত হবার যথেষ্ট কারণ আছে। আমরা মনে করি কৃষককে তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জরুরিভাবে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারিভাবে সংগ্রহের ক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের তুলনায় কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়াতে হবে, সেক্ষেত্রে এ বছরের বোরো ধানের মণ প্রতি বিক্রয়মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১২শ’ টাকা।
শিক্ষার সব স্তরে বাংলা ভাষাকে জ্ঞানচর্চার মূল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, সমগ্র শিক্ষা কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে আমরা অন্য কোনো ভাষা শিখব না। অবশ্যই শিখব। উচ্চশিক্ষা স্তরে সব শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে দুটি বিদেশি ভাষা শিক্ষারব্যবস্থা রাখতে হবে।
নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তার অন্যতম প্রস্তাবগুলো হলো- দরিদ্র নারীদের সরকারিভাবে ক্ষুদ্র-অনুদান, প্রশিক্ষণ, গার্মেন্টসসহ কর্মজীবী নারীদের আবাসন ও ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, একশভাগ নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, ক্রীড়া খাতে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় বরাদ্দ ৩ গুণ বাড়ানো এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধসংশ্লিষ্ট বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে ৩০ গুণ বাড়ানো।
খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে আবুল বারকাত প্রস্তাব করেন, অভ্যাসগত ঋণখেলাপীদের মোকাবেলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে, তাদের উদ্যমে চালু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল তবে সমাধান সম্ভব বলে মনে করি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বারকাত জানান, অর্থমন্ত্রী হলেও তিনি একই বাজেট দিতেন। অর্থনীতি সমিতির কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রী কতটুকু সন্তুষ্ট এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ড. বারকাত বলেন, কিছু কর্মকান্ড অপ্রিয় হলেও তিনি বাধা দেন না। অনেক কিছুই তিনি গ্রহণ করেন। ভাবনার জিনিষগুলো নেন। এগুলো তিনি ভাবেন। তবে, সব সময় তা গ্রহণ করতে পারেন না। অনেকেই আমাদের সব প্রস্তাব গ্রহণ করতে দেয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।