Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেনাপোল স্থলবন্দর

রাজস্ব আদায়ে ধস ১১ মাসে ঘাটতি ১৩৪৬ কোটি টাকা

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি ও নিত্যনতুন নিয়ম চালু করায় হিতে বিপরীত হয়েছে বেনাপোলে। চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে। আমদানি বাণিজ্য কমে গিয়ে প্রথম এগারো মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, ও অব্যবস্থাপনা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে অনিহা প্রকাশ করায় সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবার বাণিজ্যে গতি ফিরবে বন্দরে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ১৯৭২ সাল থেকে এ পথে ভারতের সাথে আমদানি বাণিজ্যিক যাত্রা। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়।
বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার মেট্রিক টন কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে বন্দরে ৪২টি পণ্যাগার, ৪টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
বিগত অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ২১ মে পর্যন্ত ১১ মাসে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
আমদানিকারক ইদ্রিস আলী বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বর্তমানে অতীতের তুলানায় এতো বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে যে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এছাড়া বৈধ আমদানি চালান কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে। সেখানে ২-৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। সেই সাথে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভারতের সাথে অল্প সময়ে দ্রæত এ বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি করা যায় বিধায় সবাই ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছে না। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।
আমদানি রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সমস্যা আর অনিয়মে বার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এখনও সাধারণ পণ্যাগারে কেমিক্যাল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে বন্দরে। কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, পণ্য চালান খালাসে পূর্বের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে কাস্টমসে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা পূরণের। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তারা আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বন্দর পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বন্দরে সব ধরনের অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করা হচ্ছে। জায়গা সঙ্কটে বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তারা নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজ শুরু করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ